Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ক্যানসার-যুদ্ধে হার আদেশের

পাঁচ বছর আগে যে লড়াইটা শুরু হয়েছিল, কাল মাঝ রাতে শেষ হয়ে গেল সেটা। ২০১০-এ ধরা পড়েছিল ক্যানসার। চিকিৎসায় খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও এ বছর ফের মাথা চাড়া দেয় মারণ রোগ। মুম্বইয়ের হাসপাতালে চল্লিশ দিন যুদ্ধ চালিয়েও রোগকে হারাতে পারলেন না আদেশ শ্রীবাস্তব।

আদেশ শ্রীবাস্তবের স্ত্রী বিজয়েতাকে সান্ত্বনা অমিতাভ বচ্চনের। শনিবার আদেশের অন্ত্যেষ্টিতে।

আদেশ শ্রীবাস্তবের স্ত্রী বিজয়েতাকে সান্ত্বনা অমিতাভ বচ্চনের। শনিবার আদেশের অন্ত্যেষ্টিতে।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে যে লড়াইটা শুরু হয়েছিল, কাল মাঝ রাতে শেষ হয়ে গেল সেটা। ২০১০-এ ধরা পড়েছিল ক্যানসার। চিকিৎসায় খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও এ বছর ফের মাথা চাড়া দেয় মারণ রোগ। মুম্বইয়ের হাসপাতালে চল্লিশ দিন যুদ্ধ চালিয়েও রোগকে হারাতে পারলেন না আদেশ শ্রীবাস্তব।

কাল রাত সাড়ে বারোটায় মারা যান বলিউ়ের অন্যতম জনপ্রিয় এই সঙ্গীত পরিচালক। বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। বলিউ়ডে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ‘কন্যাদান’ ছবির গানে প্রথম সুর দিয়েছিলেন আদেশ। কিন্তু সে ছবি মুক্তি পায়নি। তবে আদেশকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘চলতে চলতে’, ‘বাগবান’, ‘বাবুল’, ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘রাজনীতি’। একশোরও বেশি ছবিতে সুর দিয়েছেন তিনি। ‘‘ক্যায়া আদা, ক্যায়া জলওয়ে তেরে পারো’’, ‘‘গুর নালোন ইশ্‌ক মিঠা’’, ‘‘সোনা সোনা’’, ‘‘শাভা শাভা’’। একের পর এক হিট গান তিনি উপহার দিয়েছেন। অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে প্রায় জোর করেই গাইয়েছিলেন ‘বাগবান’ ছবির ‘‘ম্যাঁয় ইঁয়াহা তু ওঁয়াহা’’। টেলিফোন বুথে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে প্রৌঢ় অমিতাভের সেই গান এখনও হাজারো শ্রোতার মনে গেঁথে রয়েছে।

আদেশ শ্রীবাস্তব।

তবে শুধু গানে সুর দেওয়াই নয়। পরিচালক হিসেবেও হাত পাকিয়েছিলেন এক সময়। শিশুদের দেহব্যবসা নিয়ে তৈরি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘সানা’ পরিচালনা করেছিলেন আদেশ। বিভিন্ন চ্যানেলে গানের প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবেও একাধিক বার দেখা গিয়েছে তাঁকে। সদাহাস্যময় সেই সঙ্গীত পরিচালককে হারিয়ে বলিউড শোকে মুহ্যমান। ছবির পরিচালক থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আদেশকে নিয়ে আজ সকাল থেকেই একের পর এক পোস্ট। অনুপম খের থেকে লতা মঙ্গেশকর। সোনু নিগম থেকে শ্রেয়া ঘোষাল। রীতেশ দেশমুখ কিংবা সুস্মিতা সেন। বলিউডের এক ঝাঁক তারকা আজ সকাল থেকে আদেশকে নিয়ে নানা টুইট করেছেন। সোনু লিখেছেন, ‘‘একসঙ্গে কত ভাল সময় কাটিয়েছি। কত ভাল ভাল কাজ করেছি। এক জন সত্যিকারের বন্ধু আর ভাইকে হারালাম।’’ আবার অনুপম খের লিখেছেন, ‘‘ঈশ্বরের কাছে আমরা কতটা অসহায়...প্রার্থনা। আরআইপি আদেশ শ্রীবাস্তব। তোমার পরিবার এই ক্ষতি সামলে উঠুক।’’

আদতে জবলপুরের বাসিন্দা আদেশ বিয়ে করেছিলেন সঙ্গীতকার জুটি যতীন-ললিতের বোন বিজয়েতা পণ্ডিতকে। রাজেন্দ্র কুমারের ছেলে, কুমার গৌরবের সঙ্গে ‘লাভ স্টোরি’ ছবিতে প্রথম দেখা গিয়েছিল বিজয়েতাকে। জনপ্রিয় বাংলা ছবি ‘অমর সঙ্গী’তে প্রসেনজিতের নায়িকা ছিলেন বিজয়েতা। শুধু তিনি নন, তাঁর দিদি সুলক্ষণা পণ্ডিতও কিছু হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন। তবে বিয়ের পরে আর সে ভাবে ছবিতে দেখা যায়নি বিজয়েতাকে। স্বামী-সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আদেশের দুই ছেলে রয়েছে, অনিবেশ ও অভিতেশ।

বিজয়েতা জানিয়েছেন, গত মাসে তাঁরা আমেরিকায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পরই আচমকা নাক থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে আদেশের। ভর্তি করানো হয় মুম্বইয়ের হাসপাতালে। দিন চল্লিশ সেখানেই ছিলেন তাঁর স্বামী। শেষের দিকে চিকিৎসকরাও হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ, কেমোথেরাপিতে সাড়া দিচ্ছিল না আদেশের শরীর। কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। বিজয়েতা জানিয়েছেন, স্বামী আর বেশি দিন নেই জেনেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছেন এত দিন। ভরসা দিয়েছেন দুই ছেলেকেও। কিন্তু একটানা চিকিৎসার এত খরচ চালাতে চালাতে শেষের দিকে সাহস হারাচ্ছিলেন বিজয়েতাও। তাঁর ভাই ললিত জানিয়েছেন, তাঁদের দুর্দিনে বলিউড যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য তাঁরা কৃতজ্ঞ।

ললিত জানালেন, দিন দুই আগেই হাসপাতালে আদেশকে দেখতে গিয়েছিলেন শাহরুখ খান। অমিতাভ বচ্চন রোজ খোঁজ নিচ্ছিলেন ফোনে। কিন্তু আজ আদেশের মৃত্যুর খবর পেয়ে আর থাকতে পারেননি অমিতাভ। সোজা চলে আসেন ওশিওয়ারা শ্মশানে। তারও আগে নিজের ব্লগে অমিতাভ লিখেছেন, ‘‘আদেশ শ্রীবাস্তব চলে গেলেন। আমার সঙ্গীত জীবন ছিল ওঁকে নিয়ে। এখন ওঁকে ছাড়া বাঁচতে হবে। হয়তো সঙ্গীতকে ছাড়াও।’’ আদেশের শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন সোনু নিগম, অলকা যাজ্ঞিক, রাজীব কপূর, সুধীর মিশ্র, কুমার শানু, উদিত নারায়ণের মতো বহু বলিউড ব্যক্তিত্ব।

তবে অমিতাভকে শ্মশানে দেখে আজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি বিজয়েতা। অমিতাভ সস্নেহে তাঁর পিঠে হাত রেখে যখন সান্ত্বনা দিচ্ছেন, বাস্তবের জীবন সঙ্গীকে হারিয়ে ‘অমর সঙ্গী’র নায়িকা তখন বাঁধ-ভাঙা।

ছবি: এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE