‘দাদার কীর্তি’ ছবিতে দোলের সেই গান এখন প্রতীকী মনে হয়। একই স্তবকে মিলে যাচ্ছে বাংলা ও হিন্দির কলি। অথচ একবারের জন্য তা আজকের উদ্ভট বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি মেশানো ‘ট্যাঁশ মার্কা খিচুড়ি’ ভাষা মনে হচ্ছে না।
শিমুলতলার ছন্দবাণী ক্লাবের দলটা খোল করতাল বাজিয়ে গাইছে, ‘হোলি আই রঙ্গ লাই আঙ্গড়াই মিতওয়া ওই রং পিচকারি রং দাও ছড়িয়ে / গালে লাল আবিরে, মন দাও ভরিয়ে…’! হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরের অনায়াস চলনে কে বলবে, দু’টো আলাদা ভাষা মিশেছে তাতে। সে কালের বাংলা ছবিকে কখনও উচ্চকিত দক্ষিণী ছবি বা বলিউডের নকল বলে ধিক্কৃত হতে হয়নি। কিন্তু নিজের শিকড়ে স্থিত থেকে তা জানলা খুলে দিয়েছিল পড়শির সংস্কৃতির জন্য। তরুণ মজুমদারের ছবি সেই উদার কিন্তু খাঁটি বাঙালিয়ানার শেষতম স্মারক।
কাকতালীয় মনে হতে পারে, পড়শি রাজ্যের ছোঁয়াচ বার বার লেপ্টে গিয়েছে বাঙালির এই প্রাণের পরিচালকের চলচ্চিত্র যাত্রার বাঁকে বাঁকে। ১৯৮০-র ছবি ‘দাদার কীর্তি’ থেকে জাম্পকাটে এক ধাক্কায় দু’দশকের বেশি পিছিয়ে যাওয়া যাক। অনূর্ধ্ব তিরিশ এক কালোপানা ধুতি পরা আপাত জবুথবু বঙ্গসন্তান চুপচাপ সূর্যাস্ত দেখছেন। সেও বাঙালির তথাকথিত ‘পশ্চিম’ বা বিহারের রাজগিরের আকাশ। গমের খেতে সূর্যের হলদেটে আলো। সেই ব্যাকলাইট মেখে ধুলো উড়িয়ে চলছে সার-সার মোষের গাড়ি। ধুলোর হাওয়া আর আকাশের পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের সংলাপ জমজমাট। সে ছিল কানন দেবী প্রযোজিত ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির আউটডোর লোকেশন। তবে এমন চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যটির ঠাঁই নেই ছবির চিত্রনাট্যে। দেখতেদেখতে আপাত গোবেচারা ধুতিপরা বঙ্গযুবা আপন মনে বলেওঠেন, ‘ইশ এই শটটা যদি আমাদের ছবিতে থাকত!’