Advertisement
E-Paper

নিজেকে দেখবেন, মঞ্চেও থাকবেন সুনীলের স্বাতী

এমন নয় যে নাটকটা আগাগোড়াই শুধু ভাল লেগেছে তাঁর। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে নাটক মঞ্চায়নে তবু সায় দিচ্ছেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। কেন? স্বাতীর মত, “সুনীল তো শুধু আমার একার নয়, আরও অনেকের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়! তাই হোক না ওঁকে নিয়ে নাটক! আমি একা কে ঠিক করার?” শুধু এই প্রশ্রয়টুকুই নয়, নাটকে একটি বিশেষ ভূমিকায় মঞ্চেও আসবেন সুনীলজায়া স্বাতী। নাটকের নাম ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়’। গ্রুপথিয়েটার বা সেলুলয়েডে সব যুগেই উঠে এসেছেন আমবাঙালির চেনা বা সাম্প্রতিক কোনও কোনও চরিত্র। ইদানীংকালেও এই ধারা বহমান।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৪
নাটকের মহড়ায় শঙ্কর চক্রবর্তী ও সোনালী চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র

নাটকের মহড়ায় শঙ্কর চক্রবর্তী ও সোনালী চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র

এমন নয় যে নাটকটা আগাগোড়াই শুধু ভাল লেগেছে তাঁর। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে নাটক মঞ্চায়নে তবু সায় দিচ্ছেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়।

কেন?

স্বাতীর মত, “সুনীল তো শুধু আমার একার নয়, আরও অনেকের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়! তাই হোক না ওঁকে নিয়ে নাটক! আমি একা কে ঠিক করার?”

শুধু এই প্রশ্রয়টুকুই নয়, নাটকে একটি বিশেষ ভূমিকায় মঞ্চেও আসবেন সুনীলজায়া স্বাতী। নাটকের নাম ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়’। গ্রুপথিয়েটার বা সেলুলয়েডে সব যুগেই উঠে এসেছেন আমবাঙালির চেনা বা সাম্প্রতিক কোনও কোনও চরিত্র। ইদানীংকালেও এই ধারা বহমান।

মঞ্চে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাতে সাম্প্রতিকতম সংযোজন।

আর একটি কাণ্ডও ঘটছে এই নাটকের সূত্রে। নাটকে স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় চরিত্রটিও রয়েছে। ফলে, শুক্রবার প্রথম শোয়ে বাস্তবের স্বাতী তাঁর মঞ্চ-সংস্করণের মুখোমুখি হবেন।

সিনেমার ক্ষেত্রে এমন কিছু মোলাকাতের নমুনা দেখেছে বাঙালি। যেমন ‘দাদাঠাকুর’ ছবিটি বহরমপুরের হলে দেখতে গিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। তাঁর দৌহিত্র অমিত মুখোপাধ্যায় সেই স্মৃতি উসকে দিয়ে বললেন, “দাদুর ছবিটা ভাল লাগেনি! একটু দেখে বেরিয়ে এসেই ঠাট্টা করেন, নকল দেখতে এত ভিড়! আসলকে কেউ চেনে না।”

ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমা ঘটকও টিভি-তে দেখেছিলেন ঋত্বিক জীবন-আশ্রয়ী ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ছবির দু-একটি ঘটনার সঙ্গে সহমত না-হলেও এই প্রয়াসটি স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। ছবিতে তাঁর আদলে গড়া অনন্যা চট্টোপাধ্যায় অভিনীত

চরিত্রটি দেখে সুরমা বলছেন, “আমার কম বয়সের ছাপ অনেকটাই খুঁজে পেয়েছি।”

মঞ্চের স্বাতী (সোনালী চক্রবর্তী) ও সুনীলকে (শঙ্কর চক্রবর্তী) ইতিমধ্যেই মহড়ায় দেখেছেন স্বাতী। তিনি হাসছেন, “সবটাই অবিকল হয় না কী! তবে দু’জনেই ভাল অভিনয় করছেন। শক্তির (চট্টোপাধ্যায়) ভূমিকায় শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কেও বেশ মানিয়েছে!”

বাস্তবে তিনি রেগে গেলে কী করতেন, তা মঞ্চের ‘স্বাতী’কে বুঝিয়েছেন স্বাতী। সোনালী ও শঙ্কর দু’জনেই স্বাতীর পরামর্শ নিয়েছেন। শঙ্করের কাছে সুনীল হয়ে ওঠাও মস্ত চ্যালেঞ্জ। তাঁর কথায়, “সুনীলদার কোনও জোরালো ম্যানারিজ্ম ছিল না। একটা অদ্ভুত নির্লিপ্ত ভঙ্গি, ফুটিয়ে তোলা বেশ কঠিন।”

“কিন্তু বাস্তব চরিত্রটির অভিব্যক্তি নকল করার বাইরেও এই ধরনের নাটক বা সিনেমায় তথ্যের ভিতটা জরুরি। কারণ অনেকেই এমন বিষয় নিয়ে বেশ স্পর্শকাতর।”--- বলছেন আর একটি সাম্প্রতিক নাটক শম্ভু মিত্র-এর ‘শম্ভু মিত্র’ তথা নাট্যকার সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই নাটকে শম্ভু মিত্র (সুরজিৎ) ও উৎপল দত্তের (সুপ্রিয় দত্ত) একটি বাগ্যুুদ্ধ ছিল ভয়েস-ওভারে। তাতে বলা হয়েছিল, উৎপল কিছু ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভাকে রাজনৈতিক দলের হাতে ব্যবহৃত হতে দিয়েছেন। শোয়ের পরে সাজঘরে ঢুকে এই ‘অতি সরলীকরণ’ নিয়ে আপত্তি

জানিয়ে আসেন উৎপলকন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দত্ত। শম্ভু মিত্রের কন্যা শাঁওলি মিত্র এখনও পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে নীরব। তাঁকে নাটক দেখার আমন্ত্রণ করা হলেও যাননি।

দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে ব্রাত্য বসুর ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ও বহুল আলোচিত। তাতে ঋত্বিক ঘটক, সলিল চৌধুরী, প্রমোদ দাশগুপ্ত, মঞ্জুশ্রী চাকী সরকারদের নিয়ে নানা মুনির নানা মত। ২০০৯ সালে নাটকটির প্রথম অভিনয়ের সময়ে জীবিত সুচিত্রা মিত্র ও জ্যোতি বসু। তাঁরা কেউই নাটকটি দেখতে যাননি। কিন্তু দু’জনেরই কিছু বিতর্কিত দিক নাটকে উঠে আসে। ব্রাত্যর কথায়, “আমি প্রতিটি চরিত্রের দৃষ্টিকোণকেই সম্মান করেছি। কাউকে জিতিয়ে দিইনি, বা ছোট করিনি।”

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মঞ্চে আসার আগেই কিছুটা বিতর্কের ঘ্রাণ। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায় অনুযোগ করেছিলেন, “আমি শুনেছি, নাটকে বলা হয়েছে, শক্তি তরুণ কবিদের পছন্দ করতেন না। যা সর্বৈব অসত্য!” নাট্যকার চিরঞ্জীব বসুর দাবি, “আমি নিজে মীনাক্ষীদির সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়েছি, এ সব নেহাতই রটনা।” নন্দীগ্রাম-পরবর্তী পর্বে সুনীলের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক বা তাঁর বিরুদ্ধে তসলিমা নাসরিনের অভিযোগও মঞ্চে উঠে আসছে। বাংলাদেশের মহিলা কবি বলে একটি চরিত্রও থাকছে।

স্বাতীর মতে, “সুনীলকে নিছক দেবতা বানালে আমার ভাল লাগত না, আবার অহেতুক খারাপ কথা বলাটাও ঠিক হতো না।” নাটকের কয়েকটি মুহূর্ত তাঁর খুব প্রিয়। যেমন, শক্তি-সুনীলের দেখা হওয়ার স্বপ্ন-দৃশ্য। কিংবা সুনীলের এক সময়ের প্রেমিকা ফরাসি তরুণী মার্গারিট (দোয়েলপাখি দাশগুপ্ত) ও সুনীলের দৃশ্য।

পরিচালক দেবাশিস ঘোষদস্তিদার বলছিলেন, “নাটকে ইচ্ছে করেই টাইম-স্পেস গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুনীল ও নীরার একটি দৃশ্যে ২০১৪-র কথাও এসেছে।” নাট্যসমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, “তথ্য নিখুঁত হলে তার প্রয়োগ বা উপস্থাপনায় কিছুটা স্বাধীনতা নেওয়াই যায়!”

অতীতে সুনীলের উপন্যাসে মাইকেল, শ্রীরামকৃষ্ণ, লালন, রবীন্দ্রনাথ, শিশির ভাদুড়িদের চরিত্র-চিত্রণ চায়ের কাপে বহু তুফান তুলেছে। এ বার মঞ্চের সুনীলকে দেখার সময়।

riju basu sankar chakraborty sonali chakraborty dramma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy