Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার-নিগ্রহ চলছেই, পিজিতে ক্ষুব্ধ জুনিয়রেরা

আইন যতই থাকুক, প্রশাসন কড়া না হওয়ায় হাসপাতালে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যাচ্ছে না কোনও ভাবেই।

জখম চিকিৎসক অভয় সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

জখম চিকিৎসক অভয় সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

আইন যতই থাকুক, প্রশাসন কড়া না হওয়ায় হাসপাতালে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যাচ্ছে না কোনও ভাবেই।

এসএসকেএম হাসপাতালে বুধবার এক জুনিয়র ডাক্তারের প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় এই প্রসঙ্গ আরও এক বার সামনে এসেছে। পথ দুর্ঘটনায় আহত চেতলার এক অটোচালকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ওই ডাক্তারকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। হাত-পায়ের হাড় ভাঙা অবস্থায় তিনি এখন উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তারেরা।

এ দিনই দুপুরে চেতলার আর এক বাসিন্দাকে বাঙুর থেকে এসএসকেএমে পাঠানোর পরে অর্থোপেডিক আউটডোরে এক চিকিৎসক তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে বিকেলে হাসপাতালের সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন রোগীর পরিজনেরা। এই রোগীর হাতের দু’টি আঙুল কাটা গিয়েছিল বৃহস্পতিবারই।

বুধবার এসএসকেএমে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা যখন ঘটে, তখন নিজেদের ঘরেই ছিলেন সুপার মানস সরকার এবং অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। সব কিছু জানার পরেও তাঁরা কেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে গেলেন না? কেন অভিযোগ দায়ের করার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন? সুপার বা অধ্যক্ষা এর কোনও স্পষ্ট জবাব দেননি। অধ্যক্ষা শুধু বলেছেন, ‘‘যখন অভিযোগ জানানোর কথা, তখনই জানিয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’’

তাঁরা কিছু না বললেও চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের এক মন্ত্রী তথা এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ফিরহাদ (ববি) হাকিমের নাম জড়িয়ে থাকার সুবাদেই এমন নীরবতা। দুর্ঘটনায় মৃত যুবক বাপি দায় পেশায় অটোচালক, বাড়ি চেতলায়। চেতলাতেই থাকেন ববি হাকিমও। ফলে তাঁর নাম জড়ানোর স্বাভাবিক যুক্তিও শোনা যায়। সুপার বা অধ্যক্ষা এর জবাবে একটি শব্দও বলেননি। ববির দাবি, ‘‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিছু শুনিওনি। কে-কোথায় আমার নাম ব্যবহার করে কী করছে, তার খবর রাখা সব সময়ে সম্ভব হয় না।’’

এ দিন বিকেলে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ সুপারের ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখান। নিজেদের নিরাপত্তা এবং দোষীদের শাস্তির জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপের দাবি জানান তাঁরা। কেন ঘটনার পরে প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাঁরা চুপ করে ছিলেন? এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘‘এই ঘটনায় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম জড়িয়েছে। সেই কারণেই আমাদের এ নিয়ে বেশি মুখ খুলতে বারণ করা হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম, কর্তৃপক্ষ কিছু একটা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তাঁদের তরফে বিশেষ কোনও উচ্চবাচ্য না থাকায় খানিকটা বিবেক দংশন থেকেই আমরা এই পদক্ষেপ করেছি।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে সাগ্নিক রায় জানান, কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই এখনই কোনও বড় আন্দোলনের পথে যাচ্ছেন না তাঁরা।

ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিকেয়ার সার্ভিস পার্সনস অ্যান্ড মেডিকেয়ার সার্ভিস ইনস্টিটিউশনস (প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ টু প্রপার্টি) অ্যাক্ট ২০০৯ অনুযায়ী, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ঢুকে ভাঙচুর চালানো, চিকিৎসক, নার্সদের মারধরের ঘটনা জামিন অযোগ্য অপরাধ। গত ছ’বছরে এই আইনে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হামলার দায়ে বহু লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও এই প্রবণতা বন্ধ হয়নি।

দিন কয়েক আগেই রোগীমৃত্যুর ভুল খবরকে ঘিরে ভাঙচুর হয়েছিল বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে। বাইক, ম্যাটাডোরে চেপে প্রায় ১০০ জন যুবক হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে আইটিইউ-এর ভিতরে ঢুকেও ভাঙচুর চালান তাঁরা। ওই ঘটনায় হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসক ও কর্মীর পাশাপাশি আহত হয়েছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মীও।

বুধবার দুপুরে চেতলার ওই অটোচালক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। অভিযোগ, এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুর পরেই কার্জন ওয়ার্ডে নিরাপত্তাকর্মীদের সামনে অভয় সরকার নামে এক জুনিয়র ডাক্তারের উপরে চড়াও হয় বহিরাগতেরা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার চেতলার বাসিন্দা তিন যুবকের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছে পুলিশ।

লালবাজার জানিয়েছে, অভিযুক্তদের নাম অজয় ঘোষ, দুষ্টু দাস ও মানস দাস। আক্রান্ত চিকিৎসক অভয় সরকার তাঁর লিখিত অভিযোগে ওই তিন জনের নাম জানিয়েছিলেন।

পাশাপাশি, এই ঘটনায় বাপির পরিবার ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সুপারের কাছে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগপত্রও পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নামলেও ভবানীপুর থানা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, দু’টি বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাপি দাসের মৃত্যুতে এ দিন গড়িয়াহাট-রাসবিহারী রুটে অটো বন্ধ ছিল। দুপুরে মৃতদেহ নিয়ে একটি মিছিল করেন অটোচালকেরা। ফলে দুর্গাপুর ব্রিজ কিছু ক্ষণের জন্য কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Junior Doctor PG SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE