Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩
Coronavirus Lockdown

দিনভর টানাপড়েন, আজ থেকে শুরু হচ্ছে না বাংলা ধারাবাহিকের শুটিং

বর্তমানের অচলবস্থা কাটিয়ে নতুন এপিসোড সম্প্রচার করতে জল গড়াতে পারে পুজো অবধি।

টলিপাড়ার এই দৃশ্য কবে দেখা যাবে কেউ জানে না। মঙ্গলবার থেকে  নতুন করে শুরু হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।—ফাইল চিত্র।

টলিপাড়ার এই দৃশ্য কবে দেখা যাবে কেউ জানে না। মঙ্গলবার থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

আশঙ্কাই সত্যি হল অবশেষে। টলিপাড়ায় আপাতত বন্ধ হয়ে গেল ধারাবাহিকের শুটিং। কথা ছিল বহু প্রতীক্ষিত এই শুটিং শুরু হবে বুধবার অর্থাৎ ১০ জুন। কিন্তু ঠিক একদিন আগে গোটা মঙ্গলবার দিনভর মিটিং-বৈঠক এবং নাটকের পরে গভীর রাতে নতুন করে অচলাবস্থা তৈরি হল সিনে পাড়ায়।

Advertisement

আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত শিল্পীদের করোনা সংক্রান্ত বিমার কাগজ তাঁরা হাতে পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও শিল্পী শুটিংয়ে অংশ নেবেন না। বুধবারের পরিবর্তে তা হলে কবে থেকে শুটিং শুরু হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে এক ঘোর অনিশ্চয়তা।

ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, আচমকাই শেষ মুহূর্তে এ রকম একটা সিদ্ধান্তে বিভিন্ন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বেজায় চটেছে ফোরামের উপর। স্টুডিয়ো স্যানিটাইজ করা শেষ, আর্টিস্টরাও কলটাইম পেয়ে গিয়েছেন, তা সত্ত্বেও হঠাৎ করে এমন একটা সিদ্ধান্ত কেন নিল ফোরাম তা নিয়ে খাপ্পা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। ঘনিষ্ঠ মহলে তারা জানিয়েছেন, পূর্বনির্ধারিত সময় অর্থাৎ ১৫ জুনের মধ্যে যদি ধারাবাহিকের নতুন এপিসোড দেখানো না যায় তা হলে সেক্ষেত্রে ডাব করা ধারাবাহিক সম্প্রচারের দিকেই হাঁটবে চ্যানেলগুলি। তবে আশঙ্কা, বর্তমানের অচলবস্থা কাটিয়ে নতুন এপিসোড সম্প্রচার করতে জল গড়াতে পারে পুজো অবধি।

আরও পড়ুন: রণং দেহি, যুদ্ধং দেহি

Advertisement

কিন্তু ডাব সিরিয়াল মানে তো পরোক্ষে ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি। চ্যানেলগুলির দাবি, এই আড়াই মাসের সময়ে ইতিমধ্যেই যেহেতু বিরাট অঙ্কের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তাই আর অপেক্ষা করা সম্ভব হবে না তাঁদের পক্ষে। সুতরাং গত এক সপ্তাহ ধরে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, নানা মিটিং সব আপাতত বিশ বাঁও জলে। আবারও লকডাউন টলিপাড়ায়। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা হাজার হাজার জুনিয়র টেকনিশিয়ানদের ভবিষ্যৎও একই সঙ্গে প্রশ্নের মুখে।

কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল ফোরাম? ৪ জুন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে যে বৈঠকে স্থির হয়, শিল্পীদের করোনা সংক্রান্ত বিমায় ৫০% দেবে সরকার, প্রযোজনা সংস্থা দেবে ৪০% এবং ১০% দেবে ফোরাম। মৌখিক স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ফোরামের অভিযোগ এ নিয়ে লিখিত কিছু পাননি তাঁরা। এ বার এখানে প্রশ্ন, বিমার কাগজের কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগে বেশ কিছু দিন। এত জন শিল্পী, তাঁদের কারা কারাই বা বিমায় আওতায় পড়বেন, তা হিসেবের কাজটাও সময়সাপেক্ষ। ফোরামের পাল্টা যুক্তি, যত দিন না লিখিত কোনও কাগজ আসছে তার মধ্যে যদি কোনও আর্টিস্ট করোনা হয়ে মারা যান সে ক্ষেত্রে তিনি যে বিমার অন্তর্ভুক্ত হবেন সে বিষয়ে নিশ্চয়তা কী?

আরও পড়ুন: জে কে রাওলিংয়ের বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে মুখ খুললেন ড্যানিয়েল র্যা ডক্লিফ

চিত্রনাট্যকার এবং প্রযোজক, লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, "এটাই যদি শর্ত ছিল কাগজ হাতে না পেলে ফ্লোরে কেউ আসবেন না, তা হলে সেটা প্রথম মিটিংয়েই কেন পরিষ্কার করে বলল না ফোরাম? চ্যানেল প্রথম অবস্থাতেই শিল্পীদের বলেছিল নিজেরা বিমা করিয়ে নিক। টাকা চ্যানেল এবং প্রযোজক দেবে। কিন্তু তাঁরা সে দায়িত্ব নেননি। যেহেতু বিমার কাজ শেষ করতে ১০/১৫ দিন সময় লাগে সে ক্ষেত্রে সময় তো দিতেই হবে কিছু দিন।"

শোনা যাচ্ছে, চ্যানেল, প্রযোজক এবং ফেডারেশনের আগামিকাল থেকে শুটিং শুরুর করার সম্পূর্ণ ইচ্ছে থাকলেও শুধুমাত্র ফোরামের 'ইচ্ছাকৃত' আপত্তির জন্যই শুট করতে পারছেন না বলেই জানিয়েছেন, প্রোডিউসারস গিল্ড। আর যাঁদের নিয়ে এত চিন্তা সেই শিল্পীরা কী বলছেন? তাঁরা কি আর্টিস্ট ফোরামের এই সিদ্ধান্তে খুশি? কাজে ফেরার ইচ্ছে না নিজের সুরক্ষা... কী নিয়ে ভাবিত তাঁরা? লীনা যেমন বলছিলেন, "অনেক শিল্পীই আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে মেসেজে বলেছে তাঁরা শুটিংয়ে আসতে ইচ্ছুক। কিন্তু ফোরামের নির্দেশ অমান্য করা তাঁদের পক্ষে আসা সম্ভব নয়।"

তবে ফোরামের সিদ্ধান্তে সহমতও প্রকাশ করেছেন কোনও কোনও শিল্পী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টলিপাড়ার এক শিল্পী যেমন বললেন, "এর আগেও টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। লিখিত কিছু ছিল না বলে ফোরাম বিপদে পড়েছিল। তাই এ বারেও যে পরে কথার খেলাপ হবে না, তার কী নিশ্চয়তা?"

সবই তো হল। দর্শকেরা? তাঁরা যে মুখিয়ে আছেন ১৫ জুনের দিকে। "অত্যন্ত দুঃখজনক। যে কথা দিয়েছিলাম সেই কথা রাখতে পারলাম না। প্রিয় দর্শকদের কাছে ফেস লস হল আমাদের", বললেন লীনা।

যে মুহূর্তে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল গোটা টেলি ইন্ডাস্ট্রি, সেই মুহূর্তেই একটা বিশাল বড় ধাক্কা। ফোরাম বনাম বাকি সংগঠনের মতানৈক্যের পর্দা আবারও বেআব্রু হয়ে পড়ল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.