Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ইডেন নিয়ে মিরের খোঁচায় তর্কের তুফান টলিউডে

ইডেনে নাইট-বরণ অনুষ্ঠানে ভিড় নিয়ে বিশৃঙ্খলা তো ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে টালিগঞ্জের শিল্পীদের মধ্যে চাপানউতোর। তিন দিন পরেও সাইবার দুনিয়ায় এই বাগযুদ্ধ জারি রয়েছে। মঙ্গলবার ইডেনে অনুষ্ঠান চলাকালীনই ফেসবুকে একটি তির্যক পোস্ট করেছিলেন কৌতুকশিল্পী মির। তাতে আহত হয়ে টালিগঞ্জের তরুণ নায়ক-নায়িকারা তাঁকে টুইটারে পাল্টা আক্রমণ করেন। শুক্রবারও সেই তর্কের তুফান থামেনি।

ইডেনের সেই অনুষ্ঠানে টলিউডের শিল্পীরা। —ফাইল চিত্র।

ইডেনের সেই অনুষ্ঠানে টলিউডের শিল্পীরা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০২:১৯
Share: Save:

ইডেনে নাইট-বরণ অনুষ্ঠানে ভিড় নিয়ে বিশৃঙ্খলা তো ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে টালিগঞ্জের শিল্পীদের মধ্যে চাপানউতোর। তিন দিন পরেও সাইবার দুনিয়ায় এই বাগযুদ্ধ জারি রয়েছে।

মঙ্গলবার ইডেনে অনুষ্ঠান চলাকালীনই ফেসবুকে একটি তির্যক পোস্ট করেছিলেন কৌতুকশিল্পী মির। তাতে আহত হয়ে টালিগঞ্জের তরুণ নায়ক-নায়িকারা তাঁকে টুইটারে পাল্টা আক্রমণ করেন। শুক্রবারও সেই তর্কের তুফান থামেনি।

তবে মির নিজে অবশ্য এ দিন তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মঙ্গলবার শাহরুখ খান ইডেনে ঢোকার আগে ফেসবুকে মিরের প্রশ্ন ছিল, “টালিগঞ্জের ঝিঙ্কু মামণিরা কি রাজ্য সরকারের ভাড়া করা নাচনি? ইডেনে এত জোকারের ভিড়ে অজন্তা সার্কাসের আর কী দরকার?” শাহরুখ দেরিতে আসার জেরেই মঞ্চে এই ‘ভুলভাল বিনোদন’ সহ্য করতে হল বলে মন্তব্য করেন মির। এবং লেখেন, “ঊষা উত্থুপের মতো কিংবদন্তিকে সময় ভরানোর শিল্পী (ফিলার আর্টিস্ট) হিসেবে ব্যবহার করাটা দুঃখজনক।”

এ দিন মিরের ব্যাখ্যা: “আমি কোনও শিল্পীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। সবার কাজকেই শ্রদ্ধা করি। কিন্তু মনে হচ্ছিল, শিল্পীদের শুধু নাচবার জন্য ডেকে আনা হয়েছে। তাঁদের এই অবস্থা দেখে আর এক জন শিল্পী হিসেবেই আমার কষ্ট হচ্ছিল।”

ঘটনাচক্রে ইডেনের অনুষ্ঠানের পরের দিনই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য ছিল, “টালিগঞ্জের এক জন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে শুধু হাততালি দেওয়া বা তালে তালে নাচবার জন্য আমায় ব্যবহার করা হবে, ভাবতে পারিনি!”

সে দিন একেবারে শেষ মুহূর্তে গৌতম গম্ভীরকে স্মারক দেওয়ার জন্য প্রসেনজিৎকে ডাকা হয়। মিরও এ দিন অনেকটা একই সুরে ইডেনের অনুষ্ঠানে শিল্পীদের কাউকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন।

সে-দিন মঞ্চে উপস্থিত শিল্পীদের একাংশ কিন্তু এই প্রশ্নটাই অবান্তর বলে মনে করছেন। মিরের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হিরণ বা ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ মৌরির (মানালি) বক্তব্য, তাঁদের কেউ জোর করে নাচতে বলেননি। কেকেআর-এর জয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই তাঁরা নেচেছেন। ঊষা উত্থুপ-সহ শিল্পীরা মাঠ মাতিয়ে রেখেছেন বলে মন্তব্য করে সে দিনই তাঁদের বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের অন্যতম সঞ্চালক জুন মালিয়া বলছেন, “এত লোকের সামনে এই অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। শুনেছি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আমায় চেয়েছিলেন। আমার যদি এই কাজটা করতে ভাল লাগে, কার কি বলার আছে?” তবে জুন স্বীকার করছেন, অনিবার্য কারণে শাহরুখের দেরির ফলেই অনুষ্ঠান একটু অগোছালো হয়ে গিয়েছিল। তবে এমনটা অনেক সময়েই ঘটে থাকে বলে তাঁর মত। আর এক সঞ্চালক রুদ্রনীল ঘোষ আবার মিরকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “ও সুযোগ পায়নি বলেই ভেতরের রাগটা বেরিয়ে এসেছে।”

মিরের দাবি, সুযোগ পেলেও সঞ্চালনার দায়িত্ব তিনি সম্ভবত নিতেন না। “এখানে ডাক পেলেও সঞ্চালনা করতাম কি না, আমি সেটা ভাবতাম!” তাঁর বক্তব্য, কেকেআর-এর খেলোয়াড়দের মঞ্চে সে ভাবে দেখা গেল না! বাংলার অন্য ক্রিকেটার বা খেলোয়াড়দের কোনও ভূমিকা নেই। শিল্পীরাও মর্যাদা পাননি। “এখানে আমি অন্তত ক্রিয়েটিভ (সৃষ্টিশীল) মজা পেতাম না!”

নাট্যকর্মী কৌশিক সেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, টালিগঞ্জের শিল্পীরা সবাই কেকেআর নিয়ে আবেগাপ্লুত, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাঁর মন্তব্য, “অনেকে তো মাঠে আসেনওনি! কেউ কেউ শ্যুটিংয়ের কথা বললেও আমি জানি, সেটাই আসল কারণ নয়!” চিত্রপরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য রাঁচিতে শ্যুটিং থাকার জন্যই ইডেনে আসতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। তবে তাঁর মতে, “সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কিছু বলতেই পারেন। তাতে কেউ পাল্টা বলুক বা আনফ্রেন্ড করে দিক! কোনও পক্ষেরই এতে ব্যক্তিগত ভাবে আহত হওয়ার কিছু নেই।”

এই ‘পাল্টা বলা’র পর্বটাই আপাতত সাইবার-স্পেসে জাঁকিয়ে বসেছে। মিরের ‘ঝিঙ্কু মামণি’ বা ‘রাজ্য সরকারের ভাড়া করা নাচনি’ শব্দবন্ধ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক জমেছে। এর মধ্যে দিয়ে মহিলাদের অপমান করা হয়েছে বলে টুইট করেছেন টলিউডের উঠতি নায়িকা মিমি। টুইটারে তাঁর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন আর এক নায়িকা শ্রাবন্তীও। সার্কাসের জোকারদের সঙ্গে তুলনাতেও ক্ষোভ রয়েছে শিল্পী-মহলে। মির কিন্তু বিষয়টিতে এত উত্তেজনার কিছু নেই বলে মনে করছেন। তাঁর মুচকি হাসি, “পরিণত রসবোধে এ সব শব্দে সমস্যা হয় না! আমাকেও তো কেউ কেউ ভাঁড় বলেন!”

ছোট পর্দার বাহা (রনিতা) বা মানালিরও আপত্তি, মঞ্চে উপস্থিত অভিনেত্রীদের বিঁধে মিরের শব্দচয়ন নিয়ে। তবে মানালি সমালোচনার অধিকারটুকু অস্বীকার করতে চান না। তাঁর বক্তব্য, “আমি মিরদা-র সঙ্গে একমত না-হতে পারি, কিন্তু ওঁর যদি অনুষ্ঠান ভাল না-লাগে এবং তা নিয়ে উনি মন্তব্য করেন তাতে ক্ষতিটা কী?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

eden garden kkr celebration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE