Advertisement
E-Paper

তিন ইয়ারি

পর্দায় কখনও গোয়েন্দা, কখনও সন্দেহভাজন। কখনও বা স্রেফ সহ অভিনেতা। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তপর্দায় কখনও গোয়েন্দা, কখনও সন্দেহভাজন। কখনও বা স্রেফ সহ অভিনেতা। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায় ও ঋত্বিক চক্রবর্তী। পত্রিকার সামনে অকপট তিন অভিনেতা।

ছবি: কৌশিক সরকার

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

দীর্ঘতম চুম্বন এবং

আবির: আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখার ভক্ত। প্রথম ছবিটার কথা শুনে পরিচালককে গল্প থেকে আমার চরিত্র নিয়ে গড়গড় করে বলেছিলাম— ‘দীর্ঘতম চুম্বন... মিঠু মিত্র... ব্যাঙ্কে চাকরি করে...?’ অরিন্দম শীল মাথা নাড়ে। কিন্তু চিত্রনাট্য পড়ে মনে হয়েছিল, শীর্ষেন্দুবাবুর গল্পটা একটা লাভ স্টোরি থেকে থ্রিলারের দিকে যায়। আর চিত্রনাট্য থ্রিলার থেকে লাভ স্টোরি হয়ে যায়। তবে ছবিটা বেশ ওয়েল মেড। খটকা একটাই। সেন্সর বোর্ড কাঁচি চালিয়েছে আমার ওই ‘দীর্ঘতম চুম্বন’য়ে। ছবির শেষ দিকে পায়েল আর আমার দু’টো চুম্বনদৃশ্য ছিল। পায়েলের সঙ্গে এটা আমার চতুর্থ ছবি। চুম্বনের শ্যুটিংটা খুব স্মুথলি হয়েছিল। ওয়ান টেক ওকে ছিল। কিন্তু প্রিমিয়ারে দেখলাম সে দু’টো চুম্বন নেই! সেন্সর বোর্ডের কী ভণ্ডামি! সে দিন শুনলাম একটা মুভির জন্য বলা হয়েছে পাঁচবার ‘ফা*’ বলা যাবে না। তিনবার পর্যন্ত ছাড় আছে!


শাশ্বত: বব বিশ্বাসের থেকে অনেক বেশি কঠিন শবর দাশগুপ্তের চরিত্রে অভিনয় করাটা। দর্শক জানে আমার মুখটা খুব এক্সপ্রেসিভ। কিন্তু অরিন্দমের শ্যেন দৃষ্টি ছিল যেন আমি পাথরের মতো অভিব্যক্তিহীন মুখে অভিনয় করে যাই। প্রথম যখন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানতে পারেন যে আমি শবরের চরিত্রে অভিনয় করব, তখন উনি নাকি বলেছিলেন, ‘অ্যাক্টিং নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। কিন্তু চেহারা একটু ঠিক করতে হবে!’ আমার ওঁর সঙ্গে ‘সেরা বাঙালি’ অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। তখন ওকে বলেছিলাম, ‘এটুকুু বিশ্বাস আমার আছে যে, আমি শবরের কাছাকাছি যাব।’ দশ কেজি ওজনও কমিয়েছিলাম। ডামি ছাড়াই স্টান্টস করেছি।


ঋত্বিক: ছবিতে আমার করা পান্তু হালদারের চরিত্রের লেংথ কম। কিন্তু জোরালো। তার কিছু শারীরিক অসুবিধা আছে। আমার চেহারার মধ্যে একটা পুরুষালি ভাব আনতে চেয়েছিলাম। তাই কাজের মধ্যে এমন প্ল্যান করেছিলাম যাতে চুল-দাড়ি গেট আপ ঠিক থাকে।


শবর বনাম ব্যোমকেশ-ফেলুদা

শাশ্বত: শবরের মার্কেটিং সে ভাবে করা হয়নি। সত্যজিৎ রায় পরিচালনার সঙ্গে লেখক হিসেবে ফেলুদাকে ঘরে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। আমার ধারণা ছবিটার পর শবরের জনপ্রিয়তা বাড়বে।


ঋত্বিক: শবর খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু ফেলুদা বা ব্যোমকেশ নয়। তার একটা কারণ হতে পারে যে শবরের গল্পের সংখ্যা কম। কিন্তু ব্যোমকেশ ফেলুদা বাঙালির শৈশবের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। শবর সাধারণ গোয়েন্দা নয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিস। ওর ক্রাইমকে দেখার চোখটাই আলাদা। আমার ধারণা এই ছবি শবরকে আরও অনেক পাঠকের বাড়িতে পৌঁছে দেবে।


আবির: ব্যোমকেশ, ফেলুদার সঙ্গে তুলনা নয়। শবরকে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি দেখা উচিত।

প্রতিযোগিতা হয়, কাবাডি খেলা নয়

শাশ্বত: বহু বছর আগে একটা হিন্দি সিরিয়াল করেছিলাম। তখন সবে তোপসে হিসেবে অভিনয় করেছি। সেখানে এক অভিনেতা আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি শুভেন্দুর ছেলে? আজ এই দৃশ্যে তোমায় খাব।’ উত্তরে বলেছিলাম, ‘খাবেন। হজম করতে পারবেন তো?’ সিনেমা হল কালেকটিভ আর্ট। এই ছবিতে আবির, ঋত্বিক, রাহুল— সকলেই একলা ছবি টানতে পারে। কিন্তু কী সুন্দর একসঙ্গে অভিনয় করেছে। স্বস্তিকা অনবদ্য।


ঋত্বিক: আমি যদি বুঝতে পারি এই দৃশ্যে আমার কিছু করার আছে, তখন সেটা আমি করবই। কিন্তু যদি দেখি একটা দৃশ্য আমার নয়, সেখানে শুধুমাত্র যেটা করার আমি সেটাই করি। কাবাডি খেলে অন্যকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা করি না। ‘এবার শবর’য়ে মাত্র একটা দৃশ্য আছে আবিরের সঙ্গে। বাকিটা অপুদার সঙ্গে। জানি এক্সপ্রেশন না দেখিয়ে অভিনয় করাটা কী কঠিন।

আবির: সহ-অভিনেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। সেটা থাকাই উচিত। হয় না বললে সেটা ডিপ্লোম্যাটিক্যালি বলা হবে। কিন্তু পাশে একজন ভাল অভিনেতা থাকলে কাজটা বেটার হয়। অপুদা পাশে থাকলে সারাক্ষণ মনে হয় নিজের অভিনয়টা খারাপ হচ্ছে না তো? সঠিক ভাবে সিন বুঝে অভিনয় করতে পারাটাও জরুরি। শুধুমাত্র হাততালি কুড়নোর জন্য অভিনয় করাটা সঠিক অভিনয় নয়। নিঃশব্দে প্রায় কিছু না করেও যে অভিনয় করা যায়, সেটা আমি ব্যোমকেশে অজিতের ভূমিকায় অপুদার অভিনয় থেকেই শিখেছি। শবর হিসেবে অপুদা একদম অন্য রকম। ব্যোমকেশ, ফেলুদা, কাকাবাবুর মতো নেশায় গোয়েন্দা নয় শবর। পুলিশে চাকরি করে ও। ক্রাইম দেখে দেখে চোখ সয়ে গিয়েছে। তাই ও এক্সপ্রেশনলেস। রেস্ট্রিকশনের মধ্যেও অপুদা কী ভাল অভিনয় করেছে।



এর পর কে?

আবির: সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) আর আমি ইয়ার্কি করি যে, পঁয়তাল্লিশের পর আমরা কিরীটী করার কথা ভাবব। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মহিলা গোয়েন্দা নিয়ে একটা থ্রিলার দেখতে চাই।


শাশ্বত: স্বপনকুমারের কোনও গল্প নিয়ে যদি ছবি করা যায় তা হলে বেশ হবে। একটা কালো গাড়ি থেকে কালো কোট পরে এক জন নামলেন... কী বর্ণনা!


ঋত্বিক: বাংলা পাল্প ফিকশনে যে গোয়েন্দা সিরিজ আছে সেগুলো বড় পর্দায় দেখতে চাই।

শুধুই কি গোয়েন্দা?

শাশ্বত: এখন শবর করে যেতে চাই। তবে ভাবতে ইচ্ছে করে ঋত্বিককে শবর হিসেবে কাস্ট করলে কেমন হবে। তৃতীয় ব্যোমকেশ দেখে বুঝলাম আবিরের এটাই সেরা ব্যোমকেশ। প্রিমিয়ারের পরে আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বেস্ট ব্যোমকেশটা করার পর আর যে তুই করবি না তাতে মন খারাপ হচ্ছে না? সেটা শুনে ওর চোখটা লাল হয়ে গিয়েছিল।


ঋত্বিক: ফেলুদা করাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। হাইটে মার খেয়ে গিয়েছি। কিন্তু ব্যোমকেশ চরিত্রটা করার ইচ্ছে আছে। ব্যোমকেশ অনেক বেশি বয়স অবধি গোয়েন্দাগিরি করেছে। তাই আমার হাতে সময়ও আছে।


আবির: ব্যোমকেশ করব না বলে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, তবে এটাই ভাল যে এমন একটা সময়ে ছাড়লাম যখন ব্যোমকেশ হিসেবে আমার অভিনয় ভাল লাগছে সব্বার। যাকে বলে রিটায়ারিং ফ্রম ব্যোমকেশ অন আ হাই। ফেলুদা ছাড়া আর কোনও গোয়েন্দা করার কথা আপাতত ভাবছি না। একটা আদ্যোপান্ত প্রেমের ছবি করতে চাই। হাল্কা চালের কমেডি করতে চাই।

আনাচে কানাচে

আ জা মেরি ট্যাক্সি মে বয়েঠ যা...: প্রিন্সেপ ঘাটে অভিজিৎ। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

চশমে বদ্দুর: প্রোমো শ্যুটে ফারহা খান।

priyanka dasgupta abir saswata writwik
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy