দিল্লিতে প্রতিবাদীদের মাঝে দীপিকা পাড়ুকোন। ছবি: ফেসবুক
‘সাপোর্ট দীপিকা’, ‘বয়কট ছপাক’ অথবা ‘শেম অন বলিউড’। এ রকম শব্দবন্ধের সঙ্গে হ্যাশট্যাগে ছয়লাপ সোশ্যাল মিডিয়া। তাণ্ডবের পরে জেএনইউ-এর আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের পাশে উপস্থিতি, দীপিকাকে একই সঙ্গে নন্দিত ও নিন্দিত করেছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। তাঁর পক্ষে ও বিপক্ষে, এই দু’টি মেরুতে বিভক্ত নেটিজেনদের ভার্চুয়াল দেওয়াল।
জেএনইউ-কাণ্ডে পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দীপিকা পৌঁছন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সবরমতী টি পয়েন্টে। ছাত্রছাত্রীদের জমায়েতে ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের পাশে দাঁড়িয়েই প্রতিবাদে সামিল হন তিনি। কালো হাইনেকে দীপিকার ভারাক্রান্ত ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে।
প্রথমে শুধুই প্রশংসা। সাধারণ মানুষ তো বটেই, বলিউডের তারকারাও সাধুবাদ জানান দীপিকা। পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ এবং নিখিল আডবাণী বলেন, প্রযোজক হিসেবে প্রথম ছবির মুক্তির মুখে দীপিকার এই পদক্ষেপ যথেষ্ট সাহসী ও প্রশংসনীয়। অনুরাগ তো তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে প্রোফাইলের ছবিই পাল্টে ফেলেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে— ঐশী ঘোষের সামনে নমস্কাররত দীপিকাকে।
দীপিকার ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। ছবি: ফেসবুক
আগামী শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ‘ছপাক’। প্রযোজক হিসেবে এটাই দীপিকার প্রথম ছবি। মেঘনা গুলজার পরিচালিত এই ছবি তুলে ধরেছে অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবন সংগ্রাম। ‘মালতী’ নামে মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন দীপিকা। ছবির প্রচারে তিনি এখন বিভিন্ন শহরে ঘুরছেন।
তাঁর সবরমতী টি পয়েন্টে যাওয়াও নাকি ছবির সুকৌশলী প্রচারেরই অঙ্গ! এমনই মন্তব্য কঙ্গনা রানাউতের বোন রঙ্গোলি চাণ্ডেল-সহ ইন্টারনেটের একাংশের। রঙ্গোলির মতে, দীপিকা জেএনইউ গিয়েছিলেন ‘ছপাক’-এর মুক্তির আগে নিজের জনসংযোগ মজবুত করতে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিবাদী দীপিকার সমালোচনায় পোস্ট করেন বিজেপি মুখপাত্র তাজিন্দর পাল সিংহ বাগ্গা। টুইটারে তিনি দীপিকাকে বয়কটের ডাক দেন। এর পরই ইন্টারনেটে বাড়তে থাকে অভিনেত্রীর প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য। তীব্র হয় ‘বয়কটের ডাক’। অনেকে ছপাক-এর টিকিট ক্যানসেল করে তাঁর স্ক্রিনশটও শেয়ার করেন। তবে ‘বয়কট ছপাক’-এর পাল্টা হ্যাশট্যাগ ‘ছপাক দেখো টপাক সে’ আসতেও সময় নেয়নি।
অনেকে আবার হ্যাশট্যাগ, পাল্টা হ্যাশট্যাগে না গিয়ে সরাসরি দীপিকার সমর্থনে ফেসবুক এবং টুইটারে বার্তা পোস্ট করেছেন। অনুরাগ কশ্যপ। নিখিল আডবাণীর পাশাপাশি শাবানা আজমি, সিমি গারেওয়াল, স্বরা ভাস্কর, বিশাল ভরদ্বাজ, রিচা চড্ডার মতো তারকারা দীপিকার পাশে দাঁড়িয়েছেন। সহ-অভিনেত্রীকে সমর্থন করেছেন ‘ছপাক’-এ দীপিকার বিপরীতে থাকা বিক্রান্ত মেসী।
এ দিকে সোমবার মুম্বইয়ে জেএনইউ তাণ্ডবের প্রতিবাদে যে মিছিল হয়েছিল, তাতে যোগ দিয়েছিলেন অনুরাগ কশ্যপ, অনুরাগ বসু, তাপসী পান্নু, গহর খান, বিশাল ভারদ্বাজ, রিচা চাড্ডা, আলি ফজল, রীমা কাগতি, দিয়া মির্জা-সহ বলিউডেরবেশ কিছুচেনা মুখ। অনিল কপূর এবং আদিত্য রয় কপূরও মঙ্গলবার এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন।
ঠিক কী হয়েছিল রবিবার? জেএনইউ-র পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, রবিবার বিকেল থেকেই ক্যাম্পাসে আচমকা ভিড় জমতে শুরু করে। মুখোশধারী গুন্ডারা প্রথমে সবরমতী ধাবার বাইরে জড়ো হয়।অভিযোগ, এর পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিভিপি নেতা-নেত্রীরা ভাড়াটে গুন্ডাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, এর পর, রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হয় তারা। হস্টেলের আলো নিভিয়ে হামলার পাশাপাশি সবরমতী, কাবেরী, পেরিয়ার ছাত্রাবাসে ভাঙচুরও চলে। সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ছাড়াও আহত হন কয়েকজন অধ্যাপকও। যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করেনি দিল্লি পুলিশ।
#NewProfilePic pic.twitter.com/cJNfiYfHRc
— Anurag Kashyap (@anuragkashyap72) January 7, 2020
ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই লজ্জাজনক হামলার পরে তিন প্রভাবশালী ‘খান’-সহ অমিতাভ বচ্চন, রণবীর-দীপিকা কেন চুপ করে রয়েছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন নেটিজেনরা। ‘পাবলিক ফিগার’ হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁরা ঘটনা নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করছেন না, প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে।
RT if you will Boycott Movies of @deepikapadukone for her Support to #TukdeTukdeGang and Afzal Gang pic.twitter.com/LN5rpwjDmT
— Tajinder Pal Singh Bagga (@TajinderBagga) January 7, 2020
মঙ্গলবার নীরব তারকাদের সেই তালিকা থেকে বাদ পড়ল দীপিকার নাম। দু’ভাগে বিভক্ত হলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন সমর্থনের পাল্লাই ভারী তাঁর দিকে। ব্যক্তিগত জীবনেও পর্দার ‘মস্তানি’ এবং ‘রানি পদ্মাবতী’-র সাহসী ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নানা প্রজন্মের মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy