‘উমা’র একটি দৃশ্যে সারা। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।
সন্ধে নামছে তখন। তবে কোনও তা়ড়া নেই। সন্ধের গড়িমসি ভরপুর। অফিস ফেরতা মেট্রো ছুট রয়েছে। গরম তেল থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে হলুদ আলোর সামিয়ানায় আলুর চপ, বেগুনিদের বারকোষে গুছিয়ে বসা রয়েছে। ঠিক তখনই শোভাবাজার রাজবাড়িতে বেজে উঠল অনেক ঢাক। ধুনুচি নাচের ছন্দ যোগ্য সঙ্গত করল তাকে।
এ চত্বরে আসা হয় বছরে একবারই। আশ্বিনে। সন্ধি পুজোর আরতি দেখতে হোক বা অষ্টমীর অঞ্জলি। যে বছর যেমন সুযোগ মেলে। কিন্তু এপ্রিলের শেষ শনিবার হঠাত্ রাজবাড়িতে ঢাকের বোল কেন?
কারণ ‘উমা’ আসছে। আসছে আশ্বিনের বেশ খানিকটা আগেই। আর এই অকালবোধনের কারিগর পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন, ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’র আসল গুপ্তধন কী জানেন?
তখন সন্ধ্যা ছ’টা বেজে ১০ মিনিট। ‘শুভ মহালয়া’। সাজানো স্টেজে উঠে মাইক নিয়ে বললেন সৃজিত। ঠিক তখনই রাজবাড়িতে শুরু হল সন্ধ্যা-আরতি। কাঁসর-ঘণ্টার যুগলবন্দি। সৃজিত মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। অপেক্ষা করলেন। আরতি শেষে ফের ফিরে গেলেন মঞ্চে। আলাপ করিয়ে দিলেন অকালবোধনের ‘উমা’র সঙ্গে। তাঁর ‘উমা’র সঙ্গে। সে ‘উমা’ সারা। সারা সেনগুপ্ত।
আগামী ১ জুন মুক্তি পাবে ‘উমা’। আর সেখানেই দেখা মিলবে সারার। স্কুল-পড়ুয়ার এটাই ডেবিউ ছবি। সৃজিত তাঁর কাছে আঙ্কল নন, শুধু সৃজিত। আর ডেবিউতেই বাবার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করছে মেয়ে। বাবা অর্থাত্ অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত।
ট্রেলার লঞ্চে বাপ-বেটি।
এ দিন এত আয়োজনের কারণ ‘উমা’র ট্রেলার রিলিজ। সেখানে সারাকে দেখে মুগ্ধ দর্শকদের একটা বড় অংশ। ছবি কেমন হবে সে তো সময় বিচার করবে। তবে তার আগেই সারল্য, মনকেমনের মিশেলে এই খুদেকে ‘উমা’র চরিত্রে কাস্ট করাটা সৃজিতের মুন্সিয়ানাকে আরও একবার প্রমাণ করল। সৃজিতের কথায়, ‘‘অটোগ্রাফের প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর যদি কারও জন্য ভেবে আমি চরিত্র লিখে থাকি সে হল সারা। ওকে ছাড়া ‘উমা’ হত না।’’
আরও পড়ুন, প্রেম নিয়ে কথা বলা কি ইশার বারণ?
সারার ‘উমা’ হয়ে ওঠার গল্পটা কেমন? যিশু শেয়ার করলেন, ‘‘একদিন রাত সাড়ে বারোটার সময় আমাদের বাড়িতে গিয়েছে সৃজিত। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আর নীলাঞ্জনা ঘুমতে যাব। ও গিয়ে আমাদের খাটের ঠিক মাঝখানে বসে পড়ল। আমাদের বলল, সারাকে দরকার ‘উমা’র জন্য। সে দিনই হঠাত্ সারা ঘুম থেকে উঠে এসেছিল। সৃজিত তখন ওকে পাঁচ মিনিটে গল্পটা ব্রিফ করে। সারা সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, ইয়া, আই অ্যাম ডুয়িং ইট।’’
সিনে পর্দায় এ মেয়ের হাতে সময় খুব কম। জটিল রোগে আক্রান্ত সে। তার শেষ ইচ্ছে কলকাতার দুর্গাপুজো দেখবে। বাবা ইচ্ছেপূরণের দায়িত্ব নেন। পুজোর আগেই কলকাতায় দুর্গাপুজোর স্বাদ এনে দিতে চান। আর এ কাজে সাহায্যের জন্য পাশে পেয়ে যান অনেককেই। যিশু এবং সারা ছাড়াও অঞ্জন দত্ত, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, সুজন মুখোপাধ্যায় প্রমুখের অভিনয়ে সমৃদ্ধ এই ছবি। তবে অসুর ছা়ড়া কি আর দুর্গাপুজো হয়? সেই অসুর অর্থাত্ নেগেটিভ চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এ ছাড়া একেবারে অন্য লুকে দেখা যাবে বাবুল সুপ্রিয়কে।
ট্রেলার লঞ্চে সায়ন্তিকার সঙ্গে সারা।
সারা এই ছবির সেই ম্যাজিক বক্স। যাকে ছুঁয়ে গেলেন সকলেই। রুদ্রনীল ঘোষ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো অভিনেতা অথবা চিত্রগ্রাহক সৌমিক হালদার, কস্টিউম ডিজাইনার সাবর্ণী দাস— সকলেই স্বীকার করলেন, সারা অভিনয় করেনি। রিঅ্যাক্ট করেছে। নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত জানালেন, তাঁর নতুন পরিচিতির কথা। অভিনেত্রী, যিশু সেনগুপ্তের স্ত্রী, অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিকের মেয়ে ছাড়াও এখন থেকে তিনি সারার মা হিসেবেও পরিচিত হবেন। আনন্দ, খুশির মুহূর্তরা তখন চোখে চিকচিক করছে। যিশুর কথায়, “আমার রিলিজের আগে কোনও টেনশন হয় না। এ বার হচ্ছে। সারার জন্য।’’
আরও পড়ুন, পুরনো প্রেম থেকে কী শিখলেন ইমন?
আর সারা দিল, বন্ধু পাওয়ার খবর। এ ছবিতে তার প্রাপ্তি বন্ধুমহল। অভিনয় করতে এসে অনেক বন্ধু পেয়েছে মেয়ে। বক্স অফিসের জটিল হিসেব, সমালোচকদের বাঁকা মন্তব্য এ শৈশবের কাছে নতজানু হতে বাধ্য।
লাল পাড়ের শাড়িতে সে দৌড়ে আসছে, পিছনে সাদা পাঞ্জাবিতে বাবা। ঠিক আর কতটা সময় আছে ওর হাতে? ঠিক আর কত ঘণ্টা ও পৃথিবীতে থাকতে পারবে? ঠিক আর কতটা মুহূর্ত ‘উমা’কে কাছে পাবেন বাবা?... মনখারাপিয়া সুর বসত করে ট্রেলারের আনাচে-কানাচে।
নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy