‘শ্রীমতী ভয়ঙ্করী’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’র দৃশ্য।
এখন থেকে ফের জীবন্ত হয়ে হেঁটে চলে বেড়াবে বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণভাণ্ডারের চরিত্রেরা। জীবনের চলার পথে তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, স্বপ্ন-প্রেম-আনন্দ-বিরহ, জয়-পরাজয়ের সাক্ষী থেকে সেই সনাতন ধ্রুপদী বিনোদনের রসে ফের ডুব দেবেন বাঙালি দর্শকেরা। ঘরে ঘরে চায়ের আড্ডা জমে যাবে সাহিত্যের আলোচনায়।
আকাশ আট ফিরিয়ে আনছে এক সময়ের বিপুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ধারাবাহিক ‘সাহিত্যের সেরা সময়’কে। মনে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘শেষের কবিতা’ বা শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’, ‘রামের সুমতি’, ‘অরক্ষণীয়া’র মতো চিরকালীন সাহিত্যের চিত্ররূপ তৈরি করেছিল চ্যানেল এইট?
এখন থেকে সোম-শনি সন্ধ্যা ৭টা বাজলেই আকাশ-৮-এর ছোট পর্দায় দর্শকেরা মজে যাবেন বাংলা সাহিত্য জগত্ থেকে তুলে আনা এক-একটি মণিমাণিক্য সমান কাহিনিতে। কখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুক্তির উপায়’ কখনও নীহারঞ্জন গুপ্তের ‘সন্ধ্যামালতী’ বা ‘তোমাকে নমস্কার’।
ছোট পর্দায় টিআরপি নির্ভর ‘দাদাগিরি’, ‘দিদি নম্বর ওয়ান’, ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এর মতো রিয়্যালিটি শো-র দাপাদাপির পাশে ‘ইষ্টিকুটুম’, ‘রাশি’, ‘জলনুপূর’ বা ‘দত্তবাড়ির ছোটবৌ’-এর মতো আধুনিক ধারাবাহিকের দাপটের সঙ্গে টিআরপি-র লড়াইয়ে কতটা সফল হবে ‘সাহিত্যের সেরা সময়’?
“বহু দর্শক আমাদের ফোন করে সাহিত্যের সেরা সময় ফিরিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করেছেন। এখানে আমরা নতুন-পুরনো সব ধরনের সাহিত্যিকের কাহিনিই রাখছি”, জানালেন চ্যানেলের প্রযোজক ঈশিতা সুরানা।
তাঁর কথায়, পরবর্তী কালে এই সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রবীন্দ্রনাথ-শরত্চন্দ্রের পাশপাশি যোগ হবে বাণী বসু বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনিও।
এই প্রজন্মের পছন্দের সঙ্গে তাল রেখে টিআরপি-র লড়াইয়ে টিকতে পারবে মূলত সাহিত্য-নির্ভর এই সিরিজ?
‘হ্যাঁ পারবে”, নিশ্চিত অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়। “একটা সময় আমার বেসামাল কেরিয়ারের পালে বসন্তের হাওয়া দিয়েছিল দূরদর্শনের পর্দায় ‘নীলাঙ্গুরীয়’ বা ‘লৌহকপাট’-এর মতো সিরিয়াল।”
“আসলে বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণভাণ্ডার অসাধারণ। সেই সোনার সামান্যই আমরা ব্যবহার করেছি ধারাবাহিকে। তা ছাড়া বাংলা সাহিত্য পড়ার মতো সময়ই বা কোথায় এই প্রজন্মের?” মন্তব্য করলেন অরিন্দম।
দীর্ঘ দিন ধরে একটানা এক-একটি ধারাবাহিক দেখতে দেখতে একঘেয়েমি এসে গিয়েছে দর্শকদের মধ্যে। সাত দিনে শেষ হয়ে যাওয়া ‘সাহিত্যের সেরা সময়’ বরং দর্শকদের ভালই লাগবে, এমনই মত অরিন্দমের।
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক শুরু হচ্ছে গৌতম রায়ের ‘শ্রীমতী ভয়ঙ্করী’ কাহিনি অবলম্বনে। পরিচালক জন আশাবাদী।
“সবাই বলে বাঙালির মননে, চিন্তায়-হৃদয়ে এবং সমাজে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু ‘সাহিত্যের সেরা সময়’-এর কোনও বিকল্প নেই। যেমন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন, আছেন, থাকবেন,” মন্তব্য করেন জন। পোড় খাওয়া পরিচালকের মতে, ‘ইষ্টিকুটুম’ বা ‘জলনুপূর’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকের যেমন নিজস্ব দর্শক আছে, সাহিত্য-নির্ভর সাপ্তাহিক দেখার জন্য মুখিয়ে থাকা দর্শকের সংখ্যাও কম নয়। তাঁর মতে ‘নায়ক’ বা ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মতো সাদাকালো ছবির মাধুর্যই যেমন আলাদা!
কীসের জোরে বলছেন, ‘সাহিত্য-নির্ভর ধারাবাহিক’ চলবেই? জনের মতে, ছকে বাঁধা, চাকচিক্যের মোড়কে যে-সব ধারাবাহিকে দর্শকেরা মজে থাকেন, তাঁরাও সাহিত্যনির্ভর কাহিনি দেখেন। “বাঙালির রুচি বদলেছে। কিন্তু সাহিত্য প্রীতি বদলায়নি।”
‘শ্রীমতী ভয়ঙ্করী’র পরে দেখানো হবে নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘সন্ধ্যামালতী’। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুক্তির উপায়’। পরিচালকের তালিকায় জন ছাড়াও থাকছেন দেবীদাস ভট্টাচার্য, সৌভিক মিত্র, মণীশ ঘোষ, মানস শেঠ, অংশুমান প্রত্যুষ প্রমুখ।
‘সাহিত্যের সেরা সময়’-এ অভিনয় করেই আজকে নিজেদের জায়গা
করে নিয়েছেন পাওলি, কনীনিকা বা অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীরা। এ বারও তাঁরা সুযোগ দেবেন নতুনদের। “কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য আমরা বেছে নেব
সুযোগ্য অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের,” জানালেন তিনি।
আনাচে কানাচে
দুই নারী...: সোহিনী দাশগুপ্ত-র হিন্দি ছবি ‘সুইট হোম’য়ের জন্য ভায়োলিন শিখছেন তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। সেই ক্লাসের পরে পরিচালকের সঙ্গে অভিনেত্রী। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy