Advertisement
E-Paper

চোদ্দো মিনিটের সৌমিত্র

সুজয় ঘোষ-এর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি। অণু গল্প হয়েও টানটান। লিখছেন জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়।প্রোফেসর শঙ্কু ও রামায়ণ। সত্যজিৎ রায় এ রকম কোনও গল্প লিখে যাননি। কিন্তু এই শিরোনামটা আপনার মাথায় আসতে বাধ্য, যদি হাতে চোদ্দো মিনিট সময় থাকে।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ০১:০৬
‘অহল্যা’ ছবিতে রাধিকা আপ্তে।

‘অহল্যা’ ছবিতে রাধিকা আপ্তে।

প্রোফেসর শঙ্কু ও রামায়ণ। সত্যজিৎ রায় এ রকম কোনও গল্প লিখে যাননি। কিন্তু এই শিরোনামটা আপনার মাথায় আসতে বাধ্য, যদি হাতে চোদ্দো মিনিট সময় থাকে। ধরে নিচ্ছি, এই লেখা যখন ছাপা হয়ে আপনার বাড়ি পৌঁছচ্ছে বা ইন্টারনেটে আপলোড হচ্ছে, তার মধ্যে আপনারা অনেকেই ওই চোদ্দো মিনিট খরচা করে ফেলেছেন। অর্থাৎ সুজয় ঘোষের প্রথম বাংলা ছবি ইউটিউবে দেখে ফেলেছেন। সুতরাং সাসপেন্স থ্রিলার হলেও রেখেঢেকে কথা কওয়ার দরকার তেমন নেই। কারণ গল্পটা আপনাদের জানা হয়ে গেছে।

গল্পের ছাঁচটি যেখান থেকে নেওয়া, সেই রামায়ণের গল্পই বা কে না জানে? সেই যে গৌতম মুনির তরুণী ভার্যা অহল্যা! স্বামীর অভিশাপে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন! বহু কাল বাদে রামচন্দ্রের স্পর্শে তাঁর শাপমোচন হয়! অহল্যার অপরাধ? তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের অঙ্কশায়িনী হয়েছিলেন! ইন্দ্র অহল্যার কাছে এসেছিলেন তাঁর স্বামী গৌতমের ছদ্মবেশে! দেবতা হয়ে এমন ফষ্টিনষ্টি করায় মহাঋষির অভিশাপ তাঁকেও ছাড়েনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, অহল্যা সেই ছদ্মবেশ ধরতে পেরেছিলেন, নাকি পারেননি? একটা মত বলে, অহল্যা সত্যিই কিছু বোঝেননি। বিনা দোষে ‘পাপে’র ভাগী হন। আর একটা মত বলে, অহল্যা জানতেন ইনি ইন্দ্র। কিন্তু রাতদিন জপতপ নিয়ে মেতে থাকা বৃদ্ধ ঋষির সঙ্গে তিনি সুখী ছিলেন না। তাই জেনেশুনেই ইন্দ্রের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। আর একটা মত এ দুয়ের মাঝামাঝি। সেটা বলে যে, অহল্যা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে পেরেছিলেন। তখন আর পিছিয়ে আসার উপায় ছিল না।

সুজয় ঘোষের ‘অহল্যা’র মজাটা হল, এই সব রকম সম্ভাবনার দরজা খুলে রাখা! এই বাহাদুরিটাই প্রাচীনা অহল্যাকে নবীনা করে তুলল। দুখিনি হলেন মোহিনী।

ইদানীং নেটিজেন গণতন্ত্রে যে কেউ একটা ছোট ছবি বানিয়ে আপলোড করে দিতে পারেন। কপাল ভাল হলে সে ছবি হাত ঘুরতে ঘুরতে ভাইরালও হতে পারে। আর্টহাউস শর্ট ফিল্মের নিজস্ব চৌহদ্দির বাইরেও জনসংযোগের এই নতুন উপায় আজকাল বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। অনুরাগ কাশ্যপ, সুজয় ঘোষের মতো বড় নামও তাই এই মঞ্চটা ব্যবহার করতে উৎসাহী। ইউটিউব মানে কিন্তু টিভির চেয়েও ছোট পর্দা। মুঠোফোন বা বড়জোর ল্যাপটপ। ফলে দৃশ্যায়ন, সেট বা শব্দ ভাবনা, সবই হবে সেই মাপে। সুজয় মাপ বুঝে পা ফেলেছেন। তাই কলিং বেলের আওয়াজেই রহস্য বোনা হয়ে গেছে। অনুপম রায়ের সংলাপ থেকেছে সহজগম্য, আবহ যৎসামান্য। ‘কহানি’র মতো রিপিট ভ্যালু না থাকলেও চোদ্দো মিনিটের টানটান অণু-গল্প জমে গেছে!

রাধিকা আপ্তেকে এমন লাস্যময়ী অবতারে আগে দেখিনি। পরপুরুষের জালে পা দিয়ে ইনি পাথর হতে আসেননি, বরং পুরুষকে পাথর বানাতে এসেছেন। রাধিকা অহল্যার আহ্বানে যাঁরা সাড়া দেন, তাঁরা অচিরাৎ পুতুল হয়ে যান। রাধিকা গোটা ব্যাপারটা বেশ এনজয় করেন। উচ্চারণে টান আছে। স্বল্পবাসে ঘুরে বেড়ান (যদিও পোশাকটা অন্য রকম হলে ধোঁয়াশা বাড়ত, সাসপেন্সও), পুরুষকে খুঁচিয়ে মজা পান। তার পর তারা যখন পুতুল হয়ে যায়, তাদের নিষ্ফল আস্ফালন দেখে মৃদু ধমকে দেন। পুলিশ অফিসার ইন্দ্র সেনকে (টোটা রায়চৌধুরী, অভিনয়ে আরও একটু ধার থাকলে ভাল হত) দেখে তখন ‘শিকারি খুদ ইয়ঁহা শিকার হো গ্যয়া’ ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু পুতুল হয়ে লিন্ডকুইস্টের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, বন্ধুবর অ্যাকরয়েডের সাহায্যে। এ তল্লাটে তেমন কিছু
ঘটবে কি না জানতে সিক্যুয়েল ছাড়া গতি নেই।

এই অবধি পড়ে যদি ভাবেন, এ অহল্যা তবে সে অহল্যা হল কীসে, তা হলে আরেকটু ধৈর্য ধরুন। নাটের আসল গুরু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রবেশ করতে দিন। তিনিই নায়ক, তিনিই গৌতম সাধু। শিল্পী মানুষ। পুতুল গড়া তো শিল্পকর্মই বটে। একটি করে পুরুষ তাঁর জাদু পাথরের টোপ গেলে! গৌতম তাদের অহল্যার কাছে পাঠিয়ে দেন। তাকের উপর পুতুলেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকে। গৌতম বলেন, অহল্যা ছাড়া তিনি কিস্যু না! শূন্য!
তাই কি? নাকি অহল্যাও তাঁর একটা পুতুল, ওই প্রস্তরখণ্ডের মতোই আর একটা ঘুঁটি? শরীর নয়, জাদুটোনায় অহল্যার মনটাকেই কি পাষাণ বানিয়ে রেখেছেন ওই বৃদ্ধ! নইলে একের পর এক শিকার ধরে কী মজা পায় সে? রামায়ণ কাহিনির আর এক পাঠ তো এও বলে, মহামুনি নাকি জানতেন ইন্দ্র আসবেন অহল্যার কাছে!
তবুও তিনি কুটির ছেড়ে বাইরে গিয়েছিলেন! দু’জনকে হাতেনাতে ধরে অভিশাপ দেওয়াতেই নাকি ছিল তাঁর জয়ের আনন্দ!

হবেও বা! গৌতমের মতো মানুষের কাছে আসলে সবই তো খেলা খেলা সারা বেলা! সব কিছুই ঘটে যায় খটখটে দিনের আলোয়! রহস্য মানেই আবছায়া-আলো-আঁধার, কে বলল?

sujoy ghosh ahalya radhika apte soumitra chatterjee short film ahalya ahalya short film MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy