‘খোক্কস’ মূলের দিক থেকে রাশিয়ান নাটক। ‘দ্য ড্রাগন’-এর স্থানীকরণ ঘটিয়ে তাকে এ দেশের জলহাওয়ায় এনে ফেলেছেন নাট্যকার তথা পরিচালক অর্পিতা ঘোষ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘খোক্কস’ নাটকে রাক্ষস মারতে আসছেন দেবশঙ্কর হালদার। অনেক দিন পর আবার দেবেশের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন ‘ইয়ে’-র অভিনেতা। কেমন চলছে মহড়া? কী দেখতে চলেছেন দর্শক? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন দেবেশ এবং দেবশঙ্কর।
দেবশঙ্কর বললেন, “দেবেশ একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কাজ করেন এখন। প্রচলিত পদ্ধতিতে চরিত্রগুলোর কথা পরস্পরের কানে দেওয়া-নেওয়ার পদ্ধতি নেই এখানে। শুরু থেকেই সেট, লাইট, মেকআপ, পোশাক সবটা নিয়েই রিহার্সাল। কথার পিঠে কথা তৈরি হওয়ার খেলাটা ওখানেই শুরু হচ্ছে। এতে কিছু সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে। এটা একটা অন্য রকমের প্রক্রিয়া, যার বীজ নিহিত ছিল ‘ইয়ে’-র মধ্যে।”
‘খোক্কস’ মূলের দিক থেকে রাশিয়ান নাটক। ‘দ্য ড্রাগন’-এর স্থানীকরণ ঘটিয়ে তাকে এ দেশের জলহাওয়ায় এনে ফেলেছেন দেবেশের বন্ধু নাট্যকার তথা পরিচালক অর্পিতা ঘোষ। এ নাটকে খোক্কসের ভূমিকায় বুদ্ধদেব দাস। খোক্কস নিধন করতে আসা স্বপনকুমার চরিত্রে দেবশঙ্কর। তিনি জানালেন, তাঁর চরিত্রটি প্রান্তিক মানুষের। নাটকে তার ভৌগোলিক অবস্থান জানা না গেলেও চেনা ভূগোলের মধ্যে থাকা মানুষজনের ধরনের মধ্যে একটিকে বেছে নিয়ে চরিত্রটিতে অভিনয় করছেন। চেষ্টা করছেন এর মধ্যেই বিশেষ ভঙ্গিমা তৈরি করার। অভিনেতার আশা, বিন্যস্ত এবং অবিন্যস্ত— দুই প্রক্রিয়ার প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা ধরন তৈরি হবে।
স্বপনকুমার চরিত্রটি প্রসঙ্গে অভিনেতা বললেন, “এমনিতে সে সরল, সাদাসিধে মানুষ বলেই মনে হয়, কিন্তু যেখানেই অন্যায় দেখে, ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু সে শুধুই লড়াকু নয়, প্রেমিকও বটে।” ‘খোক্কস’ নাটকে প্রেমিকা তথা কুমারীর চরিত্রটিতে থাকবেন ময়ূরছন্দা।
পরিচালক দেবেশের কথায়, “যত দিন মানুষের অনিষ্টকারী শক্তি থাকে সমাজে, স্বপ্নদর্শী মানুষকেও তার মুখোমুখি হতে ফিরে ফিরে আসতে হয় বার বার। ‘খোক্কস’ সে দিক দিয়ে অশুভের ধারণা। অশুভের বিপ্রতীপে বার বার দাঁড়ায় শুভশক্তি। দেশ, সমাজের সঙ্কটমুহুর্তে ফিরে ফিরে আসার কথা বলে স্বপনকুমার।”
নাটকের কাহিনি অনুযায়ী, খোক্কস পোষে দেশের রাজা। আপাতনিরীহ সেই খোক্কস কারও অনিষ্ট করে না এই শর্তে যে, বছরে একটি করে কুমারীকে সে ভোগ করবে। সেই থমথমে দেশে আসে এক আগন্তুক, স্বপনকুমার। সে ভালবেসে ফেলে সে দেশেরই একটি মেয়েকে, যাকে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে ওই খোক্কসের কাছে পাঠানোর জন্য। খোক্কসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় আগন্তুক, তার সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত হয় সে। খোক্কসের সঙ্গে যুদ্ধ হয় স্বপনকুমারের। এই যুদ্ধ আসলে হয়ে দাঁড়ায় লোভ, ক্ষমতার বিরুদ্ধে ভালবাসা, শুভবোধের প্রতিস্পর্ধার।
এখন জোরকদমে চলছে মহড়া। মঞ্চ প্রস্তুত হচ্ছে স্বপনকুমার আর খোক্কসের দ্বৈরথের জন্য। নাটকের গানে সুর দিয়েছেন রূপম ইসলাম, যা ‘সংসৃতি’র এই প্রযোজনার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। বিড়ালরাও এ নাটকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। মূল বিড়াল চরিত্রে দেখা যাবে অভিনেতা কোরক সামন্তকে। এ ছাড়াও মঞ্চে থাকবেন নীলাভ চট্টোপাধ্যায়, অভ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
কিন্তু সত্যিই কি খোক্কস মারা যায়? স্বপনকুমার কি সফল হয়? তা দেখতে আসতে হবে ১৮ এপ্রিল রবীন্দ্রসদনে, সন্ধ্যা ৬:৩০টায়। গ্রুপ থিয়েটারের ৭৫ বছর এবং মুখোমুখি নাট্যদলের ৩০ বছর উপলক্ষে আগামী ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে ‘খোক্কস’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy