Advertisement
২৪ মে ২০২৪

ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে টালিগঞ্জ

নন স্মোকিং হোটেলের বেড়া পেরিয়ে রাস্তায় যে সিগারেট খাবেন তারও উপায় নেই। প্রসেনজিৎ দ্রুত বন্দি হয়ে যাচ্ছেন ফ্যান জোনে। সেভেন্থ অ্যাভিনিউয়ের ওপর আবীরকে জাপটে ধরছেন অনুরাগীরা। নিউ ইয়র্কার হোটেলে তো ফায়ার এক্সিট দিয়ে বের করতে হল ঋতুপর্ণা-সহ টলি টিমকে। গত সপ্তাহে টালিগঞ্জের অভূতপূর্ব ম্যানহাটন অভিযানের মধ্যে থেকে গেল আবার কত আশঙ্কাও। নিউ ইয়র্ক থেকে লিখছেন গৌতম ভট্টাচার্য আর ইন্দ্রনীল রায়।জুলাইয়ের প্রথম দিবসে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের বাইরে আলোয় ভরা বড় বড় বিলবোর্ড ২৪x৭। বিশ্বখ্যাত হল-এর ভিতরেও তখন আলো-হাসি আর রোশনাইয়ের এক একটা ঢেউ উপচে পড়ছে।

‘কফি উইথ টালিগঞ্জ’

‘কফি উইথ টালিগঞ্জ’

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০০:২৯
Share: Save:

জুলাইয়ের প্রথম দিবসে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের বাইরে আলোয় ভরা বড় বড় বিলবোর্ড ২৪x৭। বিশ্বখ্যাত হল-এর ভিতরেও তখন আলো-হাসি আর রোশনাইয়ের এক একটা ঢেউ উপচে পড়ছে। বাংলা ছবির প্রথম আন্তর্জাতিক ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড বলে কথা। তাবড় তাবড় টলি তারকারা সেখানে। প্রসেনজিৎ থেকে ঋতুপর্ণা। আবীর থেকে শ্রাবন্তী। তাও কিনা আবার ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে। শোনা যাচ্ছে ক’দিনের জন্য টালিগঞ্জে শ্যুটিং বন্ধই ছিল তখন। ইন্ডাস্ট্রির ৩৩ জন কি না এখানে।

সুখের পরিবেশেই শুরুতে সংযোজক দুঃখের কথা তুললেন। সদ্য প্রয়াত মহম্মদ আলির কথা। যিনি আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে এই ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনেই অবিস্মরণীয় সুপার ফাইট লড়েছিলেন জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে।

একটা মৃত্যু যেন ধাম করে নিয়ে এল আগের আরেকটা মৃত্যুর টেমপ্লেটকে। বছর তিনেক আগের ঋতুপর্ণ ঘোষ। প্রথম এনএবিসি আইবিএফএ পুরস্কার শুরুই হল ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ স্মারক’ দিয়ে। পেলেন অপরাজিতা আঢ্য। পুরস্কারের নাম ‘অন্ধকারের তারা’।

কিন্তু ‘প্রাক্তন’য়ের পর অন্ধকারে কোথায় অপরাজিতা? নিজের শহরে তো ননই। এমনকী মার্কিন মুলুকের বাঙালিরাও হালফিল তাঁকে চেনেন। ম্যানহাটনের বাংলাদেশি দোকানে শপিং করতে গিয়েছিলেন অপরাজিতা। চিনতে পেরে মোটা ডিসকাউন্ট দিয়ে দিলেন দোকানি। ‘বেলাশেষে’র ডিভিডি যে তাঁরা দেখেছেন! এমনকী ‘জল নুপূর’ সিরিয়ালও নিয়মিত।

অপরাজিতাকে যদি মার্কিন মুলুক চিনে ফেলে তবে প্রসেনজিতের কী অবস্থা? সেভেন্থ অ্যাভিনিউের উপরে চার তলা অ্যাফিনিয়া হোটেল পুরোপুরি নন স্মোকিং। সেখানেই টালিগঞ্জের বাসস্থান। প্রসেনজিৎ বারবার হোটেলের ব্যাকগেটে নেমে আসতেন সিগারেট ধরাবেন বলে। শান্তিতে যে ধোঁয়া ছাড়বেন তার উপায় কোথায়? প্রতিবার ঘিরে ধরছেন প্রবাসী বাঙালিরা। নয়তো পাশের দোকানের বাংলাদেশি। অটোগ্রাফেরও আগে একসঙ্গে ছবি চাই। তারও আগে সেলফি। ন’বছর আগে ডেট্রয়েট বঙ্গ সম্মেলনে এসেছিলেন প্রসেনজিৎ। তার পর বাঙালিদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আর তাঁকে দেখা যায়নি।

শোনা যায় সে বছর মার্কিন মুলুকের বঙ্গ-উদাসীনতা তাঁকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল আর কখনও না। মাঝের ন’টা বছর যে টালিগঞ্জ ও মার্কিন মুলুকের কাঁটাতার অদৃশ্য করে দিয়েছে, সেটা দেখে প্রসেনজিৎও মহা আশ্চর্য। ভাবতেই পারেননি ওরা এত কাছে চলে এসেছেন।

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বরাবর আন্তর্জাতিক বাঙালি সমাজে সমাদৃত। পরমের ইন্টেলেকচুয়াল দীপ্তির কদর এ মুলুকে বহুবার হয়েছে। কিন্তু কে জানত যিশু সেনগুপ্তকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের মাত্রা এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তিনি ‘রাজকাহিনী’র জন্য সেরা ভিলেনের পুরস্কার নিতে এলে চলেছে দু’মিনিট হাততালি। সেরা প্রবাসী বাঙালিদের কথা অনুযায়ী যিশুকে ভাতের হাঁড়ির মধ্যে এনে দিয়েছে ‘জি’ ও বি। ‘জি সারেগামাপা’ ও ব্যোমকেশ।

ম্যাডিসনের রাত

কিন্তু কে জানত প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যোমকেশ ও ফেলুদা-ধারী আবীর চট্টোপাধ্যায় যে সর্বজনীন আবেগ এমন মাখিয়ে দিয়ে যাবেন? জাস্ট একটা নমিনেশনের এভিতে তাঁর ব্যোমকেশের চেহারা দেখা মাত্র ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে হাজার ছয়েকের ভিড় থেকে চিৎকার— আ-আ-আ-আবীর আ-আ-আ-আবীর। যা পরে নকল করে দেখাচ্ছিলেন মিমি-শ্রাবন্তীরা। পরের দিন নিজের হোটেল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের পেন হোটেলে ‘বাস্তু শাপ’য়ের স্ক্রিনিংয়ে গিয়েছিলেন। হোটেলের উনিশ তলায় তাঁকে ঘিরে নির্ভেজাল বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে গেল।

এক মহিলা তো চুমু খাবেন বলে জাপটে ধরলেন। আবীর অবশ্যই চমৎকৃত। তিনি দেব-জিৎদের মতো তথাকথিত কমার্শিয়াল স্টার নন। কিন্তু নিউ এজ ছবি ঘিরে যে পরম-যিশু ও তাঁর আটলান্টিকের পারে এমন অবতরণ ঘটেছে ভাবতে পারেননি। সব দেখে টেখে অবাক পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আর সুদেষ্ণা রায়।

একটা সময় মার্কিন মুলুকে বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রী বলতে বোঝাত সত্তর দশক ও তার আগের সময়। উত্তম-সুচিত্রা-সৌমিত্রতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল মনোযোগ। টেনেটুনে অপর্ণা সেন। এর পর নেটওয়ার্ক যেন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।

২০১৬-র বঙ্গ সম্মেলন দেখাল ইন্টারনেট, ডিভিডি ও স্যাটেলাইট টিভির যুগে টালিগঞ্জ তারকারা নতুন করে জন্ম নিয়েছেন মার্কিন মুলুকে। নইলে ভাবা যায় ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে প্রথম বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা একসঙ্গে পারফর্ম করছেন আর দর্শকাসন বলছে, এই তো চোদ্দো বছর পরে ফিরে আসা। এক্জ্যাক্টলি ফোরটিন ইয়ার্স। যার সঙ্গে যোগ করে দিচ্ছেন লস এঞ্জেলেসের মহিলা ফ্যান, আহা পাওলিও যদি পারফর্ম করত।

হাডসনের ধারে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা আন্দাজের জন্য চারটে ইভেন্ট ছিল টালিগঞ্জের সামনে। প্রথম দিনের ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ ডিনার, ‘কফি উইথ টালিগঞ্জ’, আধুনিক আটটা ছবি সম্পন্ন এনএবিসি বাংলা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আর ম্যাডিসনের বুকে প্রথম আন্তর্জাতিক বাংলা ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, এনএবিসি আইবিএফএ।

ম্যানহাটনের রাস্তায় আবীর-যিশু

প্রতিটিতে ভরপুর অভ্যর্থনা পেলেন প্রসেনজিৎরা। ‘কফি উইথ টালিগঞ্জ’— সরাসরি তারকা-দর্শকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। অন্য হলে কবিতা কৃষ্ণমূর্তি গাইছেন সেই আবেদন উপেক্ষা করে নিউ ইয়র্কার হোটেলে হাজির হাজারের ওপর দর্শক। অতীতে এগুলোতে সত্তর-আশি জন দেখা যেত কিনা সন্দেহ। অথচ সে দিন এমন অবস্থা যে সিকিউরিটি এসে দর্শকদের ধমকানি দিয়ে গেল, ‘‘আপনারা এত কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেব।’’ তাতেও কেউ মানছে না। শেষ পর্যন্ত ফায়ার এক্সিট দিয়ে বের করা হল প্রসেনজিৎ সহ টিমকে। ‘কাট মুন্ডু’ স্ক্রিনিংয়ের পরে একই অবস্থা মিমি আর শ্রাবন্তীর। ফিল্ম টিমের দায়িত্বে থাকা ভলেন্টিয়াররা লম্বা লাইন করিয়েছে অটোগ্রাফ/ছবির জন্য। সে লাইনও ক্রমাগত ভাঙছে দেখে কেউ মানছে না দেখে কোনও ক্রমে বের করতে হল মিমি-শ্রাবন্তীকে।

সংযোজক রায়া ভট্টাচার্য যখন বললেন, ‘‘এ বার আসছেন সদ্য অমিতাভকে ডিরেকশন দিয়ে ফেরা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী’’ তখন হল জুড়ে তুমুল হাততালি আর আওয়াজ, ‘পিঙ্ক’ ‘পিঙ্ক’। এ প্রান্তের প্রতিটি খবর এখন ও দিকে জানা। পাওলি ‘নাটকের মতো’র জন্য পেলেন সমালোচকদের বিচারে সেরা নায়িকার পুরস্কার। ফিল্মে ওঁর চরিত্রের নাম কী সেটাও গড়গড় করে বলে দিচ্ছেন প্রবাসীরা। অনিন্দ্য-অনুপম-ইমনরা নিয়মিত এ দিকে গাইতে আসেন। তাঁদের ঘিরে ক্রেজ বা তাঁদের গানের প্রতিটি লাইন জানা সহজবোধ্য। কিন্তু বাংলা ফিল্মের খুঁটিনাটি কন্ঠস্থ হয়ে গেল কোন ম্যাজিকে?

‘কফি উইথ টালিগঞ্জ’য়ে যেমন সামনের সিটে বসা প্রবাসী অভিযোগ করলেন, বাংলা ছবিতে এত খিস্তি শোনা যাচ্ছে কেন? পরিবার নিয়ে বসে আপনাদের কিছু ছবি দেখা যায় না। সামনে দু’হাতের মধ্যে প্রসেনজিৎ- ঋতুপর্ণা। তাঁদের সামনেই টেনে আনলেন দুটো ছবির কথা ‘২২শে শ্রাবণ’ আর ‘রাজকাহিনী’। বললেন ‘খাদ’য়ের কথাও। তীব্র শানিত উত্তর দিলেন এ পক্ষের কৌশিক সেন, ‘‘চরিত্রগুলো যেমন, সংলাপ তো তেমনই হবে। ‘২২শে শ্রাবণ’য়ে প্রসেনজিতের চরিত্র এক রাগী পুলিশ অফিসারের। যার ওই ভঙ্গিতেই কথা বলা স্বাভাবিক। ‘রাজকাহিনী’র গল্প যৌনকর্মীদের নিয়ে। তারা তো ওই ভাষায়ই কথা বলবে। শিল্পের দায়িত্ব তো নিছক পরিবারের সঙ্গে ছবি দেখানো হতে পারে না। শিল্পের কাজ হল চরিত্রকে বিশ্বাস্য করা। তাকে ঠিক তার মতো দেখানো’’ এ বার বাকি হল তুমুল হাততালিতে সমর্থন করলেন কৌশিককে। আরও বোঝা গেল নিউ এজ বাংলা ছবির সঙ্গে ভরপুর হানিমুন চলছে মার্কিন মূলুকের বাঙালিদের।

পরের বার বঙ্গ সম্মেলনের উদ্যোক্তা সান ফ্রান্সিসকো। তাদের তরফে সংগঠক কমিটির দুই কর্তা বাহবা দিয়ে গেলেন প্রসেনজিৎকে। বললেন, ‘‘আপনাদের আইবিএফএ সংস্থার লক্ষ্যটা অসাধারণ যে আইফার মতো অ্যাওয়ার্ড আয়োজনের মাধ্যমে বাংলা ছবিকে বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া।’’ ঋতুপর্ণাও আগের রাতে মার্কিন মুলুকে পডকাস্ট ইন্টারভিউ দিচ্ছিলেন, ‘‘হিন্দি ছবির কথা বাদই দিলাম। তামিল বা মরাঠি ফিল্ম যদি বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়তে পারে তা হলে আমাদের ছবি পারবে না কেন?’’

অ্যাওয়ার্ডে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টালিগঞ্জের চার নামী প্রযোজক— শ্রীকান্ত মোহতা, ফিরদৌসল হাসান, শ্যামসুন্দর দে ও ‘শঙ্খচিল’ ছবিটা নিয়ে সত্যম রায় চৌধুরী। শ্রীকান্ত এই প্রথম বঙ্গ সম্মেলনে। কোনও ধারণাই ছিল না তাঁর যে প্রবাসী দর্শক-উষ্ণতা এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। বললেন, ‘‘আমরা যে ঠিক রাস্তায় চলছি এখানে এসে সেটার প্রমাণ পেলাম। এ বার পরের ধাপটা বার করতে হবে।’’

প্রথম আন্তর্জাতিক বাংলা ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে ১৭টা পুরস্কার দেওয়া হল। ইন্দ্রাণী হালদার পেলেন এভারগ্রিন অ্যাকট্রেসের পুরস্কার। সেই ‘তেরো পার্বন’ থেকে ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ তাঁর ২৯ বছরের বিস্তৃত অভিনয় জীবনকে সম্মান জানিয়ে। সেরা ফিল্মের পুরস্কার পেল ‘বেলাশেষে’। সবচেয়ে প্রভাবশালী ছবি ‘রাজকাহিনি’। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বা সৃজিত মুখোপাধ্যায় যেমন আসতে পারেননি। অনিবার্য কারণে পৌঁছতে পারেননি সেরা পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর হয়ে পুরস্কার নিলেন শ্রীকান্ত। ঋতুপর্ণা পেলেন ‘রাজকাহিনী’র জন্য সুপার অ্যাকট্রেস অব দ্য ইয়ার। শ্রাবন্তী ‘কাট মুণ্ডু’র জন্য পাবলিক ভোটিংয়ে সেরা নায়িকা। আবীর ‘বাস্তু শাপ’য়ের জন্য সেরা বাণিজ্যিক নায়ক। সমালোচকদের বিচারে সেরা অভিনেতা ‘সিনেমাওয়ালা’র জন্য পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ‘ওপেনটি বায়োস্কোপ’য়ের জন্য বেস্ট ডেবুট্যান্ট ডিরেক্টর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।

‘দেখো আলোয় আলোয় আকাশ’ গানের জন্য সেরা গীতিকারের পুরস্কার পেলেন শ্রীজাত।

কৌশিক

একেবারে শেষে ছিল অভিনব এক পুরস্কার — ‘ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড ফর বাংলা সিনেমা’। যার মনোনয়ন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত-কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়দের নিয়ে গড়া নির্বাচক কমিটি করেনি। করেছিল এক সদস্যের সিলেকশন কমিটি। সেই সদস্যের নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ জীবনে মাত্র একবার বঙ্গ সম্মেলনে গিয়েছেন তাও সতেরো বছর আগে। এলইডি টিভিতে যখন বলছেন, ‘‘আমি ফিল্ম জগতের লোক না হয়েও সামান্য যেটুকু দেখেছি তাতে আমার মতে বুম্বাদাই এই পুরস্কারের পক্ষে সেরা লোক,’’ ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন তখন ফেটে পড়ছে হাততালিতে।

জয়া এহসান পেলেন ‘রাজকাহিনী’র জন্য সেরা সহ অভিনেত্রীর পুরস্কার। কোথাও গিয়ে যেন শিল্পের টানে মুছে গেল ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তরেখা। রেখে গেল একটা অপ্রিয় প্রশ্ন, প্রবাসে জয়ার বাংলাদেশি জনতা যে ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ায়, যেমন জোরালো স্পনসর করে, সে ভাবে কি দাঁড়ায় বাঙালি দর্শক?

গ্রহণযোগ্যতার কাঁটাতারের বেড়া যতই অবলুপ্ত হয়ে যাক বাণিজ্যিক ভাবে বাস্তব সম্মত হওয়ার পরিস্থিতি এখনও নেই। এখনও নতুন বাংলা ছবি রিলিজ করলে দর্শক পকেট থেকে দ্রুত পনেরো ডলার বার করে দেখবে কিনা নিশ্চিত নয়। ‘প্রাক্তন’য়ের তাই অভিজ্ঞতা। কলকাতার হলে রিলিজ হওয়া মাত্র নকল ডিভিডি এখানে চলে আসে। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে না এমন বাংলা ছবি নেই। নকল ডিভিডিতে বাজার দ্রুত ছেয়ে যাওয়ায় প্রযোজকরা কিছু পান না। প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা ব্যাকুল আবেদন রাখলেন, প্লিজ নকল ডিভিডি কিনবেন না। টরেন্ট থেকে নামাবেন না। জেনুইন ডিভিডি কিনুন।

কিন্তু সেই আবেদনে লাভ হবে কি? বাংলা ছবির মার্কিন দেশে ডিস্ট্রিবিউশনের নতুন রাস্তা খুলবে কি? এখানে বসবাসকারী বাঙালি পরিচালক মায়ামির সুমন ঘোষ ও নিউ ইয়র্কের মৈনাক ভৌমিক বঙ্গ সম্মেলনের দর্শক প্রতিক্রিয়ায় উচ্ছ্বসিত। একই সঙ্গে তাঁরাও নিশ্চিত নন, আবেগটা ব্যবসায় কী করে রূপান্তরিত হবে? সমাধান কিসে? নেটফ্লিক্সে? বংফ্লিক্সে?

ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে তাই বাংলা ছবির মার্কিন বাজারে একরকম ভিত পুজো হল বলা যায়। মূল গাঁথনি অনেক দূর। লোহা, সিমেন্টের আমদানিও। প্রসেনজিৎ অবশ্য আশাবাদী, ‘‘আরম্ভটা তো কোথাও না কোথাও করতেই হত। এ বারেরটা সেই ড্রাই রান হল।’’

সম্ভবত তিনি ঠিক। শুরুটা তো হল!

ছবি: প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী, সঞ্জয় ঘোষাল ও মিডিয়া মর্ফোসিস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madison Square Garden Tollygunge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE