প্রোফেসর শঙ্কু ও রামায়ণ। সত্যজিৎ রায় এ রকম কোনও গল্প লিখে যাননি। কিন্তু এই শিরোনামটা আপনার মাথায় আসতে বাধ্য, যদি হাতে চোদ্দো মিনিট সময় থাকে। ধরে নিচ্ছি, এই লেখা যখন ছাপা হয়ে আপনার বাড়ি পৌঁছচ্ছে বা ইন্টারনেটে আপলোড হচ্ছে, তার মধ্যে আপনারা অনেকেই ওই চোদ্দো মিনিট খরচা করে ফেলেছেন। অর্থাৎ সুজয় ঘোষের প্রথম বাংলা ছবি ইউটিউবে দেখে ফেলেছেন। সুতরাং সাসপেন্স থ্রিলার হলেও রেখেঢেকে কথা কওয়ার দরকার তেমন নেই। কারণ গল্পটা আপনাদের জানা হয়ে গেছে।
গল্পের ছাঁচটি যেখান থেকে নেওয়া, সেই রামায়ণের গল্পই বা কে না জানে? সেই যে গৌতম মুনির তরুণী ভার্যা অহল্যা! স্বামীর অভিশাপে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন! বহু কাল বাদে রামচন্দ্রের স্পর্শে তাঁর শাপমোচন হয়! অহল্যার অপরাধ? তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের অঙ্কশায়িনী হয়েছিলেন! ইন্দ্র অহল্যার কাছে এসেছিলেন তাঁর স্বামী গৌতমের ছদ্মবেশে! দেবতা হয়ে এমন ফষ্টিনষ্টি করায় মহাঋষির অভিশাপ তাঁকেও ছাড়েনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, অহল্যা সেই ছদ্মবেশ ধরতে পেরেছিলেন, নাকি পারেননি? একটা মত বলে, অহল্যা সত্যিই কিছু বোঝেননি। বিনা দোষে ‘পাপে’র ভাগী হন। আর একটা মত বলে, অহল্যা জানতেন ইনি ইন্দ্র। কিন্তু রাতদিন জপতপ নিয়ে মেতে থাকা বৃদ্ধ ঋষির সঙ্গে তিনি সুখী ছিলেন না। তাই জেনেশুনেই ইন্দ্রের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। আর একটা মত এ দুয়ের মাঝামাঝি। সেটা বলে যে, অহল্যা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে পেরেছিলেন। তখন আর পিছিয়ে আসার উপায় ছিল না।
সুজয় ঘোষের ‘অহল্যা’র মজাটা হল, এই সব রকম সম্ভাবনার দরজা খুলে রাখা! এই বাহাদুরিটাই প্রাচীনা অহল্যাকে নবীনা করে তুলল। দুখিনি হলেন মোহিনী।