Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ইতিহাসের অলিগলি ঢুঁড়ে রহস্যের তালাশ

বঙ্গজীবনের সবচেয়ে হিট দুটো রহস্যের কেন্দ্রেই ছিল মৃত্যু নিয়ে সংশয়— নেতাজি অন্তর্ধান আর সন্ন্যাসী রাজার প্রত্যাবর্তন।

সোমেশ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বঙ্গজীবনের সবচেয়ে হিট দুটো রহস্যের কেন্দ্রেই ছিল মৃত্যু নিয়ে সংশয়— নেতাজি অন্তর্ধান আর সন্ন্যাসী রাজার প্রত্যাবর্তন।

প্রথমটা নিয়ে কোনও জমকালো বাংলা ছবি এখনও হয়নি। ভাওয়াল সন্ন্যাসী নিয়ে এ পার বাংলায় প্রথম ছবি হয় ১৯৭৫ সনে, উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত ‘সন্ন্যাসী রাজা’। এ বার যিনি ফের চেষ্টা করলেন, সেই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের তখনও জন্মই হয়নি।

প্রথমেই বলে ফেলা যাক, এই ছবি ‘সন্ন্যাসী রাজা’র রিমেক নয়। পীযূষ বসুর পরিচালিত আগের ছবিটি ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলার জটিলতায় ঢোকার চেষ্টাই করেনি। বরং তা থেকে সরে ভাবাবেগ দিয়ে কাজ সারার চেষ্টা করেছিল। সৃজিত কিন্তু ছবির শুরুতেই জানিয়েছেন, দুই উকিলের (অপর্ণা সেন ও অঞ্জন দত্ত) চরিত্রে স্বাধীনতা নেওয়া ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই তিনি সত্য আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছেন।

এই সত্যের পরিধিটা বড় স্থানকাল জুড়ে ছড়ানো। ১৯০৯ সালের গ্রীষ্মে দার্জিলিঙে ভাওয়াল রাজবাড়ির মেজোকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায়ের ‘মৃত্যু’ এবং ‘সৎকার’ দিয়ে যে গল্পের সূত্রপাত, তা রহস্যে ঘনীভূত হয় বছর বারো পরে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাবে, যাঁকে রমেন্দ্রনারায়ণের বোন চিহ্নিত করেন তাঁর ‘মেজদা’ বলে। ঢাকা, কলকাতা হাইকোর্ট হয়ে লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিল পর্যন্ত সেই মামলা গড়ায়।

এক যে ছিল রাজা পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায় অভিনয়: যিশু, জয়া, অপর্ণা, অঞ্জন, রুদ্রনীল, অনির্বাণ ৬.৫/১০

এ ছবিতে অবিশ্যি নামগুলো ঈষৎ পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এবং নানা ছোটখাটো গোলমাল সত্ত্বেও চেষ্টাটা মন্দ হয়নি। যে ভূমিকায় উত্তমকুমার অভিনয় করে গিয়েছেন, তা তিনি যেমনই করে থাকুন, সেই চরিত্রে মুখ দেখানোর সবচেয়ে বড় ফাঁড়া হল পদে পদে তুলনা। সেই তুলনা সরিয়ে রেখে দেখলে যিশু কিন্তু উতরেই গিয়েছেন। নারী, সুরা ও শিকারে পারঙ্গম মেজোকুমারের চরিত্রায়নে যে এনার্জি থাকা জরুরি, তা পুরোপুরি না থাকা সত্ত্বেও। রাজকুমারের শ্যালকের ভূমিকায় অনির্বাণ ভট্টাচার্যও চোখ টানেন। রুদ্রনীল ঘোষও চেনা ছক ভেঙে বেশ অন্যধারা।

মেজোকুমারের স্ত্রীর ভূমিকায় রাজনন্দিনী পালের বিরাট কিছু করার জায়গা ছিল না। নাচ আর দু’একটা ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে যতটুকু সুযোগ শ্রীনন্দা শঙ্কর পেয়েছেন, মন্দ করেননি। চেনা অভিনয়ে ভাল অপর্ণা-অঞ্জনও। তবে চোখ জুড়িয়ে দিয়েছেন জয়া আহসান। কানও। ভারী স্বচ্ছন্দ তাঁর অভিনয় আর সহজাত ঢাকাইয়া টান। অবশ্য ছবির বেশির ভাগ সংলাপই ঢাকাইয়া বাঙাল ভাষায় হওয়ায়, জয়া তা কাজে লাগিয়েছেন।

বিশুদ্ধ কোর্টরুম ড্রামা বলতে যা বোঝায়, এই ছবি কিন্তু আদৌ তা নয়। বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত আবহ ও সঙ্গীত তার গতিকে ব্যাহতই করেছে বারবার। বিশেষ করে ‘মহারাজ এ কী সাজে’ গানের যে প্রয়োগ এ ছবিতে করা হয়েছে, তা বিরক্তিরই উদ্রেক করে। আবার রাজবাড়ির অন্দরসজ্জায় যে খুঁটিনাটি তৈরির চেষ্টা, আদালত কক্ষে সেই যত্নটা যেন নেই। চিত্রগ্রহণ এবং সম্পাদনাও যে ত্রুটিহীন, বলা যাবে না। আবার যে ছবিতে দার্জিলিংকে হাতে পেয়েও পরিচালক প্রয়োজনের বেশি পা বাড়ান না, তিনিই সমসময়কে ধরার চেষ্টায় বঙ্গভঙ্গ রোধের মিছিল থেকে দাঙ্গার শহরের ঝলক-দৃশ্য এমন ভাবে ধরেন, যা বেশ কৃত্রিমই লাগে। বারবার ভিড়ের দৃশ্যে কিছু লোক কেন পুতুলের মতো হাত-পা নাড়ে, তা-ও বোধগম্য হয় না।

তবু মেকআপ থেকে তথ্যনিষ্ঠা, চিত্রনাট্য ও সংলাপের কিছু মনকাড়া বাঁকবদলে এ ছবি আলোচনায় থাকবে অন্তত কিছু দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE