উগ্র রাজপুত আবেগের বাহুবলী ধাক্কা কম খেতে হচ্ছে না পদ্মাবত পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালীকে। কোনও কোনও রাজ্যে পদ্মাবত দেখাতে গিয়ে খেসারত দিতে হয়েছে হল মালিকদেরও। মারধর, আগুন, ভাঙচুর... এ সবই চলছে ইতিহাসের ঠিকাদারিত্বের নামে। এ বার সম্পূর্ণ ভিন্ন দিক থেকে ‘আক্রান্ত’ হলেন পরিচালক। তবে লাঠি হাতে নয়, তীব্র ভাষায় এ ছবির বিরুদ্ধে কলম বাগালেন এক বলি নায়িকা। স্বরা ভাস্কর। ছবির শেষ দৃশ্যে যে ভাবে রানি পদ্মিনীর জহর ব্রত পালনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তার দৃশ্যনির্মাণ বা দর্শক মাতানোর ক্ষমতার তারিফ করে স্বরা আঙুল তুলেছেন— ভন্সালী আসলে ‘মানুষ’ আর ‘মেয়েমানুষ’-এ ভেদ করা সমাজেরই প্রতিনিধিত্ব করে ফেলেছেন শেষমেশ। প্রতিনিধিত্ব করে ফেলেছেন মেয়েদের যোনি-সর্বস্ব প্রাণী হিসেবে দেখা সমাজের।
ভন্সালীর ‘গুজারিশ’ ছবির অভিনেত্রী স্বরা তাঁকে খোলা চিঠি লিখেছেন নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’-এ। স্বরা লিখেছেন, এই ছবির শেষটা কোথাও যেন সেই প্রাচীন অন্ধকার যুগেই ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে দর্শককে। যেখানে বিধবা, ধর্ষিতাদের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠত। ‘পদ্মাবত’-এর মুক্তির স্বপক্ষে বারবার সরব হওয়া স্বরা এক ঝটকায় প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালক হিসেবে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর দায়িত্ব নিয়ে। লিখেছেন, ‘আমি জানি জহর বা সতী আমাদের ইতিহাসের অঙ্গ। এ সব সত্যিই হত। আর এগুলোর মধ্যে থাকা ভয়-কান্না-হাহাকার বড় পর্দায় দৃষ্টিনন্দনও হয়— তার উপর আপনার মতো এত বিচক্ষণ এক জন সুসম্পূর্ণ পরিচালক।’
স্বরার প্রশ্ন, উনিশ শতকে মার্কিন দেশে কালো চামড়ার মানুষদের সাদা চামড়ার মানুষরা পিটিয়ে মারত। সেই বিষয়টা আজকের কোনও ছবিতে এলে তা কি পরিচালকের মতামত নিরপেক্ষ ভাবে দেখানো সম্ভব, না উচিত্? স্বরা লিখেছেন, ‘আপনার ছবির শেষটা দেখে খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। যেখানে এক জন অন্তঃসত্ত্বা এবং একটি বাচ্চা মেয়ে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছেন। ...আপনার মনে রাখা উচিত ছিল পাওয়ার অব সিনেমা কী!... দর্শককে এই দৃশ্য আবেগতাড়িত করলেও আমার মনে হয়, কোনও ক্রিটিক ছাড়া এমন দৃশ্য দেখানো সেই ঘটনাতে মহত্ব আরোপ ছাড়া আর কিছু নয়। জহর বা সতীর সমর্থন ছাড়া এটা আর কী বা হতে পারে।...’