কোন নির্বোধ বলে, এই ছবি সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক? এ আসলে বাবা-ছেলে সম্পর্কের, বারংবার ভুল করেও জীবনের সঙ্গে যুঝে নেওয়ার ছবি। এই ছবি আশির দশকের প্রজন্মের। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না, বন্ধুর সঙ্গে নেশায় চুর হয়ে মারপিট করতাম, পরদিন আবার সব ঠিক হ্যায়!
সঞ্জয় দত্তকে আমি প্রথম দেখি কৈশোরে। নবীনার পর্দায় বাইক নিয়ে লাফিয়ে নবীন নায়কের প্রথম প্রবেশ, ঠোঁটে কিশোরের গান ‘দোস্তো কো সালাম, দুশমনো কো সালাম/রকি মেরা নাম।’ পাড়ার কাকা, জেঠুরা বলতেন, ‘দুর, নার্গিসের ছেলেটা তো ড্রাগখোর।’
নেশা নিয়ে আমাদের ছুতমার্গ ছিল না। প্রাক-বিশ্বায়ন সেই যুগেও জানতাম, জিমি হেনড্রিক্সের মতো গায়ক, অলডাস হাক্সলের মতো লেখক অনেকেই এলএসডি নিতেন। এই ছবির এক দৃশ্যে সঞ্জয় হেরোইন নিচ্ছেন। সাদা পুরিয়া থেকে বার হওয়া সাদা ধোঁয়া। ডিটেলিংয়ে ভুল! পুরিয়াটা সাদা, রাংতার নীচে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ধরলে পুরিয়াটা চ্যাটচ্যাটে বাদামি হত। আর সেই ধোঁয়া টানলেই একটা ফাঁপা শূন্যতা আঁটোসাটো স্যান্ডো গেঞ্জির মতো বুকটা আঁকড়ে ধরত। ব্যস, এটুকুই থাক! আপুনকো বোলা না, এডিটর অ্যালাও নেহি করেগা!
স্মৃতির যে কত প্রত্নসাক্ষ্য! পর্দার সঞ্জু (রণবীর কপূর) নেশা ছেড়ে বডিবিল্ডিং-এ মগ্ন। সিক্স প্যাক, এইট প্যাকের ধুম শুরু হওয়ার ঢের আগে সঞ্জয়ই প্রথম চেহারা বানিয়েছিলেন। ‘সড়ক’, ‘সাজন’ বা ‘খলনায়ক’ দেখাত পেশিবহুল চেহারা, কানে রিং, বড় চুল। ‘খলনায়ক’ ছবিতে ‘নায়ক নহি, খলনায়ক হুঁ ম্যায়’ গানের দৃশ্যে সারা বসুশ্রী সিনেমাকে কামাল করে দিয়েছিলেন। দেড় টাকার সিটে ঝনঝনিয়ে পয়সা পড়ত। সেই মুদ্রাপতন, মাধুরী সব আজ অতীত। শুধু মান্যতার চরিত্রে দিয়া মির্জা! সঞ্জয়ের প্রথম স্ত্রী রিচা শর্মা, তাঁদের মেয়ে ত্রিশলা বা দ্বিতীয় স্ত্রী রিয়া পিল্লাই কারও চরিত্রই নেই। সঞ্জুর দুই বোন, নম্রতা আর কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ার চরিত্রে যাঁরা, তাঁদের মুখে প্রায় কোনও সংলাপ নেই। ভাই-বোনের মন কষাকষিও আজ সর্বজনবিদিত। সমাজবাদী পার্টির ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরে সঞ্জয় বলেছিলেন, ‘‘এ বাড়িতে মিস্টার দত্ত, মিসেস দত্ত বলতে দু’জন। আমি আর মান্যতা।’’ ছবি জানাল, বাবাকে বাঁচানোর জন্য সঞ্জু মাত্র একটা ‘একে ৫৬’ রেখেছিলেন। বাকি দুটো ফেরত পাঠিয়েছিলেন। আদালতে কিন্তু সঞ্জয় জানিয়েছিলেন, তিনটে কালাশনিকভই তাঁর কাছে ছিল।
সঞ্জু পরিচালনা: রাজকুমার হিরানি অভিনয়: রণবীর, ভিকি, পরেশ, সোনম, অনুষ্কা, মনীষা, দিয়া ৮/১০
অতএব ছবির উদ্দেশ্য পরিষ্কার। নায়কের জীবনে ড্রাগ, জেল এবং ৩০৮ জন বান্ধবীর মতো বাছাই কিছু পর্ব। সেই সঙ্গে রাজকুমার হিরানির হিট ফর্মুলা। সার্কিট আর মুন্নাভাইয়ের মতো সঞ্জু আর কমলেশের (ভিকি কৌশল) বন্ধুত্ব, ‘লগে রহো মুন্নাভাই’-এর মতো এফএমের ব্যবহার। সঞ্জুকে সন্ত্রাসবাদী ভেবে নিউ ইয়র্কবাসী কমলেশ বারো বছর তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। জেলের এফএমে এক দিন সঞ্জু জানাল, সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তাকে রাজসাক্ষী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বাবার সম্মানের কথা ভেবে সে সেই প্রস্তাব নাকচ করে। সেটা শুনেই কমলেশের হাউহাউ কান্না। বাস্তবে সঞ্জয় দত্তের একটি আনঅফিশিয়াল জীবনী আছে। কিন্তু নায়ক সেটি স্বীকার করেন না। ছবির শুরুতে এক জন সঞ্জুর জীবনী লিখেছে। সঞ্জু তাকে দূর করে দেয়। অতঃপর সাংবাদিক, জীবনীকার হিসেবে অনুষ্কা শর্মার প্রবেশ। রাজু হিরানি তা হলে এই চিত্রনাট্যকেই সঞ্জয়ের অফিশিয়াল জীবনী বলতে চান! বেশ। ভিলেন হিসেবে মিডিয়াকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল। তারাই নাকি বিক্রির খাতিরে সঞ্জুকে সন্ত্রাসবাদী বানিয়েছে। আবার বলি, চমৎকার!
এত কিছু সত্ত্বেও বক্স অফিসে সম্ভবত এই ছবির মার নেই। কারণ, রণবীর কপূর এখানে নিছক অভিনয় করেননি। সঞ্জুর নির্মোকে গভীর গহন ভাবে প্রবিষ্ট হয়েছেন। দুই, ক্যানসার-আক্রান্ত নার্গিসের চরিত্রে মনীষা কৈরালা। আর আছেন সুনীল দত্তের চরিত্রে পরেশ রাওয়াল। একটি দৃশ্যে ভিকি কৌশল তাঁকে বলেন, ‘আপনি সঞ্জুকে বাঁচান। ও আপনাকে ভয় পায়। সব সময়ে ভাবে, আপনার মতো হতে হবে। সেই হতাশা থেকেই ড্রাগস আর মদ।’ পিতার ব্যক্তিত্বেই তো পুত্রের ট্র্যাজেডি। দেখতে দেখতে চোখে জল এসে গেল। পেশাদার রিভিউয়ারকে কাঁদতে নেই! কিন্তু হৃদয় তো আইন মানে না! রাজু হিরানিকে নয়, রণবীর আর পরেশের জন্য তাই জাদু কী ঝাপ্পি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy