টানা তিন বছর ধরে এক সময়ে ওঠা। নিজেকে প্রস্তুত করা। স্টুডিয়ো চত্বরে পা রাখা। সারাদিন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের বেশে থাকা। তাঁর মতো চলনবলন। রবিবার থেকে সব শেষ! তার এক দিন আগে শেষবারের মতো আমি ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’র শ্যুটে। ঠাকুরের সাজে। এ যে কতখানি কষ্টের, কী করে বোঝাই! কিন্তু দুঃখ নিয়ে বসে থাকলে আমাদের, অভিনেতাদের তো দিন কাটবে না। তাই আস্তে আস্তে আবার সৌরভ হয়ে ওঠার পালা। গান শুনছি। শরীরচর্চায় মন দিয়েছি। এত বছর ধরে এক ভাবে কথা বলতে বলতে আমার স্বাভাবিক কথা বলার অভ্যেসটাও বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে হাঁটাচলা। সে সব আবার আগের মতো করে তুলতে হবে। জানি, বলা যত সহজ করা ততটা নয়। কিন্তু করতে তো হবেই।
সাংবাদিক বন্ধুরা জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘এবার কোন চরিত্রে দেখব তোমায়?’’ ডাক পাচ্ছি একাধিক ধারাবাহিকে। কিন্তু এখনও নিজেই ঠাকুরের খোলস ছেড়ে বেরোতে পারিনি। কী করে অন্য চরিত্রে অভিনয় করব? দাড়িটাও এখনও কেটে উঠতে পারিনি। সকাল হলেই মনে পড়ে যায় ফেলে আসা তিন বছর। আমার যদিও পাঁচ বছর। শুরু থেকেই আমিই ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করব, ঠিক ছিল। ফলে, তখন থেকে তিলে তিলে গড়েছি নিজেকে। যদিও পিছনে তাকালে মনে হয়, এই তো সেদিন! গত তিন বছর ধরে যখন সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছি তখন সেটে প্রায় সবাই এক বয়সি। একমাত্র ছোট ‘রানিমা’ দিতিপ্রিয়া রায়। কিন্তু অভিজ্ঞতায় ও সব্বাইকে টেক্কা দেয়। আর খুব দ্রুত মিশে যেতে পারত সবার সঙ্গে। শ্যুটের অবসরে সবাই মিলে বেরিয়ে পড়া। কখনও ছোটখাটো ভ্রমণ। ভাল-মন্দ রান্না ভাগ করে খাওয়া ছিলই। আর ছিল প্রত্যেকের জীবনের বিশেষ দিন উদযাপন। চার-পাঁচ দিন ধরে সে সবে ইতি। দম কি আটকে আসছে না আমার?
আমি রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে পড়া ছেলে। ছোট থেকে পড়াশোনার শেষ দিন পর্যন্ত ঠাকুর-মা-স্বামীজিকে স্মরণ করে সব কাজ করেছি। ওঁদের হয়তো অন্যদের থেকে একটু বেশিই অনুভব করতে পারি। তবু চরিত্রটির জন্য যখন আমায় বাছা হয়েছিল, মৃদু আপত্তি জানিয়েছিলাম। এমনি জানা আর চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য জানায় বিস্তর ফারাক। এত পড়াশোনা কি আমি করতে পারব? শেষে পরিবারের সবার অনুরোধে ‘জয় মা’ বলে নেমেই পড়লাম। রোজ ঠাকুরের বিষয়ে কোনও না কোনও বই পড়তে পড়তে স্টুডিয়ো যেতাম। তাতে ঠাকুর যেন সহজে আমার মধ্যে আশ্রয় নিতেন। বাকিটা তৈরি করে দিত সেটের পরিবেশ, ঠাকুরের রূপসজ্জা। এই রূপসজ্জা, অভিনয় আমার ঘরে ঘরে এমন ভাবে পৌঁছে দিয়েছে, যে কত জন দূরদূরান্ত থেকে আমায় সঙ্গে দেখা করতে চলে আসতেন!