বাঁ দিকে, হাসপাতালে স্বাস্থ্য দফতরের দল। ডান দিকে, সেই ডেথ সার্টিফিকেট। —নিজস্ব চিত্র।
রোগীর মৃত্যুতে ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্তের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠল দুর্গাপুরে। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া রক্ত শরীরে যাওয়ার পরে একাধিক রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় বলে অভিযোগ। এক রোগীর মৃত্যুর পরে বেসরকারি হাসপাতালের তরফে কারণ হিসেবে ‘ব্লাড ট্রান্সফিউশন রিঅ্যাকশন’ বলেও জানানো হয়েছে। গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের চণ্ডীদাস এলাকার বাসিন্দা বাচ্চি দেবী (৫৫) ৩১ অগস্ট ডিএসপি মেন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর পরিবারের দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, শরীরে হিমোগ্লোবিন কম আছে। তাঁকে রক্ত দিতে হবে। সেই মতো ১ সেপ্টেম্বর ওই হাসপাতালেরই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এক ইউনিট রক্ত নিয়ে দেওয়া হয় বাচ্চিদেবীকে। পরিবারের অভিযোগ, রক্ত দেওয়ার পর দিন থেকেই রোগীর শরীর আরও খারাপ হয়। খিঁচুনি শুরু হয়ে যায় তাঁর। তড়িঘড়ি তাঁকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর সেখানে তিনি মারা যান। হাসপাতালের সার্টিফিকেটে তাঁর মৃত্যুর কারণ ‘ব্লাড ট্রান্সফিউশন রিঅ্যাকশন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২৮ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়া আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২৯ অগস্ট প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন ইছাপুরের বাসিন্দা বছর তিরিশের পিঙ্কি রায়। তাঁকে ৩০ অগস্ট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত দেওয়া হয়। ৩১ অগস্ট তিনিও মারা যান। একই ভাবে গোপালমাঠের বাসিন্দা জবা দাসকেও ৩১ অগস্ট রক্ত দেওয়া হয়। এই সব ক্ষেত্রেও পরিজনদের দাবি, রক্ত দেওয়ার পরেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে রোগীর। তাঁদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। পরে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ সব ক্ষেত্রে রক্তজনিত কোনও সমস্যাতেই মৃত্যু কি না, তা জানা যায়নি।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দী জানান, কোনও রোগীকে যদি অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ‘ব্লাড ট্রান্সফিউশন রিঅ্যাকশন’-এর সমস্যা হতে পারে। আবার রক্তের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তা রোগীকে দেওয়া হলেও মৃত্যু হতে পারে। এ ছাড়া কোষ ভেঙে যাওয়া রক্ত (হেমোলাইসিস) দিলেও মৃত্যু হতে পারে বলে জানান তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পরে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ডিএসপি-র অন্যতম জনসংযোগ আধিকারিক চিন্ময় সমাজদার বলেন, ‘‘গোটা ঘটনাটি আমাদের কানে এসেছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দফতরকেও জানানো হয়েছে। সেই সব দফতর থেকে প্রতিনিধি দল আসবে।’’ রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পাঁচ সদস্যের দল হাসপাতালে আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy