প্র: পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে কোনও বদল চোখে পড়ল?
উ: প্রচুর লোক ফোন করেছেন। যাঁদের সঙ্গে অনেক দিন যোগাযোগ নেই এমন লোকও। এইটুকুই। ‘ময়ূরাক্ষী’ হলে চলাকালীনই জাতীয় পুরস্কার এল। এতে যদি কিছু মানুষ ছবিটা নিয়ে উৎসাহী হন তো ভাল।
প্র: পরিচালক হিসেবে কয়েক ধাপ এগোলেন কি?
উ: কিছু মানুষের কাছে হয়তো জাতীয় পুরস্কার প্রাধান্য পায়। শুধু পরিচালকদের কথা বলছি না। অনেক প্রযোজক হয়তো ভাবছিলেন, আমাকে দিয়ে কাজ করানোটা উচিত কি না। তাঁরা যদি এখন আগ্রহী হন তো ভাল কথা।
প্র: একটু সোজাসুজি বলি, ন’বছর ধরে কাজ করার পর এ বার একটু কল্কে পাবেন বলে মনে হচ্ছে?
উ: এখনও কি কল্কে পাব? আমার তো মনে হয় না। কলকাতায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেক পরিচালক আছেন। পুরস্কার পেয়েছে অথচ কেউ দেখল না এমন ছবিও আছে। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ এত ভাল ছবি। দু’বার করে রিলিজ করার পরেও কেউ দেখল না। পুরস্কারের আলোড়ন খুব ক্ষণস্থায়ী। এর ফলে নিজের মূল্যায়ন করতে পারলাম।
প্র: বক্স অফিস আর পুরস্কার দুই দিয়েছে ‘ময়ূরাক্ষী’। প্রযোজকদের ফোন আসা শুরু হয়েছে?
উ: না! তাঁরা বোধহয় এখনও আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না (হাসি)! পরপর তিনটে ছবি তো ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের সঙ্গে করলাম। তারা আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। আমারও মান্যতা দেওয়া উচিত।
প্র: আপনার প্রতিটা ছবিই বিষয় ভাবনায় স্বতন্ত্র। কিন্তু শুধু ‘ময়ূরাক্ষী’ বক্স অফিসে সফল হল। কোনও ব্যাখ্যা দেবেন?
উ: ‘ময়ূরাক্ষী’র বাবা- ছেলের সম্পর্ক কোথাও দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে পেরেছে। যেটা আমার অন্যান্য ছবিগুলো পারেনি। তার মানে এই নয়, আমি ‘একফালি রোদ’-এর মতো ছবি আর করব না।
প্র: বলা হয়, অতনু ঘোষের ছবি তাঁর টেলিফিল্মগুলোর মতোই। মানবেন কথাটা?
উ: ছবিতে ওপেন এন্ড থাকে বলেই হয়তো কথাটা বলা হয়। কিছু সূত্র রাখা থাক। দর্শক নিজের মতো
করে ভাবুন।
প্র: অন্যান্য পরিচালকদের প্রচারের আলোয় দেখে অস্বস্তি হয় না?
উ: আমি তো কোনও দিন বিখ্যাত হতে চাইনি। অনেক পরিচালক আছেন যাঁদের অভিনেতাদের মতো খ্যাতি হয়ে যায়। আমার সেটা চাই না। নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারি। সব সময় অপরিচিত মানুষদের পরিচয়ও দিই না। দিয়ে দেখেছি তাঁরা অনেকেই আমার কোনও ছবি দেখেননি। তাঁরাও এতে বিড়ম্বনায় পড়ে যান। কর্পোরেট ফিল্ম মেকিং, পড়ানো এগুলোই বলে থাকি।
প্র: নিজেকে কখনও আন্ডাররেটেড মনে হয়েছে?
উ: আন্ডাররেটেড হওয়া ভাল। ওভাররেটেড হলে নতুন কিছু করার তাগিদ থাকে না।
প্র: আর যথাযথ মূল্যায়নের কথা?
উ: তা হলে তো আবার নিজের উপর চাপ নেওয়া হয়ে যাবে। লোকে ভাববে, দেখি, পরের ছবিতে কী করে। আমার ছবি মুক্তি পেলে শোরগোল হয় না। শোরগোল হলে কিন্তু কিছু প্রতিক্রিয়াও আসে। মৃণাল সেনের একটা কথা আমি খুব বিশ্বাস করি। ‘‘তোমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। হয় তুমি বেঁচে থাকবে, নয় তুমি জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবে’’। সব পরিচালককেই কম বেশি এটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই বিষয়টা মেনে নিলে, আত্মসুখের জায়গাটাও কমে যায়। মু্ক্তির এত দিন পরেও যখন দেখি, ‘ময়ূরাক্ষী’ হাউসফুল হচ্ছে—তখন মনে হয়, যদি একটা ছবিও মানুষ মনে রাখেন, তবেই যথেষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy