Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Harry Belafonte Death

পথের প্রান্তে কোন সুদূর গাঁয়ে... মিলিয়ে গেলেন হ্যারি বেলাফন্টে

শুধু গায়ক হিসাবে নিজের পরিচয়কে সীমাবদ্ধ করেননি হ্যারি বেলাফন্টে। আমেরিকায় সামাজিক আন্দোলনেও অন্যতম নাম হিসাবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

Image of Harry Belafonte

সঙ্গীতের জগতে আলোড়ন তুলেছিলেন হ্যারি বেলাফন্টে। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩৩
Share: Save:

প্রয়াত নবতিপর গায়ক হ্যারি বেলাফন্টে। বয়স হয়েছিল ৯৬। মঙ্গলবার ম্যানহাটনের আপার ওয়েস্ট সাইডে নিজের বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

বেলাফন্টের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী তথা তাঁর মুখপাত্র কেন সানশাইন সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে নবতিপর শিল্পীর।

পঞ্চাশের দশকে নিজস্ব গায়কিতে লোকগানের জগতে আলোড়ন তোলা নবতিপর গায়কের অন্য পরিচয়ও ছিল। আমেরিকার সমাজে বর্ণবৈষম্যের বেড়া ভাঙতে নিজের গানকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছেন। অভিনয় করতে নেমেছেন রুপোলি পর্দায়। তবে শুধু গায়ক হিসাবে নিজের পরিচয়কে সীমাবদ্ধ করেননি। আমেরিকায় সামাজিক আন্দোলনেও অন্যতম নাম হিসাবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

বেলাফন্টের আগেও আমেরিকার বিনোদন জগতে ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন এলা ফিৎজ়েরাল্ড বা লুই আর্মস্ট্রংয়ের মতো শিল্পীরা। তবে পঞ্চাশের দশকে সে দেশের সমাজে ভেদাভেদের শিকড় যখন গভীরে প্রবেশ করেছে, সে সময় এক অ-শ্বেতাঙ্গের গুরুগম্ভীর কণ্ঠের মাদকতা তোলপাড় করেছিল আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বকে। বর্ণবৈষম্যের বেড়া টপকে বৃহত্তর সমাজের কাছে পৌঁছতে সফল হয়েছিলেন তিনি।

হার্লেমের এক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অভিবাসী পরিবারে ১৯২৭ সালের মার্চের প্রথম দিনে জন্ম বেলাফন্টের। অনেকের মতে, ক্যারিবিয়ান-আমেরিকান শিল্পীদের মধ্যে তিনিই সফলতম। নিজের গানে পূর্বপুরুষের শিকড়কে ধরেছিলেন বেলাফন্টে। জামাইকান মেন্টো লোকগানের সঙ্গে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ক্যালিপ্সোর স্টাইলের ছোঁয়া জুড়েছিলেন তিনি। প্রায় একার হাতে ক্যারিবিয়ান মিউজ়িকের উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল অতলান্তিকের দু’পারে। ‘ডে-ও’ নামের রেকর্ডের জনপ্রিয়তার পর এসেছিল ‘জামাইকা ফেয়ারওয়েল’ বা ‘ক্যালিপ্সো’-র মতো অ্যালবাম। একই নামের গানের জোয়ারে তখন ভাসছে আমেরিকা, ইউরোপ থেকে সুদূর ভারতও। ১৯৫৬ সালে মুক্তির পর বিলবোর্ড চার্টে টানা ৩১ সপ্তাহ ধরে শীর্ষে ছিল ‘ক্যালিপ্সো’। সঙ্গীত জগতের বোদ্ধারা জানান, বেলাফন্টের সেই অ্যালবামটি বহু বেড়া ভেঙেছিল। সেটিই নাকি কোনও একক শিল্পীর প্রথম অ্যালবাম, যার ১০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিল।

‘দ্য বানানা বোট সং’, ‘জাম্প ইন দ্য লাইন’ থেকে ‘কারমেন জোন্স’, ‘আইল্যান্ড ইন দ্য সান’, ‘অডস এগেনস্ট টুমরো’— পঞ্চাশের দশক জুড়ে একের পর এক হিট গানের কণ্ঠ ছিলেন বেলাফন্টে। লোকগানের ক্ষেত্র ছাড়াও অনায়াসে বিচরণ করেছেন ব্লুজ়, গসপেল থেকে শো টিউন্‌স বা আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড-এর মতো জ়ঁরে।

রেকর্ডিং স্টুডিয়ো ছেড়ে খোলা মঞ্চে শ্রোতাদের মাঝেও তুমুল সফল এই সুদর্শন গায়ক। ‘ম্যাটিল্ডা’, ‘লিড ম্যান হোলার’-এর মতো ক্যালিপ্সো গানের দ্রুত ছন্দ থেকে মদিরতা ছড়ানো ‘স্কারলেট রিবনস’-এর মতো ব্যালাডেও সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। পঞ্চাশের দশকের শেষে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি রোজগেরে অ-শ্বেতাঙ্গ শিল্পী। গায়ক হিসাবে সাফল্যের পর একের পর এক সিনেমার অফার আসতে শুরু করেছিল তাঁর কাছে। এক সময় হলিউডের প্রথম সারির অভিনেতার তালিকায় নাম উঠে যায় বেলাফন্টের। তবে সিনেমার জগৎ বোধ হয় তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পায়নি। বেশ কিছু বছর পর আবার গানের জগতেই ফিরে যান বেলাফন্টে। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন তিনি। মার্টিন লুথারের সাদার্ন ক্রিশ্চিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্সের জন্য অর্থসংগ্রহের মূল উদ্যোক্তাও ছিলেন বেলাফন্টে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE