Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment Interview

‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’

সাজানো ড্রয়িংরুমে শীত সকাল। ঘর জোড়া নানান ফটোফ্রেমে তিনি। এমনকী দেওয়াল ঘড়িতেও রয়েছে বাড়ির মালিক অর্থাত্ চিরঞ্জিতের ছবি। অথচ ইন্টারভিউ দিতে বসলেন দীপক। আবার কথা বলতে শুরু করার পর তিনি কখনও বারাসতের বিধায়ক। চেনা মেজাজে স্ট্রেট ব্যাটে ছক্কা হাঁকালেন প্রায় সব বলেই। মুখোমুখি স্বরলিপি ভট্টাচার্য। সাজানো ড্রয়িংরুমে শীত সকাল। ঘর জোড়া নানান ফটোফ্রেমে তিনি। এমনকী দেওয়াল ঘড়িতেও রয়েছে বাড়ির মালিক অর্থাত্ চিরঞ্জিতের ছবি। অথচ ইন্টারভিউ দিতে বসলেন দীপক। আবার কথা বলতে শুরু করার পর তিনি কখনও বারাসতের বিধায়ক। চেনা মেজাজে স্ট্রেট ব্যাটে ছক্কা হাঁকালেন প্রায় সব বলেই। মুখোমুখি স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ১২:৫৩
Share: Save:

বেদের মেয়ে জ্যোত্স্না, নাকি কিরীটী— কোন ইনিংসটা বেশি পছন্দের?
সেকেন্ডটা।

কেন?
কারণ এটা তো আমার, দীপকের। দীপকই তো চিরঞ্জিতকে বানিয়েছিল। ভারতে কোনও ছবি বেদের মেয়ে জ্যোত্স্নার মতো চলেনি। কিন্তু এত বছরে আমি নিজে মাত্র দু’বার দেখেছি। আর পথের পাঁচালি ২৫ বার। কারণ চিরঞ্জিত ক্যামেরার সামনে থেকে সরে গেলেই তো সে দীপক।

আর অভিনয়, নাকি রাজনীতি— এর মধ্যে পছন্দের কাজ কোনটা?
অবশ্যই অভিনয়।

এই যে একের পর এক তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী গ্রেফতার হচ্ছেন, কী বলবেন?
স্রেফ রাজনৈতিক কারণে এই গ্রেফতারি। ডিমনিটাইজেশনের জন্য মমতা প্রতিবাদ করেছেন। সে জন্য মোদীর মনে হল, একে তোল, ওকে তোল। এটা রাজনৈতিক চাপ। আর এখনও তো সবটাই অভিযোগ। কিছু প্রমাণ হয়েছে কি? মদন মিত্র, কুণাল ঘোষ সবাই তো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নিউ ইয়ার ইভে বেঙ্গালুরুতে যে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটল, কী ভাবে দেখছেন?
জঘন্য ঘটনা।

এই ঘটনায় অনেক হেভিওয়েটই মেয়েদের পোশাক নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। আপনিও বারাসত কাণ্ডে একবার এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।
সে সময় আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম অনেক কিছু। কিন্তু ছোট একটা অংশ কেটে দেখানো হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, মেয়েদের পোশাক নিয়ে এখনও আমার কিছু বক্তব্য রয়েছে।

বলুন প্লিজ।
দেখুন, পার্ক হোটেলে যখন কোনও ছেলে ও মেয়ে রক ডান্স করতে যাবে নিশ্চয়ই ধুতি বা বেনারসি শাড়ি পরে যাবে না। আবার মফস্সল থেকে যে মেয়েটি ট্রেনে করে টিউশন পড়তে যায় তার পোশাকও সেই অনুযায়ী হবে। ক্যাটরিনা কইফ যখন ‘শীলা কি জওয়ানি’ নাচছেন তখন এক রকম, আবার তার নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখুন তো কী পরছেন। আসলে কোথায় যাচ্ছে, আর প্রোটেকশন রয়েছে কিনা সেটা ভেবে মেয়েদের পোশাক নির্বাচন করতে হবে।


মেয়েদের প্রোটেকশন আজও দরকার বলছেন?

অবশ্যই। সে জন্যই এখনও লেডিজ সিটের প্রয়োজন। সে জন্যই মেয়েদের রেপের খবর এত বেশি পাওয়া যায়। মেয়েরা যদি শারীরিক শক্তিতে ছেলেদের সমানই হত, তা হলে তো ছেলেদের শ্লীলতাহানির খবরও একই রকম পাওয়া যেত। কিন্তু তা তো হয় না। পোশাক যে কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে এটা কিন্তু মেয়েরাও জানে। এমন ঘটনার আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে পোশাকও একটা।

মানে যাবতীয় দায়িত্ব মেয়েদের?
কখনওই নয়। ২৫ ভাগের মধ্যে আমি মেয়েদের শুধু এটুকু দায়িত্ব নিতে বলব। বাকি ২৪ ভাগ শুধরোতে বলব পুরুষদের। আমি আজও সমাজে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে রিজার্ভেশনের পক্ষে।

অভিনেতার কথায় ফিরি। ইন্ডাস্ট্রিতে আগের সঙ্গে এখনকার কাজের পার্থক্য কতটা?
কাজের পরিবেশ বদলেছে।

আরও পড়ুন, ‘রণবীরের বাবা তো হতে পারিনি, সে দুঃখ রয়েছে’

সেটা ভাল না খারাপ?
ভাল বা খারাপ এ ভাবে তো এটা বলা যায় না। এটা একটা প্রসেস। আসলে খুব বড় একটা পরিবর্তন এসেছে। আগে ফিল্ম এক্সপোজ হত। অনেক খরচা। এখন ডিজিটাল। ক্যামেরাটা ডিজিটাল হয়ে গিয়েছে। এখন অফুরন্ত ছবি। এই ইমপ্রুভমেন্টটা আধুনিক ডিরেক্টরদের জন্ম দিয়েছে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের সকলকে লিবার্টি দিয়েছে।

কেমন স্বাধীনতা? যদি একটু ভেঙে বলেন…
এখন ডিরেক্টররা যতবার পারেন, যত অ্যাঙ্গেল থেকে পারেন শট নেন। সৃজিত প্রচুর শট নেন। রাজের সঙ্গে ‘চ্যাম্প’ করছি। আমরা যে ভাবে তৈরি হয়েছি এদের সে ভাবে তৈরি হওয়ার দরকার নেই। এরা লিমিটেড জায়গাতে কাজ করতে শেখেনি। তার একটা এফেক্ট পড়ে। সিনেমাটা পাল্টায়। যেমন উত্তমকুমারের সময় ১৯ বার রিহার্সাল হত। আমি ১৩ বার রিহার্সাল করেছি। এখন এ সব খুব কম হয়।

রেস্ট্রিকশনটা নেই বলে কি এখন রিল্যাক্সড লাগে?
এখানে একটা সমস্যাও আছে। এরা অনেক শট নেয়। সব অ্যাঙ্গেল থেকেই আবার পুরোটা বলতে বলে। অভিনেতাদের সমস্যা কি, যেহেতু ১৭ বার পুরোটাই করতে হবে, জেসচার মেলে না, মুভমেন্ট মিলবে না। ১৭ বার ১৭ রকম হবে। কিন্তু ডিরেক্টরের অনেক বেশি শট আছে, তাই কন্টিনিউয়িটিতে সমস্যা হবে না। তবে এখন তো দীপকের ফেজ। তাই আমি কমফর্টেবল। যখন ‘চ্যাম্প’ করছি বা ‘বস টু’ করছি তখন মাঝে মাঝে চিরঞ্জিতকে ডেকে নিচ্ছি। বলছি, এই শটটা তোর। যা গিয়ে দিয়ে আয় (মুচকি হাসি)।

‘মাস’ অডিয়েন্সকে তো আপনি আগেই পেয়েছেন। দীপকের ফেজ দিয়ে কি কোথাও ‘ক্লাস’কে ধরার চেষ্টা?
কিছুটা ঠিক। তখন তো এমন ছবি করার সুযোগ পাইনি। তাই আমি খুশি। ১৫ বছর আগে তো এমন প্রেশার ছিল না। কিন্তু একটা কথা সত্যি, কর্মাশিয়াল ছবি করা অনেক শক্ত কাজ।

তাই?
দেখুন, আমি ক্রিকেট খেলি। হঠাত্ বললাম, আমি ফুটবলটাও খেলতে পারব, হয় না ওটা। অঞ্জন দত্ত বললেন, আমি কর্মাশিয়াল করব। ‘গণেশ টকিজ’ বানালেন। তেমন চলল কি? এটা অত সহজ খেলা নয়। আমার খুব প্রিয় মানুষ অঞ্জন। কিন্তু আমি বলতে চাইছি, আমরা যেটা বানাই সেটাই ছবি, আর কর্মাশিয়াল যে কেউ বানাতে পারে, এই ভাবনাটা ঠিক নয়।

আরও পড়ুন, ‘আমি সিঙ্গল, তবে এক জন স্পেশ্যাল বন্ধুও আছে’

ইন্ডাস্ট্রির আর কোনও চেঞ্জ চোখে পড়ছে?
এখন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সকলে ‘অনবদ্য’ অভিনেতার বিশেষণ পাচ্ছেন। আমিই পাচ্ছি। ‘কিরীটী’ বা ‘চতুষ্কোণ’-এ যা অ্যাপ্রিশিয়েনশ পেয়েছি তা সারা জীবনে পাইনি। এগুলো আমাদের সময়ে ছিল না। তখন ক্রিটিকরা খুব কড়া ছিলেন। এটা আধুনিকতা।

এই আধুনিকতা ভাল লাগছে নিশ্চয়ই।
না! আমার খুব একটা ভাল লাগছে না। (উত্তেজিত হয়ে) সবাই সব ছবিতেই নাকি দুর্দান্ত। কিন্তু ছবি তো চলছে না। খরাজ ওয়ান অফ দ্য বেস্ট, রুদ্রনীলও তাই। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের থেকে ভাল অভিনেতা হয় না। যিশু অসাধারণ, আবির সাংঘাতিক। ঋত্বিক ভাবাই যায় না। এরপর ঋত্বিক সম্বন্ধে অ্যাডজেকটিভ খুঁজেই পাবেন না। রজতাভ অন্য ক্লাস।

এতে অভিনেতাদের সমস্যা কোথায়?
দেখুন, ভালটা যদি এতটা দেওয়া হয়, তা হলে তার ভ্যালুটা আর থাকে না। বিষয়টা এমন যে, ও তো খারাপ কখনও করেই না। সবাই ওয়ান্ডারফুল, এটা হতে পারে? আমি তো তা হলে স্ট্যান্ডার্ডটাই বুঝি না। ফাটাফাটিটা বলে দেওয়ার পরে তার ওপরের কিছু এলে সেটা তো আর কিছু দিতেই পারব না। আসলে আমরা সবাই বিক্রি হয়ে গিয়েছি। সমাজটা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। একটা নতুন যুগ আমাদের এমবিএ পড়িয়েছে। ম্যানেজমেন্ট। আমরা ম্যানেজ করতে শিখেছি। তাই সব লোককেই ভাল বলা ভাল। আমার পক্ষে তো সেফ।

কিরীটীর বেশে।

টলিউডে তো এখন গোয়েন্দার ভরা বাজার। ‘কিরীটী’ করার আগে রিস্কি মনে হয়নি?
না। কারণ আমি ছবিটাতে আছি। এই জায়গাটায় আমি খুব এক্সপিরিয়েন্সড।

প্রস্তুতি কেমন ছিল?
কিরীটী ছোট থেকেই মনের মধ্যে বসে রয়েছে। কিরীটী তো বড়দা। তখনও ব্যোমকেশ আসেনি। ফেলুদা তো আরও পরে। তা ছাড়া আমার বাবা (শৈল চক্রবর্তী) কিরীটীর কভার পেজ ডিজাইন করতেন। ফলে আলাদা করে কোনও প্রস্তুতির দরকার হয়নি।

টালিগঞ্জের অন্য কিরীটী (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত)-র সঙ্গে প্রতিযোগিতা রয়েছে আপনার?
ওই ছবিটা আমি দেখিওনি, জানিও না। শুনেছি ছবিটা ভাল হয়নি।

আপনার বিখ্যাত ডায়লগ, ‘বউ হারালে বউ পাওয়া যায়…’
(প্রশ্ন থামিয়ে) বলুন এ বার। এই ডায়লগটা ছাড়া কোনও ছবি কমপ্লিট হয় না, কোনও ইন্টারভিউও কমপ্লিট হয় না।

ডায়লগটা নাকি উল্টে দিয়েছেন আপনি?
আমি ওটা ইচ্ছে করেই গুলিয়ে দিয়েছি। পরের জেনারেশনের কাছে যখন অরিজিনাল ডায়লগটা বলতে যাবেন, তখন তারা বলবে ভুল বলছ। অরিজিনালটা এটা।

কেন?
দেখুন, এত হিট ডায়লগ সবাই বলছে নাকি গত ১০০ বছরে বাংলা সিনেমায় আসেনি। এটার স্রষ্টা আমি। নেগেটিভিটিগুলো ছেড়ে এ বার সেই ক্রেডিটটা দিন। এখন তো এটা একটা প্রবাদ হয়ে গিয়েছে। প্রবাদে সব সময় সত্যি থাকে। এটাও তাই। কারণ প্রচুর বউ চেঞ্জ করতে পারবেন। মা তো আর চেঞ্জ করা যাবে না। ডিএনএ টেস্ট বলে দেবে মা একজনই (হাসি)।

আরও পড়ুন, ‘অরিন্দমদাই আমার আয়না’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE