শাহিদার (অভিনেত্রীর মেয়ে) তো মাত্র ১৫ মাস বয়স। এর মধ্যেই মা তো বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তা বটে। লম্বা ছুটির পর ওর ১০ মাস বয়সে প্রথম শুট শুরু করি ‘৬১ নম্বর গড়পাড় লেন’ দিয়ে। ভাড়াটে উচ্ছেদের গল্প। ছবিটা সদ্য মুক্তি পেয়েছে।
আবার ভাড়াটে?
মানে?
মানে সেই সাবঅলটার্ন, ডিগ্ল্যামারাইজ চরিত্র। এ ছাড়া আপনাকে কি আর দেখবেন না দর্শক?
পার্টিকুলার এই ছবিটার গল্পটাই এমন যে, প্রায় সব চরিত্রই ডি-গ্ল্যাম। আর এটাতো আমার হাতে নেই। ‘বাড়িওয়ালি’র পর থেকে তো সবাই আমাকে কাজের লোকের চরিত্র দিতে শুরু করেছিল। আমি সকলকে না বলতে শুরু করেছিলাম। ‘ডেট নেই’, বা ‘বাবার শরীর খারাপ’ এসব বলে কাটাতে পারলে ওই পরিচালকরা হয়তো আমার ওপর রেগে যেতেন না। আমি স্বয়ং ঋতুপর্ণ ঘোষকেও ‘না’ বলেছি। ওঁর ছবিতে আবার একটা কাজের লোকের চরিত্র করব না বলে। বোধহয় একটু বেশিই পাকামি করেছিলাম।
অন্য ধরনের চরিত্রের অফার আসে না বলছেন?
মাঝে মাঝে আসছে। যেমন অয়ন চক্রবর্তীর ‘ষড়রিপু’। সেখানে হাফপ্যান্ট পরা, গাঁজা খাওয়া, কোকেনখোর একটা মেয়ের চরিত্রে সুদীপ্তাকে ভাবতে তো পেরেছেন। সেই সুদীপ্তা যে সারাক্ষণ হ্যান্ডলুমের শাড়ি পরে ঘোরে। এই চ্যালেঞ্জটা নিতেই কোথাও আমরা ভয় পাই।
তবুও আজকাল অনেক অন্য রকম কাজ হচ্ছে টলিউডে। আপনার অফার পেতে সমস্যা হচ্ছে কেন?
সত্যি বলতে কি ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ করার পর আমার মনে হয়েছিল আরও ভাল অফার পাব। আই মিন বিগার স্ক্রিন স্পেস। কিন্তু কোথায়? আসলে আমি বোধহয় বড্ড বেশি কথা বলি। যাদের যেটা অপছন্দ হয় সেটা নিয়ে মুখ খুলি। হয়তো মুখের ওপর সত্যি কথাটা সব জায়গায় বলে দিই। সেটা অফার না পাওয়ার একটা কারণ হতে পারে (তুমুল হাসি)।
আরও পড়ুন, ব্যক্তিগত জীবনেও ‘অসমাপ্ত’ সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে খারাপ লাগাও
আপনি কি এক্সপেনসিভ?
সেটা হতে পারে। দেখুন আমি মনে করি আমার কাজটা আমি মোটামোটি ভদ্রলোকের মতো করতে পারি। আমার পারফরম্যান্স দেখে কেউ হায় হায় করবে না। সেটার দামটা তো দেওয়া উচিত। আমি জানি বাংলা ছবির বাজার ভাল নয়। সেটা ভেবেই টাকার কথা বলি। কিন্তু কেউ কেউ যখন অসভ্যতা করে তখন সেটা আর নেওয়া যায় না।
নাকি আপনি দেমাকী?
আমাকে দেখে সেটা মনে হচ্ছে (হাসি)? আসলে কাজটা পারি বলে হয়তো আমার একটা প্রচ্ছন্ন দেমাক রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যে কোনও অভিনেতার নিজেকে নিয়ে কোথাও একটা অহঙ্কার থাকা উচিত, একটা কনফিডেন্স। না হলে অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে অত লোককে বসিয়ে রাখবে কী করে?
এত দিন কাজ করছেন। ইন্ডাস্ট্রির কোন জিনিসটা খারাপ লাগে?
আমরা কেমন কুয়োর ব্যাঙ হয়ে যাচ্ছি। ভাল সিনেমা দেখলে তারিফ করা, খারাপ সিনেমা দেখলে গালাগালি করা, জুনিয়রদের ভুল দেখলে তাকে ডেকে বলা— এ সব প্রায় ভুলেই যাচ্ছি। আমরা সবাই একে অন্যের পিঠ চুলকোচ্ছি। তাতে আমরা হুড়হুড়িয়ে নীচের দিকে নামছি বলে আমার ধারণা।
কিন্তু এই পিঠ চুলকোনোর ব্যাপারটা তো চিরকালই ছিল।
হ্যাঁ ছিল। আগে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন আমরা সবাই এটা করছি। সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করে সবাই সবাইকে ভাল বলছি। আবার বন্ধুদের আড্ডায় তাদেরই কাজের খুঁত ধরে গালাগালি করছি। এই সোশ্যাল মিডিয়া অনেক ভুল বোঝাবুঝিও তৈরি করছে।
সোশ্যাল মিডিয়া কি খারাপ?
না, খারাপ বলছি না। কিন্তু সেটার ব্যবহার তো জানতে হবে। আমাদের তো পার্সোনাল বলে আর কিছু থাকছে না। ধরুন বলিউডে বা অন্য ইন্ডাস্ট্রিতেও এক একটা ছবি হয়, রিলিজের ঠিক দে়ড় মাস আগে আমরা জানতে পারি। আর আমাদের এখানে ডিরেক্টর স্ক্রিপ্ট পাঠালে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়ে যায়। আমরা তো প্রফেশনাল এথিক্সই মানছি না। আমাদের জীবন থেকে সারপ্রাইজ এলিমেন্ট চলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন, ‘যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁরাই নিয়মিত প্রত্যেকটা এপিসোড দেখছেন’
বলিউড নিয়ে কী ভাবছেন? অফার ছাড়ছেন কেন?
বলিউডের দু-তিনটে অফার ছেড়েছি। দিবাকর ডেকেছিল ‘ব্যোমকেশ’-এ। তাও করিনি। আমি তখন ওকে বলেছিলাম, দেখো তুমি হিন্দি ছবি বানাও। আর আমি বাংলা ছবি করি। হিন্দিতে আমাকে স্কোর করতে গেলে এর থেকে বেটার কিছু দিয়ে শুরু করতে হবে।
আপনাকে ইন্ডাস্ট্রি মিস ইউজ করেছে? নাকি ইউজই করেনি?
মিস ইউজ দু’এক জন করেছেন।
কারা তাঁরা?
তাঁদের কথা বলব না।
কেন?
(মুচকি হেসে) কী দরকার? যদি কোনও দিন ইউজ করে। কী দরকার লোকজনকে খেপিয়ে দিয়ে? আর ইউজ করেনি বললে মনে হবে আগামিকালই রিজাইন করছি। সেটা তো নয়। তাই বলব, আমি আশা করি ইন্ডাস্ট্রি আমাকে ইউজ করবে। এখনও অতটা ইউটিলাইজড হতে পারিনি।
এখন তো টেলিভিশন ননফিকশনে তারকার মেলা। আপনার এত দিনের অ্যাঙ্কারিংয়ের কেরিয়ার। অফার নেই কোনও?
আমি যখন শো হোস্ট করতাম, তখন বাংলা টেলিভিশনের গ্রামারটা অন্য রকম ছিল। টেলিভিশন নন ফিকশনটা একটা সময়ের পর হঠাত্ করেই বিগ টিকিট শো-তে শিফট করল। চ্যানেলগুলোর মধ্যে বড় ক্যাচ ধরার প্রবণতা দেখা গেল। তখন দর্শক টানতে আর অ্যাঙ্কার লাগছে না। স্টারস লাগছে। দেব, প্রসেনজিত্, মিঠুন চক্রবর্তী, জিত্, রচনা— সবাই কিন্তু ফিল্ম স্টার হিসেবে টেলিভিশনে আসছেন। তাঁদের স্টারডমকে টেলিভিশন ব্যবহার করেছে বেশি রেভিনিউ, স্পনসরশিপ টানার জন্য।
দর্শকদেরও দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাচ্ছে?
দর্শকদের কাছে বিষয়টা হল, যে ঋতুপর্ণা বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে আমি দূর থেকে দেখি, তার সঙ্গে গিয়ে হ্যান্ডশেক করব। এটা একটা মাইন্ড গেম।
আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’
স্টারেরা কেন আসছেন? টাকা কি ম্যাটার করে?
অফকোর্স। কম সময় দিয়ে খুব ভাল টাকার অফার দেওয়া হয়। যেখানে বাংলা সিনেমা প্রায় টাকা দিতেই চায় না। ফলে সেটাও অস্বীকার করা মুশকিল। কিন্তু আমার কাছে এই মুহূর্তে নন ফিকশনের কোনও অফার নেই। কারণ আমি সিনেমাতে এখনও অত বড় স্টার নই। আমি ভাল বা খারাপ অ্যাঙ্কার কিনা তাতে কিছু যায় আসে না। আমি যত নন ফিকশন দেখি অর্ধেক অ্যাঙ্কার তো ঠিক মতো বাংলাই বলতে পারেন না। তাঁরা কিন্তু স্টার। ওই স্টারডমটাকেই ব্যবহার করছে চ্যানেল।
অন্য একটা অ্যাঙ্গেল বললেন আপনি।
এর পর আর কেউ দেবে আমাকে অ্যাঙ্কারিং বলুন? বলবে, বড্ড কথা বলে মেয়েটা (হাসি)।
আর ফিকশন?
পোস্ট প্রেগন্যান্সি দু’টো ফিকশনের অফার এসেছিল। কিন্তু আমাকে যে সময়টা দিতে বলছে সেটার পর আর টাকার কথা বলেই উঠতে পারলাম না। আর এখন টেলিভিশনের যে অঘোষিত রুটিন, মনে হয় না এত বছর পর আর সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারব।
অঘোষিত রুটিন মানে?
মানে যতটা শুনেছি, রুটিন মানে সকাল দশটায় ডাকা হবে। বিকেল ছ’টায় আপনার স্ক্রিপ্ট আসতেও পারে। ধরা যাক রাত আটটায় স্ক্রিপ্ট এল। শুটিং শুরু হল ন’টায়। সাড়ে এগারোটায় বলা হল, একটা সিনের গ্যাপ আছে। বাড়ি গিয়ে ডিনার করে চলে এলেন। আবার শট হচ্ছে। চারটে নাগাদ প্যাকআপ হল। পরের দিন আবার আটটায় কলটাইম। মানে কাজের কোনও সময় নেই।
সাত মাস বয়সেই আপনার মেয়ে (শাহিদা নীরা)-র প্রথম মডেলিং, আর সেখানেই বিতর্ক। কী বলবেন?
দেখুন, অভিনেত্রী হিসেবে নয়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিরক্ত লেগেছে। দর্শক হিসেবে ওই বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংটা দেখে কোথাও মনে হয়নি বাল্যবিবাহকে প্রোমোট করা হয়েছে। আমাদের অন্নপ্রাশনের নিয়মগুলো একটু জানতে হবে তো। ওটা শিশুদের গয়নার বিজ্ঞাপন ছিল। না জেনে এমন অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত কী ভাবে নেয় কোনও সরকারি সংস্থা?
আরও পড়ুন, ‘রণবীরের বাবা তো হতে পারিনি, সে দুঃখ রয়েছে’
আপনার আর কী কী কাজ চলছে এখন?
অনেক দিন পর আমি একটা দারুণ কাজ করেছি অতনুদার ‘৭২ ঘণ্টায়’। ওঁর কাজের মধ্যে ভীষণ ঋতুদার ছায়া পাই। আর ইন্দ্রাশিস আচার্যর ‘পিউপা’।
অরিন্দম শীল ‘ধনঞ্জয়’কে নিয়ে যে ছবিটা করছেন, সেখানেও তো আপনি রয়েছেন।
হুম। হেতালের মায়ের চরিত্র। খুব ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট। এখন এর থেকে বেশি বলার কিছু নেই।
সুদীপ্তার মেয়ে শাহিদা নীরা।
বলা বারণ?
না! বলতে আমাকে কেউ বারণ করেননি। কিন্তু আমার নিজের মনে হচ্ছে এটা নিয়ে এর থেকে বেশি কিছু বলাটা ঠিক নয়। যে গল্পটা আমরা জানি না তেমন একটা গল্প জানতে পারব এই ছবিতে।
আপনি তো মঞ্চেও ‘সওদাগরের নৌকা’তে দুরন্ত পারফরম্যান্স দিচ্ছেন।
ওটা আমার ডিটক্সিফিকেশন। ওই নাটকে ৬২ বছরের চরিত্রে আমাকে দেবেশদা ভাবছেন কেন, সেটাই প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না। বর বলেছিল, এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও। চ্যালেঞ্জটা অ্যাকসেপ্টও করলাম। আর প্রত্যেকটা শো হাউসফুল হওয়াতে দর্শকদের উত্তরটাও পাচ্ছি।
মঞ্চ না বড়পর্দা, কোনটা বেশি টানে?
আগে মঞ্চ বেশি টানত। এখন বড়পর্দা সমান ভাবে টানে। মঞ্চে তবুও নিজেকে এক্সপ্লোর করার সুযোগ পেয়েছি। সিনেমায় এখনও অবধি খুব কম তেমন সুযোগ এসেছে।
ছবি: অনির্বাণ সাহা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy