Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সহকর্মী সাংবাদিকদের প্রতি সৌজন্য বজায় রাখুন

প্রিন্ট মিডিয়ায় আছেন? জানেন এই পেশায় গ্রুমিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? লিখছেন ঋতা ভিমানিসে অনেক দিন আগের কথা। যখন সাংবাদিকতা করতে প্রথম আসি তখন দেখতাম সাংবাদিকেরা তাঁদের সাজপোশাকের দিকে তেমন নজরই দিতেন না। কেমন দেখতে লাগছে তা নিয়ে ভাবতেন না। তাঁরা মনে করতেন সংবাদ সংগ্রহ করার কাজটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যাঁকে ইন্টারভিউ করতে যান, তাঁরাই গুরুত্বপূর্ণ। সাজপোশাকে গুরুত্ব না দিলেও চলবে। সেই সময় সাংবাদিকতার পেশায় পুরুষরাই বেশি আসতেন। মেয়েদের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

সে অনেক দিন আগের কথা। যখন সাংবাদিকতা করতে প্রথম আসি তখন দেখতাম সাংবাদিকেরা তাঁদের সাজপোশাকের দিকে তেমন নজরই দিতেন না। কেমন দেখতে লাগছে তা নিয়ে ভাবতেন না। তাঁরা মনে করতেন সংবাদ সংগ্রহ করার কাজটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যাঁকে ইন্টারভিউ করতে যান, তাঁরাই গুরুত্বপূর্ণ। সাজপোশাকে গুরুত্ব না দিলেও চলবে। সেই সময় সাংবাদিকতার পেশায় পুরুষরাই বেশি আসতেন। মেয়েদের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য।
এখন সাংবাদিকেরা অনেক বেশি বেতন পান। তাই শ্রীহীন ভাবে ঘোরাঘুরির দিনও শেষ। তবু কিছু ব্যাপার চাইলে আরও ভাল করা যায়। প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের শুধু ভাল করে পোশাকআশাক করার দিকেই নজর দিলেই চলবে না। যাঁদের সঙ্গে কাজের সুবাদে দেখা হয় তাঁদের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করবেন, কেমন হবে আচরণ সবটাই নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
এ প্রসঙ্গে একটা ভারী মিষ্টি ঘটনা মনে পড়ল। আমি তখন একটা বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ত্রী। ওই এজেন্সির এক অল্পবয়সি মেয়ে একদিন আমাকে এসে বলল সে একজন অভিনেতার ইন্টারভিউ নিতে যেতে চায়। তাই অনুমতি চাই। বুদ্ধিমতী মেয়েটি সে দিন খুব ছিমছাম সেজেছিল। সাজের মধ্যে কোনও ঘটা নেই। পরে সেই অভিনেতার সঙ্গেই একটা রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল মেয়েটির। আমার মনে হয়েছিল মেয়েটির ছিমছাম সাজেই মুগ্ধ হয়েছিলেন সেই অভিনেতা।
না, আমি তাই বলে এটা বলছি না যে ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে এই রকম রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে ওঠাটাই বাঞ্ছনীয়।

মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ জনকে ইন্টারভিউ করতে গিয়ে নানা ভাবে বেকায়দায় পড়তে পারেন। যে কোনও পরিস্থিতিতে কী ভাবে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখবেন সে সম্পর্ক কিছু টিপস দিতে চাই। আমার এই টিপসগুলো মহিলা ও পুরুষ সাংবাদিক উভয়ের জন্য।

১) যাঁকে ইন্টারভিউ করছেন তাঁকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রশ্ন করে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়ার সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন। সতর্ক থাকুন যাতে কোনও পুরুষ আচম্বিতে আপনার কাছে কোনও অবাঞ্ছিত সুযোগ নিতে না চায়। ফোটোগ্রাফার সঙ্গে থাকলে খুব ভাল।

২) স্মার্ট পোশাক পরুন। একেক রকম অনুষ্ঠানের সাজ একেক রকম এইটা মনে রাখুন। কোনও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার হলে সুন্দর ভাবে সেজে যাবেন। তবে সেই সাজে যেন কোনও বাহুল্য না থাকে। অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে সাজগোজের যদি সময় না থাকে, কিংবা যেখানে যাচ্ছেন সেই জায়গাটা যদি বাড়ি থেকে দূরে হয়, তা হলে অফিসেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার মতো সাজপোশাক নিয়ে যান। জামাকাপড় যদি না নিতে পারেন, প্রসাধন আর সুগন্ধি সঙ্গে নিন। বেরোবার আগে লাগিয়ে নিতে পারলে ঝরঝরে লাগবে। সালোয়ার কামিজ পরে বেরিয়ে থাকলে সঙ্গে একটা ভাল দোপাট্টা রাখুন। অফিস থেকে অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে পাটভাঙা দোপাট্টাটা জড়িয়ে নিন। ট্রাউজার পরে বাড়ি থেকে বেরোলে একটা বাড়তি টপ ক্যারি করুন। শাড়ি পরে যেতে হলে এমন শাড়ি পরুন যেটা ‘ক্রাশড’ হবে না। সকাল থেকে বিকেল অফিসে থাকলেও সে শাড়ি যেন টানটান থাকে। সঙ্গে টিপ, লিপস্টিক, লাইট স্প্রে রাখুন। এখন বড় হ্যান্ডব্যাগই ট্রেন্ড। বড় দেখে সুন্দর ডিজাইনের ব্যাগ কিনুন।

৩) সাংবাদিকতায় মানসিক প্রস্তুতি খুব দরকার। যে বিষয় নিয়ে কভার করতে যাচ্ছেন, বা যাঁকে ইন্টারভিউ নিতে চলেছেন, সব ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকুন।

৪) রেকর্ডিংয়ের জন্য সেলফোন বা ডিক্টাফোন ব্যবহার করলে সেটিতে ঠিকঠাক চার্জ দেওয়া আছে কি না দেখে নিন। টেপ করলেও নোট প্যাডে নোট নিন। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বিগড়োলে ভরসা থাকবে নোট বই। সমস্ত তথ্য ঠিকঠাক জোগাড় করুন। সাংবাদিক বৈঠকে গেলে সমস্ত খবর পরিষ্কার ভাবে জেনে নিন। দরকার হলে প্রশ্ন করুন। তবে অকারণে আজেবাজে প্রশ্ন করবেন না।

৫) পুরুষ সাংবাদিকেরা স্মার্ট পোশাক পরুন। ঠিকঠাক ভাবে সাজ পোশাক পরলে, সঠিক ভাবে জুতো পরলে, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে অর্ধেক যুদ্ধ জয় হয়েই গেল জানবেন। তবে ওভারস্মার্ট হতে যাবেন না। সহকর্মী সাংবাদিকদের প্রতি আপনার সৌজন্য বজায় রাখুন। এই পেশায় কাকে, কখন দরকার লাগে কিছুই বলা যায় না।

৬) চিন্তাভাবনা করে জুতো পরুন। যাতে চলার পথে আরাম হয়। এবং অন্য লোকেরও দেখে ভাল লাগে। পায়ের জুতো দিয়েই মানুষকে বিচার করা হয় এটা মনে রাখবেন।

৭) আপনার চিন্তাভাবনা হোক পজিটিভ। আপনার আচরণে যেন আত্মবিশ্বাসের ছাপ থাকে। আশপাশের মানুষ যেন আস্থা রাখতে পারে আপনার ওপর।

আমি আমার সাংবাদিক বন্ধুদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে ভালবাসি। ওদের সঙ্গে মজা করি। পার্টি করি। খালি তফাতটা কোথায় জানেন? ওদের জ্ঞান অনেক। আর কলমের ধারটাও খুব বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE