Advertisement
E-Paper

স্বজনহীন জীবনের এলিজি: ডুব

পরিচালক এড়িয়ে গেলেও অনেকেরই দাবি, ছবিতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ছায়া রয়েছে। হুমায়ূনমনস্ক পাঠক হিসেবে ছবি দেখতে গেলে সেই মিল খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

সোহিনী দাস

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
ছবির একটি দৃশ্য

ছবির একটি দৃশ্য

ডুব: নো বেড অব রোজ

পরিচালনা: মোস্তফা সারওয়ার ফারুকি

অভিনয়: ইরফান খান, পার্নো মিত্র, রোকেয়া প্রাচী, নুসরত ইমরোজ তিশা

৬.৫/১০

মৃত্যু আর জীবন, মাঝে এক ডুব... এই বেঁচে থাকা। যার বেশিটাই প্রেম, সম্পর্কের ভুলে ভরা। সেই কাঁটার রাস্তায় হেঁটে মৃত্যুতে পৌঁছনো... মাঝখানে জেগে থাকে চরার মতো জীবন। আর সেই জীবনেরই এলিজি যেন ‘ডুব: নো বেড অব রোজ’।

দাম্পত্যে তৃতীয় ব্যক্তি, যার জেরে সম্পর্কে টানাপড়েন কিংবা মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে অসম বয়সের প্রেম— ছবির বিষয় ভাবনা হিসেবে নতুন নয়। মনে পড়বে ‘নিঃশব্দ’ ছবিতেও জিয়া খান আর অমিতাভের এমনই সম্পর্কের গল্প দেখেছি। তা হলে ‘ডুব’ আলাদা কোথায়!

পরিচালক এড়িয়ে গেলেও অনেকেরই দাবি, ছবিতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ছায়া রয়েছে। হুমায়ূনমনস্ক পাঠক হিসেবে ছবি দেখতে গেলে সেই মিল খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

গল্পে চিত্র পরিচালক জাভেদ হাসানের (ইরফান খান) সঙ্গে তার স্ত্রী মায়ার (প্রাচী) দীর্ঘ দাম্পত্যের মধ্যে এসে দাঁড়ায় তাদেরই মেয়ে সাবেরীর (তিশা) বান্ধবী নীতু (পার্নো)। সাংবাদিকদের কলমে ফেরে সে গল্প। আর তা-ই ঘর ভাঙে জাভেদের। এক দিকে প্রেমিকের যন্ত্রণা, অন্য দিকে অসহায় বাবা... দুইয়ের মাঝে ফুরোতে থাকে জাভেদ। কোথায় শেষ হবে সেই দ্বন্দ্ব আর টানাপড়েনের?

এ গল্প যত না প্রেমের, তার চেয়েও বেশি মৃত্যু আর বেঁচে থাকার মধ্যিখানে ঠিক-ভুলে পা ফেলে ফেলে হেঁটে আসা যে জীবন...তার। ছবির একটি দৃশ্যে জাভেদ বলে, বাবার মৃত্যু তাকে শিখিয়েছে, মানুষ মারা যায় তখনই, যখন প্রিয়জনের সঙ্গে তার যোগাযোগহীনতা তৈরি হয়। আর সেই মৃত্যু এসে গ্রাস করে জাভেদকেও, কিংবা নতুন জন্ম দেয়। ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যা কিছু হারিয়ে গিয়েছে তার কাছে। তাই বলতে শোনা যায়, একমাত্র মৃত্যুই ভালবাসা, মমতা, সম্মান সমস্ত ফিরিয়ে দেয়। পুনর্জন্ম হয় জাভেদের। এই এক জন্ম থেকে আর এক জন্মে জেগে ওঠাই ‘পদ্মজীবন’, যার গায়ে ভুলের দাগ লাগে না। গোটা ছবিতে এক মায়াবী বিষাদের পরদা ক্যামেরাকে গ্রাস করে রাখে।

তবে এই দর্শন বোধহয় ধাক্কা খেয়েছে পরিচালকের একমুখী লক্ষ্যে। বাস্তবে মানুষ ঠিক ততটা সাদা বা কালো হয় না, তা বোধহয় ফারুকি ভুলে গিয়েছেন। বড্ড মোটা দাগে এঁকেছেন নীতুকে। যেন ছোট থেকে তাকে লোভী, পরশ্রীকাতর, দাম্ভিক দেখানোই ছবির শেষ কথা। আর এই উদ্দেশ্যের পিছনে ছুটতে গিয়ে সব ক’টি চরিত্র অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে। একেকটা সাধারণ দৃশ্য প্রয়োজনের তুলনায় টেনে টেনে দীর্ঘ করেছেন পরিচালক।

ইরফান অস্থিত্বহীনতার অসহায়তা শরীরের ভাষায় যে ভাবে ফুটিয়েছেন, তা তাঁর সহজাত। একে ভাষাটা বাংলা, তায় বাংলাদেশের ডায়ালেক্টে কথা বলার কাজটা সহজ ছিল না। সেই ভার লাঘব করতেই বোধহয় ইরফানকে দিয়ে বেশি ইংরেজি বলিয়েছেন পরিচালক। ছবিতে পার্নো নিজেকে ফোটানোর বিশেষ সুযোগ না পেলেও প্রাচী এবং তিশা চরিত্র অনুযায়ী যথাযথ। তবে ছবিটিরই যেন অন্যতর ব্যাখ্যা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশি ব্যান্ড চিরকুট-এর তৈরি ‘আহা রে জীবন’ গানটি ।

কিন্তু শুধু প্রেম, সম্পর্ক আর তার জটিলতার কানাগলি দিয়ে মানুষকে দেখতে চাওয়া তো খণ্ডদর্শন! তাই না হুমায়ূন, না জাভেদ... কেউই পুরোটা ধরা দিল না ছবিতে।

তবে যা রইল, তা হল ওই সূক্ষ্ম সেতু। সমস্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়েও জীবন নিয়ে যে-দর্শনের কথা ভাবাতে পেরেছেন ফারুক, সেটাই ম্যাজিক। আর সেই নদীতে স্নান করতে দেখা যেতেই পারে ‘ডুব’।

Doob: No Bed of Roses Doob Bengali Movie Irrfan Khan ডুব: নো বেড অব রোজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy