Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্ব অটিজ়ম দিবস

নিকুম্ভ স্যারকে খুঁজছে জেলার ঈশানেরা

‘তারে জমিন পর’-এর ঈশান বা নিকুম্ভ স্যরেরা নেহাতই কল্পচরিত্র।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তারাশঙ্কর গুপ্ত 
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ১১:০৬
Share: Save:

রয়েছে ‘ঈশান আওয়াস্থি’রা। নেই ‘নিকুম্ভ স্যর’। অনাদরে অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে ঈশানের মতো খুদে তারা-রা।

আমির খানের আলোড়ন ফেলে দেওয়া ‘তারে জমিন পর’ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছিল, ‘ডিসলেকশিয়ায়’ আক্রান্ত বালক ঈশানকে ‘ফর্মাল’ স্কুল থেকে সরিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের ‘স্পেশাল স্কুলে’ পাঠাতে চাইছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু তা কিছুতেই হতে দেবেন না স্কুলের অঙ্কন শিক্ষক নিকুম্ভ স্যর। নাছোড়বান্দা নিকুম্ভ স্যরের যুক্তি, অন্য পড়ুয়াদের মতো ফর্মাল স্কুলে পড়ার অধিকার রয়েছে ঈশানের। দিশা ঠিক রেখে ঘষামাজা করলে সে-ও একদিন লেখাপড়ায় তাক লাগিয়ে দিতে পারে। অতঃপর নিকুম্ভ স্যরের পরিচর্চায় বেড়ে ওঠা ঈশান সত্যিই একদিন তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো রেজাল্ট করেছিল।

‘তারে জমিন পর’-এর ঈশান বা নিকুম্ভ স্যরেরা নেহাতই কল্পচরিত্র। বাস্তব বলছে, নিকুম্ভ স্যরের মতো স্পেশাল এডুকেটরের বড়ই আকাল সরকারি স্কুলে। তাই নেহাতই অযত্নে বেড়ে উঠতে হচ্ছে বাস্তবের ঈশানদের। মঙ্গলবার বিশ্ব ‘অটিজ়ম’ দিবসে নিকুম্ভ স্যরের অভাব অনুভব করছে পড়ুয়ারা।

পাত্রসায়রের প্রায় কোনও সরকারি স্কুলেই নেই স্পেশাল এডুকেটর। সেখানে পাঠরত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা পিছিয়ে পড়ছে। ‘অটিজ়মে’ আক্রান্ত এমনই এক খুদে পড়ুয়ার কথা বলতে গিয়ে পাত্রসায়রের এক স্কুলশিক্ষক জানান, পড়ানোর সময় শূণ্যদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ছাত্রটি। প্রশ্ন করলেই সিঁটিয়ে যায়। বই চিনতে পারে না। ওর বিকাশের জন্য প্রয়োজন স্পেশাল এডুকেটর। কিন্তু তাঁদের স্কুলে এমন শিক্ষক নেই। তিনি বলেন, ‘‘ওই পড়ুয়ার বাবা পাঁপড় বিক্রেতা। তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি জানান, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলের বুদ্ধির বিকাশ হয়নি। কিন্তু ছেলেকে বিশেষ স্কুলে পড়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতিও নেই ওই পাঁপড় বিক্রেতার।’’

ব্লক প্রশসান সূত্রের খবর, ‘স্পেশাল এডুকেটর’ হওয়ার জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, তা অনেক শিক্ষকেরই নেই। ইন্দাস ব্লকের সমগ্র শিক্ষা মিশনের স্পেশাল এডুকেটর চন্দনকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘এখন বিশেষ শিশুদের আলাদা করে রাখলে চলবে না। ওদের স্বাভাবিক পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সরকার সেই পরিকল্পনা নিয়েছে।’’ কিন্তু স্পেশাল এডুকেটর ছাড়া কী করে তা সম্ভব? তাঁর উত্তর, ‘‘প্রতিটি স্কুলে স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ হলে ভালো হয়।’’ বাঁকুড়া জেলায় বিশেষ স্কুলের সংখ্যা মাত্র দুই। তাই সাধারণ স্কুলগুলিই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ভরসা।

বড়জোড়ায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের একটি স্কুল চালাচ্ছেন সোমা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই শিশুদের কেউ অটিজ়ম বা ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত। কারো আবার শোনার বা দেখার অসুবিধা রয়েছে। সবাইকে এক রকম ভাবে দেখলে হবে না। স্পেশাল এডুকেটরদের হাতে পড়লে তারাও ঈশানের মতোই সফল হতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবক মেনে নিতে চান না যে তাঁদের বাচ্চার ওই ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাঁরা বিশেষ স্কুলে পাঠাতে চান না সন্তানদের।’’ অটিজ়মে আক্রান্ত এক শিশুর বাবা আলোকময় দত্ত বলেন, ‘‘ইন্দাস, পাত্রসায়র, সোনামুখী, বড়জোড়া, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটিতে কোনও সরকারি উদ্যোগে বিশেষ স্কুল নেই। কিছু দিন সাধারণ স্কুলে পাঠিয়েছিলাম সন্তানকে। কিন্তু অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সেখানে নিকুম্ভ স্যরের মতো কেউ নেই।’’

সত্যি, নিকুম্ভ স্যরদের বড়ই অভাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Autism Patrasayer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE