Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এ গল্প সমান হওয়ার

একটি শিশুর বড় হয়ে ওঠার মাঝে অনেক লড়াই থাকে। বড়দের আশা পূরণ করতে না পারা, নিজের স্বপ্ন মাঝপথে ফেলে রেখে বড়দের আজ্ঞা পালন করে জীবন নির্বাহ করার লড়াই। যা এই ছবিতেই বলবীর চৌধুরীর (অনিল কপূর) চরিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক।

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০০
Share: Save:

একটা সহজ সত্যি হল সমকামিতা। আর এই শব্দটিকে উদ্ধৃতিচিহ্নের গারদ থেকে মুক্তি দিয়েছে এই ছবি। এই সত্যিটাকে ফুটিয়ে তুলতে কোনও রকম ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেননি পরিচালক। বরং আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতোই এই সম্পর্কের ভিতও ভালবাসা। সুইটি (সোনম) যখন সাহিলের (রাজকুমার) সামনে তার প্রেমিকা কুহুর (রেজিনা) কথা বলছে, সেখানেও কোনও ধাক্কা নেই। বরং আছে এক যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণাই ছবিটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

একটি শিশুর বড় হয়ে ওঠার মাঝে অনেক লড়াই থাকে। বড়দের আশা পূরণ করতে না পারা, নিজের স্বপ্ন মাঝপথে ফেলে রেখে বড়দের আজ্ঞা পালন করে জীবন নির্বাহ করার লড়াই। যা এই ছবিতেই বলবীর চৌধুরীর (অনিল কপূর) চরিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। শৈশব থেকে শেফ হওয়ার স্বপ্নকে সরিয়ে রেখে পেশা হিসেবে বলবীর বেছে নেয় পোশাক তৈরির ব্যবসা। ছবির গল্প অনুযায়ী, যে সমাজে পৌরুষকে জাস্টিফাই করতে ছেলেরা শুধু গ্যাস পাল্টাতে রান্নাঘরে ঢোকে, রান্না করে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে। যেখানে সুইটির দাদাই তার গোটা অস্তিত্বকে অসুখ বলে দাগিয়ে দেয়। বোনকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে নিজের বন্ধুর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবে।

সেই সমাজে এক জন সমকামী মেয়ের লড়াই কতটা কঠিন! ছোটবেলা থেকে সে শুধু নিজের অস্তিত্বের সঙ্গে লড়াই করে চলে। এক স্কুলগার্লের তার প্রিয় বান্ধবীকে পছন্দ হলে বাকিরা কেন হাসে, সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তার আত্মবিশ্বাস। ক্রমশ সেই আত্মবিশ্বাস ভেঙে গুঁড়িয়ে যায় পারিবারিক মর্যাদা রক্ষার চাপে। দুই সমকামীর প্রেমের জয় শুধু নয়, তাদের সম্পর্কের পারিবারিক ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাই এই ছবির কেন্দ্রবিন্দু। সেখানেই ছবিটি জিতে যায়।

এক লড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লগা... পরিচালনা: শেলি চোপড়া ধর অভিনয়: অনিল, সোনম, রাজকুমার, জুহি ৫.৫/১০

তবে এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সোনমের আরও প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজের আড়ষ্টতা বারবার ধরা পড়ে, বিশেষত তাঁর পাশেই রেজিনার সাবলীল অভিনয়ে। রেজিনার চোখের চোরা চাহনি বা ঠোঁটের কোণের আলগা হাসিই সংলাপের কাজ করেছে। আগাগোড়া এই ছবি ধরে রেখেছেন অনিল কপূর ও রাজকুমার রাও। তাই হল থেকে বেরিয়ে এসেও চোখে ভেসে ওঠে তাঁদেরই মুখ। ছবির প্রথমার্ধের গতি বেশ শ্লথ। অহেতুক কিছু চরিত্রের ভিড়, যারা না থাকলেও হয়তো ছবির তেমন ক্ষতি হতো না। অনেক দিন বাদে জুহি চাওলাকে পাওয়া গেল অনিলের বিপরীতে। কিন্তু মনে রাখার মতো কোনও মুহূর্ত তৈরি হল না। ‘ইশ্ক মিঠা’ ও ‘এক লড়কি কো দেখা...’র মতো পুরনো হিট গানের আশ্রয় নিলেও ছবির মিউজ়িক তেমনভাবে মনে দাগ কাটতে পারে না। আর একটু যত্ন নিলে ছবির অতিনাটকীয় পরিণতিও হয়তো এড়ানো যেত।

ছবি জুড়ে এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে আছে নানান ত্রুটি-বিচ্যুতি। তবে ভুলত্রুটি থাকলেও এ ছবি আশার পথ দেখায়। অন্তত মূলধারার ছবিতে সমকামিতার মতো বিষয় তো উঠে এল। আর আমাদের দেশে এই ধরনের ছবি হওয়া কতটা জরুরি, তা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখলেই বোঝা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ek Ladki Ko Dekha Toh Aisa Laga Movie Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE