Advertisement
E-Paper

অবশেষে কুর্নিশ

আনন্দplus-এর ‘অপ্রকাশ্য নায়ক’ সম্মানে ভূষিত হলেন অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়। এত দিন পরে এমন স্বীকৃতিতে অভিভূত তিনি। লিখছেন নিবেদিতা দে।‘‘তিনটে বিষয় আমার জীবনে ধ্রুব সত্য ছিল। এক, কোনওদিন রোগা হব না। দুই, সিনেমার পোস্টারে আমার ছবি থাকবে না এবং তিন, কোনও দিন কোনও কাজের স্বীকৃতি বা পুরস্কার পাব না। আজ সেই শেষ সত্যটার ভুল ভাঙল’’

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০০:২০
ছবি:  দেশকল্যাণ চৌধুরী

ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মহারাজ নন...

তিনি খরাজ।

গোলগাল। সাদামাঠা। হাসিখুশি।

ল্যান্সডাউন মার্কেটে দর জেনে বাজার করেন। গলা ছেড়ে গান করেন। আবার গভীর ভাবে গ্রামের মানুষের কথা ভেবে তৈরি করেন নিজের বিশেষ ধরনের শো।

বলেন, ‘‘শহুরে চোখ নিয়ে নয়, শো করতে হবে গ্রামের কথা ভেবে। আমি সেটাই করি। আমার শোয়ে গান থাকে, কৌতুক থাকে, অভিনয় থাকে...পুরো এক ঘণ্টার আসর।’’

খরাজ মুখোপাধ্যায় এমনই।

আনন্দplus-এর বায়োস্কোপে বাজিমাতের ক্যুইজ সন্ধ্যায় ‘অপ্রকাশ্য নায়ক’ পুরস্কারটি কোয়েল মল্লিকের হাত থেকে গ্রহণ করার পরে তিনি বলেন, ‘‘তিনটে বিষয়কে আমি আমার জীবনের ধ্রুবসত্য বলে মেনে নিয়েছি।

এক, কোনও দিনই আমি রোগা হব না। দুই, কোনও দিনই সিনেমার পোস্টারে আমার ছবি থাকবে না এবং তিন, আমি কোনও দিন কোনও কাজের স্বীকৃতি বা পুরস্কার পাব না। আজ সেই শেষের সত্যটার ভুল ভাঙল।’’

অভিমানী শিল্পী। যদিও তাঁর ঝুলিতে আছে মণিরত্নম থেকে মীরা নায়ার, অপর্ণা সেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায় থেকে রবি কিনাগী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় থেকে অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ সরকারের মতো পরিচালকের নাম। তিনি অবলীলায় বলেন, ‘‘পালিশ-টালিশে কাজ নেই। আমি চরিত্রাভিনেতা... ভাগ্যটা মেনে নিয়েছি।’’

হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেও ছাইচাপা আগুনের মতোই যে তাঁর ভাগ্য, সেটা তিনি মেনে নিয়েছেন দগদগে মনে, সেটা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই বোঝা গেল।

না হলে তিনি কেন বলবেন, ‘‘আমার কথা ছাড়ুন, অঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে রঞ্জিত মল্লিকের ঝামেলা তো পো স্টারে মিঠুনের সঙ্গে ছবি দেওয়া নিয়েই। আর তার পর থেকেই তো ওঁদের বন্ধুত্বে ইতি।’’

ম্যাডক্স স্কোয়্যারের পাশে তিনতলা বাড়ির দোতলায় থাকেন খরাজ। রেলে চাকুরিরতা বৌ ও অভিনয় ও গানের সঙ্গে যুক্ত তাঁর ছেলে বিহু।

বললেন, ‘‘শুধু আমি কেন, রুদ্রনীল ঘোষের মতো অভিনেতাও তো রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে বহুবার কথা বলেছে চরিত্রাভিনেতাদের যথার্থ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য....আসলে আমাদের প্রডিউসাররা চান তাইল্যান্ডে নায়িকাদের নাচগান দেখিয়ে দর্শক টানতে। ‘পরশপাথর’ ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ ‘গল্প হলেও সত্যি’ বা ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’ কে বানাবে বলুন? তুলসী চক্রবর্তী, রবি ঘোষ, তরুণকুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়... কী সব শিল্পী!’’

বলেন, আজকাল কী হয়েছে জানেন, ‘‘সবটাই দেখনাই। মানে, মান্না দে টেকো, তার মানে নিশ্চয়ই গানের গলা তেমন নয়। লতা মঙ্গেশকরের গায়ের রং মাজা, অতএব উনি কি গাইতে পারবেন?... লোকের মানসিকতাটা আজকাল এই রকম হয়ে গেছে...আমাকে ক’দিন আগে এক বাঁশিবাদক দুঃখ করে বলছিলেন, জানেন দাদা, লোকে বাঁশি শোনার পরেই জানতে চায়, আচ্ছা এর থেকে স্যাক্সোফোনের আওয়াজ শোনা যাবে?...ভাবুন।’’

সত্যিকারের ট্যালেন্ট যে বাজারে বিকোয় না, এটা খরাজের মতো শিল্পীরা হাড়ে হাড়ে জানেন। জীবন দিয়ে প্রতি পদে ঠেকে শিখেছেন।

মাধ্যমিকের সময় থেকেই নাটকে খরাজের হাতেখড়ি। নেহাতই পাড়ার দাদার হাত ধরে, তার পর সেন্ট লরেন্স পেরিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্সে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়ার সময়েও
নাটকের নানা অলিগলি দিয়ে ঘুরে যায় তাঁর জীবন। রমাপ্রসাদ বণিকের দলে যোগ দেওয়া, মনোমালিন্য আবার মিলন...

‘তেরো পার্বণ’-এ গান, যাতে সব্যসাচী চক্রবর্তীর প্রথম লিপ দেওয়া... নানা খাতে জীবন বয়ে চলতে চলতে হঠাৎই সেই খাত এসে পড়ে পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের সামনে।

‘‘তখন ‘হুলুস্থুল’ ছবির জন্য অভিনেতা বাছাই চলছে। তো আমি যেদিন দেখা করতে যাই সেদিন ওখানে উপস্থিত ছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। উনিই বলেন, এই ছেলেটিকে নিন দাদা।’’

ওই শুরু সিনেমার জগতে প্রবেশ।

‘দ্য নেমসেক’ থেকে ‘বাইবাই ব্যাংকক’, ‘মুক্তধারা’ থেকে ‘লে ছক্কা’, ‘পরিণীতা’ থেকে ‘দ্য জাপানিস ওয়াইফ’, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’, ‘বেলাশেষে’....

...গঙ্গা দিয়ে কত জল বইল, কিন্তু খরাজ মুখোপাধ্যায়ের জীবনে জুটল না তেমন কোনও নামী সম্মানের স্বীকৃতি। বঞ্চনাই যেন তাঁর সঙ্গী।

‘‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার, প্রথম জীবনে যখন রেলের চাকরি করার জন্য চিত্তরঞ্জনে থাকতাম তখনও ওখানকার বড়বাবুরা অভিনয় করার জন্য ছুটি দিতে চাইতেন না...আমি বলতাম, যারা খেলার কোটায় চাকরি পান তারা কী করে ছুটি পায়? ওরা বলত, জাতীয় স্তরের কাজ করে ওঁরা। ভাবুন। আমরা হলাম গিয়ে এলিতেলি আর ওরা জাতীয়!’’

এই অবহেলা, বঞ্চনা সঙ্গী করেই এতটা পথ হাঁটলেন খরাজ।

খরাজের বাবা ছিলেন ইনকাম ট্যাক্সের পরামর্শদাতা। অভিনয় জগৎ সম্পর্কে একেবারে নির্লিপ্ত প্রকৃতির মানুষ।

‘‘অনেকটা ‘দেয়ানেয়া’র কমল মিত্রের মতো। চাইতেন না আমরা অভিনয়-টভিনয় করি। তাও চালিয়ে গেছি। এমনকী আমি যখন অভিনয় করে একটা ছোট গাড়িও কিনি তখনও উনি ভাবতে পারতেন না এই ভাবে টাকা রোজগার করা যায়। ভাবলে হাসি পায়, আমাদের পদ্মপুকুরের বাড়ির সামনে ‘সোনার কেল্লা’র শ্যুটিং করার জন্য সত্যজিৎ রায় বাবার কাছে এলেও উনি কেমন যেন নির্লিপ্ত। আমরা তিন ভাই তো পাগল হয়ে যাচ্ছি। বাবা হাসছেন। এই রকমই ছিলেন উনি।’’

আপাতত যশরাজ ফিল্মস এবং টি সিরিজের সঙ্গে তাঁর কথা চলছে পরবর্তী ছবির জন্য। ‘কহানি টু’-তেও আছেন। আবার গ্রামে-গ্রামে শোও করছেন মাঝে মধ্যেই।

বললেন, ‘‘আনন্দplus-এর এই সম্মানে আমি অভিভূত। মনে হল, তা হলে আমাদের মতো চরিত্রাভিনেতাদেরও মানুষ ঠিক নজর রাখেন। আজও। ভাল লাগছে।’’

kharaj mukherjee awarded tollywood actor MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy