সব্যসাচীর শাড়িতে রানি এবং দীপিকাও মজেছেন
ওই অনুষ্ঠানটিতে সব্যসাচী আলোচনা করেছিলেন শাড়ি পরার সমস্যা নিয়ে। বলেন, গোটা বিশ্ব শাড়ির মাধ্যমেই ভারতীয় নারীদের চিনতে পারেন। তাঁর মনে হয়, পাশ্চাত্য পোশাকের প্রতি ঝুঁকে, নিজের সংস্কৃতি ভুলতে শুরু করে অনেক ভারতীয় নারী-পুরুষ ছিন্নমূল হয়ে যাচ্ছেন। সব্যসাচীর বক্তব্য, শাড়ি পরা আদতে শক্ত ব্যাপার নয়। বলেন, ‘‘শাড়ি পরে নারীরা যুদ্ধও করেছেন। মা-ঠাকুমারা শাড়ি পরে রাতে ঘুমোতে গিয়েছেন। সকালে ওঠার পর তাঁদের শাড়িতে বিন্দুমাত্র ভাঁজও পড়ে না।’’ শুধু শাড়ি নয়, সব্যসাচী প্রসঙ্গ তোলেন ধুতি পরা নিয়েও। বলেন, ‘‘ভারতীয় নারীরা তবু শাড়িকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ধুতি এককথায় মৃত।’’
এখানেও বিতর্ক। শাড়ি পরতে না পারা যদি লজ্জাজনক হয়, তা হলে ধুতির চল প্রায় উঠে যাওয়া সত্ত্বেও সব্যসাচী কেন পুরুষদের প্রতি মন্তব্য করলেন না? অনেকে এতে খুঁজে পেয়েছেন লিঙ্গ-বিভাজনের গন্ধ! কমেডিয়ান তন্ময় ভট্ট টুইট করেছেন, ‘হয়তো কিছু তরুণী শাড়ি পরছেন না, কারণ আপনি সেই শাড়িগুলো বিক্রি করছেন আশি হাজার টাকায়!’
এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটা বিষয় হয়— এখনকার জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে রোজ শাড়ি পরা হচ্ছে না। এটায় সমস্যার কিছু নেই। আর উল্টো দিকে অন্য বিষয়টা হল— অনেকেই গর্বের সঙ্গে নাক উঁচু করে বলেন, আমি ওই শাড়ি-টাড়ি পরতে পারি না। সে ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা ঐতিহ্যকে অপমান করা হয়। আর তা হলে, বিষয়টা দুঃখজনক বটেই।’’
বিতর্কের প্রত্যুত্তরে সব্যসাচী জানিয়েছেন, ‘‘পোশাকের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে যে উদ্যাপনের কথা আমি বলেছিলাম, সেটা নারীবাদী বিতর্কে পরিণত হয়ে গেল। এটা লিঙ্গভিত্তিক বিষয় নয়। প্রসঙ্গটা শাড়ি নিয়ে বলে উঠে এসেছে মহিলাদের কথা। নারীদের স্বাধীনতা বা কী পরতে চান— তা নিয়ে মন্তব্য করিনি।’’ প্রসঙ্গত, ধুতির চলকে মৃত বলা আসলে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত... সেটাও স্পষ্ট করে দেন ডিজাইনার। বলেন, তিনি লক্ষ করেছেন, অনেক মহিলাই যাঁরা বলেন যে শাড়ি পরতে পারেন না, তাঁদের কণ্ঠস্বরে বেশ গর্ব থাকে। সেটা তাঁর কাছে ঐতিহ্যের অপমান।
কৌশিকী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এটা জেন্ডার বায়াসড বক্তব্য বলে মনে করছি না। কথা বলার সময় তো অত মেপে আমরা কথা বলি না। কথা বলতে গিয়ে যে ভাবটা আমাদের মধ্যে আসে, সেটাই প্রকাশ করার চেষ্টা করি। ধুতি মৃত— এই কথা বলার মধ্য দিয়েই উনি প্রকাশ করে ফেলেছেন ওঁর হতাশা। কোথাও বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাঙালি এবং ভারতীয় হয়েও ধুতির চলটা ধরে রাখতে আমরা অক্ষম। এবং ‘শেম অন ইউ’ বলার মধ্য দিয়ে যদি লজ্জাপ্রকাশ করা হয়, তা হলে কোনও কিছুকে বজায় রাখতে পারিনি— সেটাও সমান ভাবে লজ্জাপ্রকাশেরই নামান্তর। আমি ওঁকে যতটুকু চিনি, ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি উনি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। যদি কিছু নষ্ট হয়ে যায়— সেটা ওঁর ভাল লাগছে না। সেই জায়গা থেকেই হয়তো উনি মন্তব্যটা করেছেন। হয়তো সেই নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে উনি মেয়েদের আরও বেশি করে সচেতন এবং শ্রদ্ধাশীল হতে বলছেন।’’