Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নোটেশন

আনন্দplus দফতরে ‘নোটেশন’ বিভাগে অজস্র ইমেল আর কিছু গানের ভিডিয়োও এসেছে। আজ গান নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শান্তনু মৈত্র ও রূপঙ্কর। প্রথম পর্ব বয়স ৫৮। গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকে গান শিখেছি। ১৯৮০ সালে ‘বিশ্বভারতী (শান্তিনিকেতন) থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে বি মিউজ এবং ১৯৮২তে এম মিউজ করি। ওই সময়ে টিভি এবং রেডিয়োর বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেছি।

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১১
Share: Save:

বয়স ৫৮। গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকে গান শিখেছি। ১৯৮০ সালে ‘বিশ্বভারতী (শান্তিনিকেতন) থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে বি মিউজ এবং ১৯৮২তে এম মিউজ করি। ওই সময়ে টিভি এবং রেডিয়োর বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেছি।

আমি আগে স্কেল ‘এ’তে গাইতাম। কিন্তু এখন ‘জি’স্কেলেও আমার সমস্যা হচ্ছে। হায়ার নোটসে গলা কাঁপছে। ডাক্তারের পরামর্শে ল্যারিংগো- স্কোপি করিয়েছি, কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। অনেক ওষুধ খেয়েও কোনও উপকার পাইনি। জোর করে গাইতে গেলে গলার শিরা ফুলে যায় ও বেশ কষ্ট হয়।

মিত্রা গুহরায়, কলকাতা ৩২

শান্তনু: স্কেল নিয়ে খুব ভয় পেয়ে আছেন। এটা আদৌ ভয়ের ব্যাপার নয়। বেশির ভাগই আজকাল দেখি গানটা ঠিক না গাওয়া হলে বলেন,‘‘স্কেল ভুল ছিল। তাই গানটা ঠিক হল না।’’ এটা একটা বাজে অজুহাত। যে পর্দায় আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করি সেটাই আমার স্কেল। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, একটা রেস্তোরাঁয় আমি গিয়েছি। কেউ নেই। ফাঁকা। আমি ওয়েটারকে হাল্কা করে ডাকব। কিন্তু যখন সেই রেস্তোরাঁতে অনেক লোক থাকবে তখন চেঁচিয়ে ডাকব। মানে আমি বলতে চাইছি কোথায় কতটা গলা ছাড়ব, সেটাই আমার স্কেল।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয় একটা স্কেলে গান শুরু করার পর চড়ায় গিয়ে মনে হয় কী করব? ধরুন ‘থ্রি ইডিয়টস’য়ের ‘বহেতি হাওয়া সা থা ও’ গানটা। এই গানটা শুরুই হচ্ছে চড়া পর্দায়। এ ক্ষেত্রে চড়া অংশটা আগে গেয়ে অভ্যেস করে নিতে হবে।

গলা আসলে ইলাস্টিক ব্যান্ডের মতো। রোজ টানব, রোজ খুলবে। যত রেওয়াজ করবেন তত খুলবে। তাই রোজ রেওয়াজ মাস্ট। গানের ভাবনার দিকে নজর দিয়ে
স্কেল নির্বাচন করুন। ধরুন ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু’ গাইছেন। আপনি যদি চড়া স্কেলে চিৎকার করে গান তাহলে লোকে আপনাকে মারবে। আবার ‘মেরা দিল ইয়ে বাতা দে তু’ নিশ্চয়ই আপনি ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু’র স্কেলে গাইবেন না।

আমি ক্ল্যাসিকাল গানের শিল্পী। বয়স ৩২। ক্ল্যাসিকাল আর সেমি ক্ল্যাসিকাল ছাড়াও অন্যান্য গানও গাই। মঞ্চে গাইবার সময় অথবা রেকর্ডিং করার সময় গলা কাঁপে আর শুকিয়ে যায়। কী করব?

মধুরিমা ভদ্র, হালিশহর

শান্তনু: অনেকেরই মঞ্চে গান গাইতে গেলে ভয় লাগে। এটা কিন্তু সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। মঞ্চে গান গাওয়ার আগে চার থেকে পাঁচ বার লম্বা বড় বড় শ্বাস নিন। তাতে নার্ভগুলো স্টেডি হবে। গলা ভিজিয়ে রাখার জন্য বারবার জল খান।

আমার স্কেল কী হবে? যদি একটা গানের উদাহরণ দিয়ে বোঝান।

নীলাঞ্জন ঘোষ, শ্রীরামপুর

রূপঙ্কর: স্কেল কী হবে? কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। মহিলা মানেই নিচু স্কেলে গাইবেন আর পুরুষ হলে উঁচু স্কেলে, এই ধারণাও ঠিক নয়। ধরা যাক ‘চিঙ্গারি কোই ভড়কে’ গানটা—শুরুতেই একটা গিটারের অংশ আছে। রাহুল দেব বর্মন এ গান কিশোরকুমারকে
‘ই’ ফ্ল্যাটে গাইয়েছিলেন। শর্মিলা ঠাকুর-রাজেশ খন্নার গঙ্গাবক্ষের ওই রোম্যান্স যাতে গিটারের টোনের সঙ্গে মিশে যায় তার জন্যই আরডি গানটাকে ‘ই’ ফ্ল্যাটে বেঁধেছিলেন। এখানে কিন্তু কিশোরকুমারের স্কেল নয়, গানে যাতে রোম্যান্সের জন্ম হয় সেই দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং গান অনুযায়ী স্কেল নির্বাচন করা উচিত। যেমন ‘গভীরে যাও’ গানটি। আমার গলার টেক্সচার ভেবে, লোয়ার নোটস কোথায় পৌঁছায় সেটা দেখেই গানের স্কেল ‘এফ’ শার্প মেজর করা হয়েছিল।

আমি নিয়মিত অনুষ্ঠান করি। মঞ্চে শ্রোতাদের অনুরোধে কখনও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান গাইতে হয়। সে ক্ষেত্রে গানটি যে স্কেলে আছে সেই স্কেলেই কি গাইতে হবে?

সায়ন ঘোষ, আগরতলা

রূপঙ্কর: আমিও অনুষ্ঠানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান গাই। ওঁর অত্যন্ত দরাজ গলা। উনি যে স্কেলে অনায়াসে খাদে পৌঁছে যেতে পারেন আমি নিশ্চয়ই ওই একই স্কেলে স্বচ্ছন্দ বোধ নাও করতে পারি। সুতরাং আমি চড়া এবং খাদ যে স্কেলে অনায়াসে গাইতে পারি সেই স্কেলেই গানটা গাইব।

দশ বছর ধরে গান শিখছি। কোন স্কেলে রেওয়াজ করা উচিত? নিজে কী করে বুঝব?

গায়ত্রী কুণ্ডু, যোধপুর পার্ক

রূপঙ্কর: রেওয়াজের প্রসঙ্গে বলি। রেওয়াজ করার সময় দেখে নিতে হবে যে-স্কেলে গলা চড়ার ‘পা’ আর নীচের ‘পা’-য়ে অনায়াসে যাচ্ছে সেই স্কেলেই রেওয়াজ করুন।

অনেকেই মঞ্চে স্কেল ভুল করার সম্ভাবনার কথা লিখেছেন। সেই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি। ‘কুলি’ ছবিতে মহম্মদ আজিজ হাই পিচে অমিতাভ বচ্চনের গলায় গান গেয়েছেন। অথচ ছবিতে আমিতাভ তাঁর ওই ব্যারিটোন ভয়েস নিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন, প্রেমও করছেন। সেই মানুষটাই গান গাওয়ার সময় অন্য রকম গলায় গান গাইছেন। এটাই হাস্যকর! কথা বলার সঙ্গে, গলার সঙ্গে স্কেল মিলে যাওয়া চাই।

আজকাল মেয়েরা হাইপিচে গাইলে প্রশংসা পান। হাইপিচে গান গাওয়াটাই কি এখন কৃতিত্ব?

ঐন্দ্রিলা মজুমদার, কসবা

রূপঙ্কর: ইদানীং যদিও চড়ায় গাওয়ার চল হয়েছে। অনেকে চিৎকার করে চড়া সুরে গেয়ে বাহবা পায়। এখন তো আমার সেই কাওয়ালি গায়ক চঞ্চলের জন্য খারাপই লাগে। যিনি কিনা এক সময়, ‘মন্দির মসজিদ তোড় দো’ বলে চিৎকার করে কাওয়ালি গাইতেন, এখন থাকলে তো তাঁরই বাজার হত। আগে মেয়েরা কোরাসে হায়ার অকটেভে গান গাইতেন আর ছেলেরা লোয়ার অকটেভে। এখন উল্টো হচ্ছে। ব্যারিটোন ভয়েসের কদর কমে আসছে। আমাকেও গলা চিরে চিৎকার করে গাইতে হয়। কষ্ট হয়... কিন্তু কী করব? আমাকেও রোজ প্রমাণ করতে হয় আমি এ ভাবেও গাইতে পারি। তাই নিজের স্বচ্ছন্দ স্কেলে রেওয়াজটা চালিয়ে যান।

হারমোনিয়াম বাজানোর সময় লয় পড়ে যায়। বাজানো ভুল হলে গানের পরবর্তী অংশ গোলমাল হয়ে যায়। কী করব? বাড়িতে চর্চা করার পর, শ্রোতার সামনে, মাইকের সামনে, এমনকী বাড়িতে রেকর্ডিং করার সময় নার্ভাস লাগে। একটা গানকে সুন্দর করে পরিবেশন করার জন্যে কী কী বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত? যন্ত্রানুষঙ্গ ছাড়া মুক্তকণ্ঠে গান সঠিক ভাবে গাইতে কী করা উচিত?

প্রদীপ দেব, বেহালা

রূপঙ্কর: আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলি হারমোনিয়াম বাজানোটা ছেড়ে দিন। হারমোনিয়াম প্লেয়ার হতে চাইলে আলাদা। নয়তো ‘সা’-‘পা’ টিপে রেওয়াজ করুন। মনে রাখবেন লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁশলে কেউই দুর্দান্ত হারনোনিয়াম বাজান না। সুতরাং হারমোনিয়াম বাজানোর দিকে অত মন না দিলেও চলবে। দ্বিতীয় প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে আপনার খুব ভয় ধরেছে। এ ক্ষেত্রে একটাই কথা বলি রেকর্ডিং করুন বা পারফর্ম্যান্স, নিজেকে মনে করবেন সেরা। এ ভাবে একান্তই যদি নিজেকে বোঝাতে না পারেন তা হলে কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। তৃতীয় প্রশ্নে জানাই সুন্দর করে গাইতে হলে গানের ভাবের দিকে নজর দিতে হবে। জেনে নিতে হবে সেটা দুঃখের গান না প্রেমের গান, ছায়াছবির গান না আধুনিক গান। যত্ন করে সুর লাগাতে হবে। যন্ত্রানুষঙ্গ ছাড়া ‘সা’ – ‘পা’ টিপে গান অভ্যেস করুন।

‘আওগে জব তুম সাজনা’র মতো সুপারহিট গান গাইতে গেলে কেমন প্রস্তুতির দরকার ?
‘যাও পাখি’র মতো সফ্ট গানে কী ধরনের কণ্ঠস্বর প্রয়োজন? আনন্দplus-এর পাতায় চোখ রাখুন।
চার সদস্যের গুরুকুলই এ বার সরাসরি সমস্যা সমাধানের জন্য হাজির।
লিখুন notationplus@gmail.com য়ে। এক মিনিটের ভিডিয়ো-ও পাঠাতে পারেন।
পরের পর্বে পরামর্শ দেবেন উস্তাদ রাশিদ খান এবং শ্রাবণী সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

question from reader song Notation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE