Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

টোটা-কাহিনি

মধুর ভান্ডারকরের ‘ইন্দু সরকার’ থেকে তাঁর কেরিয়ারের প্রথম বাধা ও হালফিল কাজ নিয়ে কথা বললেন টোটা রায়চৌধুরী। শুনলেন ঊর্মি নাথ মধুর ভান্ডারকরের ছবি ‘ইন্দু সরকার’-এর শ্যুটিং শেষ করে লম্বা ছুটি নিয়েছেন টোটা রায়চৌধুরী। পড়াশোনা, সিনেমা দেখা, পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া আর কিছুটা ব্যবসা দেখার জন্য এই ছুটি।

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মধুর ভান্ডারকরের ছবি ‘ইন্দু সরকার’-এর শ্যুটিং শেষ করে লম্বা ছুটি নিয়েছেন টোটা রায়চৌধুরী। পড়াশোনা, সিনেমা দেখা, পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া আর কিছুটা ব্যবসা দেখার জন্য এই ছুটি। আপাতত নো অ্যাকটিং! এই সিদ্ধান্তের কারণ? ‘‘সিরিয়াল ‘তারানাথ তান্ত্রিক’-এর পরই ছুটি নেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তখন মধুরজির ছবির অফার এল। এই ছবির পর আর কোনও কাজ হাতে নিইনি। বেশ কিছু ছবি ও ধারাবাহিকের অফার এসেছিল, বলেছি ১৫ অগস্টের পর করতে পারি। যদি অপেক্ষা করার থাকে তো করুন, না হলে আমাকে বাদ দিন! আমার ভ্যাকেশন চলছে,’’ হেসে বললেন টোটা।

Advertisement

এই ইন্ডাস্ট্রি যে আপনাকে মাথায় করে রেখেছে এমন নয়, বরং নিজের মাটি শক্ত করতে অনেকটা সময় লাগল, সেখানে মুখের উপর অপেক্ষা করে থাকার কথা বললেন! কথা শুনে আবার হেসে ফেললেন টোটা। ‘‘কেরিয়ারের প্রথম দিকে ইন্ডাস্ট্রির কয়েক জনের আশীর্বাদে আমার এই অবস্থা! তাঁরা কাঠি ও কাঁচি নিয়ে ঘুরতেন! কীভাবে টোটাকে বাদ দেওয়া যায়। আসলে কী জানেন, আমি ডান্স পারি, অ্যাকশন পারি, মার্শাল আর্ট জানি, চেহারাটা মোটামুটি ভাল, অভিনয়টাও পারি, উচ্চারণ ভাল... এগুলোই সমস্যা হয়ে গেল। এমনও হয়েছে, আমি সেকেন্ড লিড। হিরোর সঙ্গে আমার ডান্সের কথা ছিল, কিন্তু হিরোমশাই পরিচালককে বুঝিয়ে আমাকে নাচ থেকে বাদ দিয়ে দিল। কারণ সে আমার সঙ্গে নাচে পাল্লা দিতে পারবে না। এমন বহু হয়েছে। এক সময় হতাশ হয়ে পড়তাম, তার পর ব্যাপারটা মেনে নিয়েছি। নাও আই ডোন্ট কেয়ার।’’

এই জন্যই কি বড় পরদা ছেড়ে ছোট পরদায় চলে যাওয়া? ‘‘অনেকটা তো তাই। তবে সিরিয়ালে গিয়ে ভালই হয়েছে। ছোট পরদায় আমার অভিনয় দেখে ঋতুপর্ণ ঘোষ ‘শুভ মহরৎ’-এর জন্য ডাকলেন, তার পরে ‘চোখের বালি’।’’ ‘টিনটোরেটোর যিশু’, ‘আবর্ত’, ‘হিটলিস্ট’, ‘এক ফালি রোদ’, ‘অংশুমানের ছবি’, ‘বেঁচে থাকার গান’...করার পরও বড় পরদার ‘শপথ’ বা ‘তারানাথ তান্ত্রিক’-এর মতো সিরিয়াল করার দরকার পড়ল কেন? ‘‘সকলে ‘শপথ’-এর অ্যাকশনের তারিফ করেছে। কারণ আমি তো ডামি বা লাফানোর জন্য ওয়্যার ব্যবহার করি না। ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বলে করেছিলাম। আসলে এই সিরিয়ালটা যাঁদের মস্তিষ্কপ্রসূত তাঁরাই শ্যুটিংয়ের আগে চ্যানেল ছেড়ে দিলেন। এই সিরিয়ালটার জন্যও প্রশংসা পেয়েছি। একবার তো প্লেনে এক বৃদ্ধর পাশে বসতেই তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘এই দ্যাখো, তারানাথবাবু আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন।’’

আরও পড়ুন: গোয়ার সমুদ্রতটে মদ্যপান ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

Advertisement

‘অহল্যা’, ‘তিন’, ‘কহানি টু’ এবং ‘ইন্দু সরকার’ পরপর হিন্দি ছবি, টোটা কি তবে বাংলা ছেড়ে মুম্বইয়ে ঘাঁটি গড়ার কথা ভাবছেন? টোটার উত্তর অবশ্য ‘না’। প্রথম তিনটে ছবি সুজয় ঘোষের, বাঙালি কানেকশন, কিন্তু বাঙালি-মরাঠি কানেশনটা
হল কীভাবে?

‘‘মধুরজির সঙ্গে কলকাতায় কথা হওয়ার পর মুম্বইয়ে ডাক পড়ল। আমাকে অডিশন দিতে হয়নি। ওখানে গিয়ে জানলাম ‘ইন্দু সরকার’-এর নবীন সরকারের চরিত্রটি জন্য উনি আমাকে বেছেছেন। শুনলাম, মধুরজি অডিশনে বিশ্বাস করেন না। কলকাতায় আমার সঙ্গে কথা বলার সময় উনি আমাকে খুঁটিয়ে দেখছিলেন। আমার হাঁটা দেখে উনি নাকি সহকারীকে বলেছিলেন, ‘আমার নবীনকে পেয়ে গিয়েছি।’ পরে জেনেছিলাম, নীরজ পাণ্ডে আমার সম্পর্কে মধুরজির কাস্টিং ডিরেকটরকে বলেছিলেন।’’ ভারতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ২১ মাসের লম্বা এমার্জেন্সির সময় এই ছবির পটভূমি। ইন্দিরা গাঁধীর পুত্র সঞ্জয় গাঁধীর চরিত্রে অভিনয় করছেন নীল নীতিন মুকেশ। নবীন সরকারের চরিত্রটি অবশ্য অনেকগুলো বাস্তব চরিত্রের মিশ্রণ। ‘‘অডিশন দিতে হয়নি, কিন্তু প্রথম দিন আমাকে সু-অভিনেতার প্রমাণ দিতে হয়েছিল,’’ বললেন টোটা। ব্যাপারটা বিস্তারিত জানতে চাইলে বললেন, ‘‘প্রথম দিন শট ছিল আমার আর আমার স্ত্রীর চরিত্রে কীর্তি কুলহারির। শটের আগে মধুরজি দু’পাতা স্ক্রিপ্ট দিয়ে বললেন, ‘এক শটে চাইছি’। বললাম, ‘ওকে’। ওঁর মুখ দেখে বুঝছিলাম উত্তরটা আশা করেননি। মুম্বইয়ে দু’পাতা সংলাপ, এক শটে অকল্পনীয়। শট দিতে-দিতে আড়চোখে দেখলাম, আমি উতরোতে পারি কিনা সেটা দেখার জন্য চারপাশে লোক জমে গিয়েছিল। পরীক্ষায় পাশ করায় মধুরজি এত প্যামপার করেছেন যে, ভাল কাজ না করে উপায় ছিল না।’’

শুধু অভিনয় নয়, বাংলায় ছবি পরিচালনা ও প্রযোজনা করার চিন্তাও আছে টোটার। যদিও তাঁর প্রথম প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘ভিলেন’ আশার আলো দেখায়নি। কিন্তু এতে তিনি মোটেও দমে যেতে চান না।

লাইম লাইটে থাকার জন্য তাঁর একটাই মন্ত্র: পরিশ্রম ও ডিসিপ্লিনড জীবনযাপন। এর জন্যই হয়তো তাঁকে পার্টিতে বিশেষ দেখা যায় না। পার্টিতে গেলেও রাত ১০র মধ্যে বাড়ি ফিরে আসেন। মদ্য পান করেন না, সিগারেট খান না। প্রতিদিন সকালে এক্সারসাইজ করেন। সুপুরুষ এই মানুষটির কোনও লিঙ্ক আপের খবর নেই। ‘‘ভাল যে কাউকে লাগেনি তা নয়, কিন্তু ভাল লাগাকে ভালবাসার সীমা টপকাতে দিইনি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে যে বন্ডিং তৈরি হয়েছে তা এই জীবনে আর কারও সঙ্গে হবে না। সুতরাং...’’ গলায় পরম তৃপ্তির আভাস পাওয়া গেল টোটা রায়চৌধুরীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.