E-Paper

ভোট আসে, ‘স্মৃতি’কে নিয়ে একলা শ্রাবণী

ছবির ঝকঝকে চোখের লোকটার জন্যেই ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়ার নাম ঘুরপাক খায় কান্দির অদূরে অখ্যাত পোলিশা গাঁয়ে। সেই লোকটার জন্যই গত ৯ এপ্রিল সিআরপিএফ-এর কম্যান্ড্যান্ট এ গ্রামে এসেছিলেন।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৪ ০৮:৪৬
কোবরা জওয়ান চন্দ্রকান্ত ঘোষের মৃত্যুূ দিনে সিআরপিএফ-এর অনুষ্ঠানে তাঁ স্ত্রী, মেয়ে, মা, বাবা। কান্দির কাছে পোলিশা গ্রামে।

কোবরা জওয়ান চন্দ্রকান্ত ঘোষের মৃত্যুূ দিনে সিআরপিএফ-এর অনুষ্ঠানে তাঁ স্ত্রী, মেয়ে, মা, বাবা। কান্দির কাছে পোলিশা গ্রামে। — নিজস্ব চিত্র।

দশ বছর আগের মাটির ঘরের চিহ্ন উধাও। তখন সবে মাথা তোলা ইটের গাঁথনিটুকু এখন দোতলা পাকা বাড়ি। দশ বছর আগে মায়ের শরীরে মিশে থাকা অনাগত প্রাণ এখন ছটফটে কন্যে। কান্দির সিবিএসই স্কুলে ভোট পড়েছে বলে অনলাইন ক্লাসে মশগুল দস্যি ক্লাস ফোর। মাঝেমধ্যে দেওয়ালে ফটোর ফ্রেমের দিকে তাকাচ্ছে সে।

ছবির ঝকঝকে চোখের লোকটার জন্যেই ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়ার নাম ঘুরপাক খায় কান্দির অদূরে অখ্যাত পোলিশা গাঁয়ে। সেই লোকটার জন্যই গত ৯ এপ্রিল সিআরপিএফ-এর কম্যান্ড্যান্ট এ গ্রামে এসেছিলেন। ওঁরা বলছিলেন, এমন বীরের কমই দেখা মেলে। যত ক্ষণ গুলি ছিল, লোকটা লড়েছিল। ১০-১২ জনকে শেষ করে মৃত্যুবরণ করে। দশ বছর আগে দান্তেওয়াড়ায় ডিউটি পড়েছিল ছেলেটার। সুকনার চিন্তাগুফায় ভোটকর্মীদের বুথে পৌঁছে ফেরার পথেই মাওবাদীদের অতর্কিত হামলার মুখে পড়েন কোবরা জওয়ান চন্দ্রকান্ত ঘোষ। গণতন্ত্র রক্ষার সৈনিকের ছবি দিয়ে দশ বছর বাদে এক্স হ্যান্ডলে ‘ভারত কে বীর’ হ্যাশট্যাগ দেয় সিআরপিএফ।

বহরমপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত তল্লাটে ছবি হয়ে যাওয়া লোকটার ছায়া এখন গাঢ় হচ্ছে। চন্দ্রকান্তের স্ত্রী শ্রাবণী বলছিলেন, “কাঁদতে কাঁদতে ভোট দিয়ে আসি। ও চলে যাওয়ার পর কত ভোট এল, গেল। সেন্ট্রাল ফোর্সের উর্দি পরা চেহারাটা দেখলেই মনে পড়ে আমার স্বামীও এ ভাবেই ভোট করাতে গেছিলেন।”

গণতন্ত্র ব্যাপারটা যে কিসে এত অমূল্য, কেন তার জন্য বেঘোরে প্রাণ দিতে হয় তার সবটা বোঝেন না শ্রাবণী। তবে ভোটের আগে পুলওয়ামার ঘটনার কথা মনে করালে অস্ফুটে বলেন, “সিআরপিএফ তো শুধু মরার জন্যই আছে।” তবে তাঁর স্বামী চলে গিয়েও পরিবারটিকে যা হোক দাঁড় করিয়ে গিয়েছেন, এটাই বিশ্বাস করেন শ্রাবণী। পেনশনের টাকা ছাড়াও ক্ষতিপূরণের ৩০-৪০ লাখে মেজো দেওরের বেকারি কারখানা বা ছোট দেওরের বেঙ্গালুরুতে অ্যানিমেশন শিক্ষার রেস্ত জুটেছে। বেঙ্গালুরুতে কর্মরত ছোট দেওর ভোট দিতে ফিরেছেন। তবে দুর্গাপুর, ভোপালে পরীক্ষা দিয়ে সিআরপিএফ-এর চাকরির যোগ্যতা অর্জন করেও কাজটা পাননি শ্রাবণী। কারণ, মেয়েকে নিয়ে ওখানে থাকা যেত না।

বিয়ের ২০ দিন পরেই ডিউটিতে চলে যাওয়া নতুন বর শুধু সন্তান আসছে, খবরটা ফোনে শুনেছিলেন। শ্রাবণী বলেন, “কী আশ্চর্য দেখুন, বাবাকে কোনও দিন না দেখা মেয়েও খেলনা বন্দুকের জন্য পাগল। ওর বাবার সম্মানে অনুষ্ঠানের দিন মেয়েটা খুব কেঁদেছে।” সিআরপিএফ-এর আশ্বাস, ১৮ হলে এ মেয়ে বাবার জায়গায় চাকরি পাবে! সবে মাত্র ৩১ বছরের শ্রাবণী সেই মেয়ে বড় হওয়ার অপেক্ষায়।

নতুন করে নিজের জীবন শুরু করতে ইচ্ছে হয় না? পেয়েও না-পাওয়া সুখের ঘরের কথা ভেবে একলা মা শ্রাবণী স্মিত হাসেন, “যা পেয়েছি যথেষ্ট! বাকি জীবনটা স্মৃতি নিয়েই কেটে যাবে!” চন্দ্রকান্ত-শ্রাবণীর স্বপ্ন ভাঙা দাম্পত্যের চিহ্ন, পুঁচকে মেয়ের নামও 'স্মৃতি'ই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Army Kandi Chattisgarh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy