Advertisement
E-Paper

দাঁতন থেকে বলিউড যাত্রা আমজাদ খানের

একসময়ে ছাত্র রাজনীতি করতেন। সঙ্গে মার্শাল আর্টের অনুশীলন। বিজ্ঞাপনের ছবি থেকে এসেছিলেন সিনেমা পরিচালনায়। মালালা ইউসুফজাইয়ের উপরে সিনেমা করে শিরোনামে। পরিচালক আমজাদ খানের বলিউড সফরের গল্প শুনলেন দীপক দাস

দীপক দাস

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৪
 নির্দেশ: ‘গুল মকাই’য়ের শ্যুটিংয়ে দিব্যা দত্ত, অতুল কুলকার্নির সঙ্গে পরিচালক। নিজস্ব চিত্র

নির্দেশ: ‘গুল মকাই’য়ের শ্যুটিংয়ে দিব্যা দত্ত, অতুল কুলকার্নির সঙ্গে পরিচালক। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: শুরুটা জেলা দিয়েই হোক। আপনার বাড়ি কোথায়?

উত্তর: দাঁতনে। ছোট শহরেই।

প্রশ্ন: বাড়িতে কে কে আছেন?

উত্তর: মা আছেন। বোন আছে। বাবা মারা গিয়েছেন। উনি ব্যবসা করতেন।

প্রশ্ন: পড়াশোনা? স্কুল, কলেজ?

উত্তর: ওখানেই। দাঁতন হাইস্কুলে। পরে দাঁতন কলেজে। তবে বাইরে বাইরে যেতে হত। তাই করস্পন্ডেন্সে গ্রাজুয়েশন করি।

প্রশ্ন: ছোটবেলার কোনও স্মৃতি?

উত্তর: অনেক স্মৃতি। বাম ছাত্র রাজনীতি করতাম। খেলা, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। দাঁতনে একটা ক্যারাটে টুর্নামেন্ট করেছিলাম সেই সময়ে। জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্ট। খুব ক্ষতি হয়েছিল। সেই সময়ে এই মার্শাল আর্টের অত চল ছিল না। লোকে এই ধরনের বিদেশি স্পোর্টস অন্য চোখে দেখত।

প্রশ্ন: সিনেমার প্রতি ঝোঁক কি আপনার বরাবরের?

উত্তর: না, কোনও কালেই ছিল না। খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মার্শাল আর্ট ভাল ভাবে করার জন্যই আমি মুম্বই চলে এসেছিলাম। মুম্বইয়ে মার্শাল আর্টের বেশ কিছু স্কুল ছিল। একটা রেস্তরাঁ খুললাম। সেখানে বেশ কয়েকজন আসতেন। যাঁরা পরিচালনা নিয়ে কথা শুরু করলেন। শুনে আমার মনে হল, আমিও পারব। ইন্ডিপেন্ডেন্ট হলাম হঠাৎই। বেশ কিছু বিদেশি তথ্যচিত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত হলাম। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের জন্য করলাম। কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোর ওপরে তথ্যচিত্র করলাম।

প্রশ্ন: আপনার তো বিদেশ যাত্রা আগে থেকেই? মার্শাল আর্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন?

উত্তর: হ্যাঁ। পাঁচবার প্রতিনিধিত্ব করেছি। মার্শাল আর্ট ছাড়িনি। এখনও আমার সারা দেশে হাজার খানেক স্কুল আছে। মুম্বইয়ে আছে, গুজরাতে আছে।

প্রশ্ন: আবার সিনেমার কথায় ফেরা যাক?

উত্তর: তথ্যচিত্র করতে করতে আমি বিজ্ঞাপনের ছবির সঙ্গে যুক্ত হলাম। অ্যাড ফিল্ম করতাম। প্রায় ২০০টা বিজ্ঞাপনী ফিল্ম করেছি। বড় সংস্থার হয়ে কাজ করি। কপিরাইটিং, ভিজুয়ালাইজার ছিলাম। তখন ভারতে সবে সবে অ্যানিমেশন গ্রাফিক্সের কাজ শুরু হচ্ছে। সে সব করেছি। আস্তে আস্তে সিনেমা করার দিকে ঝোঁক এল।

প্রশ্ন: প্রথম ছবি কী?

উত্তর: সে ছবি এখনও মুক্তি পায়নি। মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে ছবিটা করেছি। ছবির নাম ‘টুমরো’। সে তো হাইকোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে।

প্রশ্ন: গল্প কি আপনার নিজের?

উত্তর: গল্প আমার নিজেরই ছিল। তবে জে ডে-র লেখা পড়ে প্রভাবিত হয়েছিলাম। সাংবাদিক জ্যোর্তিময় দে। যিনি খুন হয়ে গেলেন। ছবিতে দাউদ ইব্রাহিমের নাম দাউদ ইব্রাহিমই ছিল। ছোটা রাজনের নাম ছোটা রাজনই ছিল। যাদের যা নাম, তাই ছিল। কিন্তু ছবিটা আটকে গেল।

প্রশ্ন: কারণ কিছু জানতে পেরেছেন?

উত্তর: জানি না। কেন্দ্রের কোনও সমস্যা শুরু হল। বিতর্কে প্রযোজকেরাও চাপে পড়ে গেলেন। ছবিতে খুব ভাল আর্টিস্ট ছিলেন। খুব নামী হয়তো নন। কিন্তু সীমা বিশ্বাসের মতো অভিনেতা ছিলেন।

প্রশ্ন: সীমা বিশ্বাস ছিলেন?

উত্তর: ‘ব্যান্ডিট কুইন’ সীমা বিশ্বাস দ্বিতীয় বার নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। সিচুয়েশনাল বেয়ার বডি। খুব ইমোশনাল একটা দৃশ্য ছিল। আসলে ছবিতে আমি প্রচুর বিতর্কিত বিষয় রেখেছিলাম। প্রচুর পলিটিক্যাল স্যাটায়ার ছিল। কোনও মাফিয়া তৈরি হলে দেশের একটা অন্ধকার দিক ওদের তৈরি হওয়াতে সাহায্য করে। ওটা দেখিয়েছিলাম বলেই হয়তো...।

প্রশ্ন: বলিউডে ‘এ ফিউ গুড মেন’এর মতো তো ‘এ ফিউ সেলিব্রিটি’। তার উপর স্টার কিডেরা রয়েছেন। অনেক নামী অভিনেতারাও কাজ পান না। এই তো সেদিন একজন আক্ষেপ করছিলেন, স্টার কিডদের জন্য কাজ হাত ছাড়া হয়েছে তাঁর।

উত্তর: আমি এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছি না। কারও যদি ডেডিকেশন থাকে তার সঙ্গে সে কাজ জানে তাহলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। ম্যানুপুলেশন হয় না তা নয়। তবে একটু ধৈর্যের দরকার হয়। আরেকটা কথা, কেউ যদি নিজে খেটে তারকা হন তাহলে তার পরবর্তী প্রজন্মও তো চাইবেন তাঁর বাবা কিংবা মা তাঁকে সেই জায়গাটা দিন। যিনি স্টার হয়েছেন তিনিও কিন্তু অনেক দিন রাত পরিশ্রম করে সেলিব্রিটি হয়েছেন। এই তারকারা সন্তানদের জায়গা দিলে ভুল কিছু নয়।

প্রশ্ন: এখনও পর্যন্ত সিনেমার সংখ্যা?

উত্তর: ‘টুমরো’র পরে একটা সিনেমা করেছিলাম। ‘লে গয়া সাদ্দাম’। সোশ্যাল মেসেজ এবং স্যাটায়ার ছিল। ‘নিকাহ হালালা’ নিয়ে। তাৎক্ষণিক তিন তালাকের পরে স্ত্রীকে অন্য পুরুষকে বিয়ে আবার স্বামীর ঘরে ফেরার প্রথা। যেটা নিয়ে এখন প্রচুর চর্চা হচ্ছে। তখনও বিতর্ক হল। জয়পুরের এক মুফতি আমার উপরে ফতোয়া জারি করলেন। মেরে ফেলার ফতোয়া।

প্রশ্ন: শোনা যায়, বিতর্কের দিকে আপনার ঝোঁক আছে?

উত্তর: না, বিতর্ক নয়। যে সব জিনিস আমার চোখে পড়ে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি। এখন হয়তো আমার কথা কেউ শুনবেন না। কিন্তু আমি বলি। যেমন এদেশে মানুষের মৌলিক অধিকার। সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিই। সেটা করলেই লোকে আঙুল তোলে আমি বিতর্কিত। একটা উদাহরণ দিই। সরকার শিক্ষাখাতে তিন ট্রিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করে। এই টাকায় প্রতি বছর স্কুল কলেজের লাইব্রেরি বদলে দেওয়া যায়। অথচ দেখুন, সরকারি আর বেসরকারি স্কুল কলেজের পড়াশোনা আর ব্যবস্থাপনার ভঙ্গি কত আলাদা। গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা কী করে এর নাগাল পাবে?

প্রশ্ন: এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ‘লে গয়া সাদ্দামে’র জন্ম?

উত্তর: রেগে গিয়ে, মোবাইলে মেসেজ করে, হোয়াটসঅ্যাপে তিন তালাক দেওয়া যায় না। এটা ঠিক নয়। সিনেমায় তাই দেখাতে চেয়েছিলাম।

প্রশ্ন: আপনার একটা ছবিই তো আসছে, ‘ফতোয়া’? এর পটভূমি কী?

উত্তর: বহু পুরনো একটা ধারণা। এটা দু’জন শিল্পীর কাহিনি। শিল্পীরা নিজেদের ধর্মকে খুব বাজে ভাবে বদনাম করবেন। ওঁদের উপরে ১০০ কোটি টাকার ফতোয়া লাগবে। একজন শিল্পী হিন্দু। আরেক জন মুসলিম। ইচ্ছে করেই বদনাম করবেন।

প্রশ্ন: নেগেটিভ পাবলিসিটির গল্প?

উত্তর: নেগেটিভ পাবলিসিটি নিতে চাইছেন ওঁরা। তবে ওই ১০০ কোটি টাকার পিছনে একটা কারণ থাকবে। এটাই গল্প।

প্রশ্ন: ‘ফতোয়া’ এলে হাসিন জাহান আপনা আপনি এসে যাবেন। ওঁকে পেলেন কীভাবে?

উত্তর: ওকে চিনতাম আগে থেকে। অনেকদিন আগে থেকে। পারিবারিক জীবনটা নিয়ে ততটা জানতাম না।

প্রশ্ন: হাসিন তো মডেলিং করতেন?

উত্তর: হ্যাঁ করত। ওর ব্যক্তিগত জীবনে কী চলছে তা নিয়ে আমার কোনও সহানুভূতি নেই। সাপোর্ট আছে। কাউকে আমি সহানুভূতি দিই না। কোথাও না কোথাও ও ওর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঠিক। আবার মহম্মদ সামিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও বলবেন, তিনি তাঁর জায়গা থেকে ঠিক। পারসেপশনের লড়াই।

প্রশ্ন: প্রায় ২০ বছর মুম্বইয়ে আছেন। অথচ বাংলা এখনও খুব সুন্দর বলেন?

উত্তর: আমার দলের টেকনিশিয়ানদের অনেকেই বাঙালি। মালালার জীবন নিয়ে ছবি ‘গুল মকাই’এর চিত্রনাট্যকারও বাঙালি, ভাস্বতী চক্রবর্তী।

প্রশ্ন: বাড়ি ফেরা হয়?

উত্তর: এই তো ‘গুল মকাই’ রিলিজের আগে যাব।

প্রশ্ন: বাড়ি ফিরলে কী করে সময় কাটে?

উত্তর: আমি এখনও খেলি। মুম্বইয়েও সকালে মার্শাল আর্টের অনুশীলন চলে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। ওদের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন: মুম্বইয়ে কে কে আছেন?

উত্তর: আমি একা এবং প্রচুর বন্ধু। কয়েক হাজার বন্ধু।

প্রশ্ন: মানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘একা এবং কয়েকজন’এর মতো একা এবং কয়েক হাজার’?

উত্তর: হা হা হা...।

Gul Makai Malala Yousafzai Movie Amjad Khan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy