Advertisement
E-Paper

জিৎ-এর সঙ্গে নাচলেন, বিশ্বাস হচ্ছে না অসীমার

২০০৯ সালের মধ্য ডিসেম্বরের কোনও এক হাল্কা শীতের সকাল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেহালার বাড়িতে ছদ্মবেশে পৌঁছে গিয়েছিলেন আমির খান। রাস্তায় কেউ চিনতে পারেনি। সৌরভের বাড়িতেও ঢুকতে বেগ পেতে হয়। শেষমেশ ছদ্মবেশের আড়াল থেকে যখন বেরিয়ে এলেন স্বয়ং নায়ক, সে এক তুমুল হুড়োহুড়ি। নিজের ছবি ‘থ্রি ইডিয়েটস’-এর প্রচারে এ ভাবেই সকলকে চমকে দিয়েছিলেন বলিউড তারকা আমির।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৮
বারাসতে টিম ‘বচ্চন’।

বারাসতে টিম ‘বচ্চন’।

২০০৯ সালের মধ্য ডিসেম্বরের কোনও এক হাল্কা শীতের সকাল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেহালার বাড়িতে ছদ্মবেশে পৌঁছে গিয়েছিলেন আমির খান। রাস্তায় কেউ চিনতে পারেনি। সৌরভের বাড়িতেও ঢুকতে বেগ পেতে হয়। শেষমেশ ছদ্মবেশের আড়াল থেকে যখন বেরিয়ে এলেন স্বয়ং নায়ক, সে এক তুমুল হুড়োহুড়ি। নিজের ছবি ‘থ্রি ইডিয়েটস’-এর প্রচারে এ ভাবেই সকলকে চমকে দিয়েছিলেন বলিউড তারকা আমির। সৌরভের বাড়িতে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে ফেরেন তিনি।

বস্তুত, গত কয়েক বছর ধরেই ছবির প্রচারে বলিউড-টলিউডের নায়ক-নায়িকারা শহর ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছেন নানা দিকে। বলিউডের তারকারা ছুটে বেড়ান দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। টলিউডের নায়ক-নায়িকারা যাচ্ছেন জেলায় জেলায়। এই তো ক’দিন আগের কথা, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবির প্রচারে কলকাতায় এসেছিলেন রণবীর কপুর। ক’দিন আগে ঘুরে গিয়েছেন আলিয়া ভট্ট। শোনা যাচ্ছে, বহু দিন বাদে পর্দায় ফেরা রেখাও নাকি কলকাতায় আসছেন তাঁর ছবি ‘সুপার নানি’র প্রচারে।

পিছিয়ে নেই টলিউড। ‘চাঁদের পাহাড়’ ছবির প্রচারে দেবকে জেলার বহু জায়গায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। একই কায়দায় ‘জাতিস্মর’ ছবির প্রচার চালিয়েছেন প্রসেনজিৎ-ও। পোস্টার, টেলিভিশন প্রোমো বা অন্যান্য প্রচলিত প্রচারমাধ্যম বাদেও প্রয়োজকেরা ইদানীং সরাসরি ছবির গোটা টিমটাকেই নিয়ে হাজির হচ্ছেন জেলায়। তাতে সাড়া মিলছে ভাল, মনে করেন ছবির জগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। জেলার সিনেমা হলগুলিও লাভবান হচ্ছে তাতে। গত কয়েক বছরে বাংলা ছবির জগতে নানা বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। প্রচার কৌশল বদলানো তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বই কী!

নিজের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘বচ্চন’-এর প্রচারে শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি সিনেমা হলে ঘুরে গেলেন অভিনেতা দেব। সঙ্গে ছিলেন ছবির নায়িকা ঐন্দ্রিতা রায়, পরিচালক রাজা চন্দ। নায়ক আসবেন যেনে বনগাঁ শহরের রামনগর রোড এলাকায় শ্রীমা হলে ভোর থাকতে উঠে লোকজন টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২৫ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় ব্ল্যাক হয়েছে, এমন খবরও মিলেছে। যাঁরা টিকিট কেটে শেষমেশ ঢুকতে পারেননি হলে, তাঁরা নায়ককে এক বার চোখের দেখা দেখবেন বলে দীর্ঘ ক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রচুর পুলিশ, সিভিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। হাজার আসনের হল ভর্তির পরেও দর্শকের এমন আগ্রহ দেখে স্বভাবতই উচ্ছ্বাস চাপা রাখেননি হলের মালিক মানিক সাহা। তিনি বলেন, “এমনিতে পুজোর সময়ে ভালই চলেছে ছবিটা। কিন্তু জিৎ-কে দেখতে যে আবেগ দেখলাম মানুষের মধ্যে, তা সত্যি মনে রাখা মতো। নায়ক-নায়িকারা এমন মাঝে মধ্যে জেলার হলগুলিতে এলে প্রযোজক-হল মালিক তো বটেই, ফিল্মের সঙ্গে যুক্ত সকলেই লাভবান হবেন।”

বনগাঁর কিশোরী ঋত্বিকাকে মঞ্চে ডেকে নিলেন ‘বচ্চন’ ছবির নায়ক।

একটা টিকিটের জন্য হলের সঙ্গে যুক্ত সকলের কাছে বুধবার থেকে কাকুতি-মিনতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, নান্তু ঘোষ নামে কর্তৃপক্ষের তরফে এক জন জানালেন, বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছিলেন তাঁদের অনেকেই। তাঁর কথায়, “বাংলা ছবি নিয়ে এই অঞ্চলে এমন ভিড় শেষ কবে দেখেছি, মনে করতে পারছি না।”

জিৎ-এর আসার কথা ছিল বেলা ১টায়, শো শুরুর আগে। কিন্তু রাস্তায় আসতে দেরি হচ্ছিল। হল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়, শো শুরু করে দিতে। ইন্টারভ্যালে হলে ঢুকবেন জিৎ। তার কিছুটা আগেই অবশ্য, বেলা সওয়া ২টো নাগাদ জিৎ পৌঁছে যান বনগাঁয়। কালো-লাল টি-শার্ট আর নীল জিনসের জিৎকে দেখে হলের বাইরে তখন তুমুল হর্ষধ্বনি। লাল পাড়-সাদা শাড়ি পরা মহিলারা ফুল ছুঁড়ে স্বাগত জানান জিৎ-সহ বাকিদের। নাটক-নায়িকা হলে ঢুকে পড়লে বন্ধ করে দেওয়া হয় শো। মঞ্চে উঠে পড়েন জিৎ। দর্শকদের তুমুল চিৎকার, সিটির শব্দে তখন কান পাতা দায়। দর্শকদের উদ্দেশে জিৎ বলেন, “আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। কিছুটা সময় কাটাতে চাই।”

‘বচ্চন’ ছবিটি আগে কেউ দেখেছেন কিনা, জানতে চান নায়ক। পটাপট প্রচুর হাত উপরে ওঠে। দৃশ্যতই তৃপ্ত দেখায় জিৎকে। একটি ছোট মেয়েকে তিনি ডেকে নেন মঞ্চে। ‘বচ্চন’ ছবির কোনও গান সে জানে কিনা, জানতে চান জিৎ। মেয়েটি দু’দিকে মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয়, গান মনে নেই। এরপরে নতুন ছবির একটি সিডি তার হাতে তুলে দিয়ে জিৎ বলেন, “এখান থেকে গানগুলো শুনে নিয়ে শিখে নিও।”

তরুণী অসীমা রায়ও নায়কের ডাকে মঞ্চে ওঠেন। ‘বচ্চন বচ্চন’ বলে গান শুরু হয় বক্সে। অসীমার সঙ্গে নাচের তালে যখন পা মেলালেন নায়ক, তখন হল ফেটে পড়ছে হাততালিতে। অসীমা পরে বললেন, “ওঁর কোনও ছবি আমি বাদ দিই না। সেই জিৎ-এর সঙ্গে আমি নাচলাম? নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না!” বনগাঁর নয়া গোপালগঞ্জের বছর বারোর কিশোরী ঋত্বিকা মালাকার নিজেও কয়েকটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছে। মায়ের সঙ্গে এসেছিল নায়ককে দেখতে। কোনও মতে সুযোগ পেয়ে মঞ্চে ওঠে। জিৎ জানতে চান, “এই ছবির কোনও গান জানা আছে?” ঋত্বিকা গেয়ে ওঠে, “বলি বলি কেসটা বলি, কেষ্টকলির কানাই রে...।” গলা মেলান জিৎ।

প্রায় আধ ঘণ্টা সময় দর্শকদের সঙ্গে কাটিয়ে বনগাঁ ছাড়েন জিৎ। বনগাঁর পরে মছলন্দপুর, হাবরা ও বারাসতের একটি হলেও যান। টিকিট না কাটতে পেরে হলের বাইরে তখনও দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। সব কিছু মিটে যাওয়ার পরে ঘাম মুছতে মুছতে মানিকবাবু বললেন, “উফ, সবই ভাল। কিন্তু কী টেনশন রে বাবা।”

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক এবং সুদীপ ঘোষ।

bachhan simanta moitra hrittika bengali movie promotion jeet জিৎ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy