আন্ত্রিকের প্রকোপে এখনও কাবু কলকাতা। বুধবার এই রোগে শহরে ফের এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্যাংরার বাসিন্দা মহম্মদ সানওয়ার (৪৫) তিন দিন আগে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ দিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ দিনও আইডি-তে আন্ত্রিক নিয়ে ২১৮ জন ভর্তি ছিলেন। শুধু বুধবারেই ভর্তি হয়েছেন ১০৬ জন। শহরের অন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতেও রোগীর ভিড় রয়েছে।
কলকাতা পুরসভার এক মেয়র পারিষদ ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এক কাউন্সিলর সানা আহমেদ-ও আন্ত্রিকে আক্রান্ত। দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। যদিও পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ইন্দ্রাণী গত কয়েক দিন ধরেই পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি। এর সঙ্গে আন্ত্রিকের যোগ নেই। সানা সম্পর্কে পুরসভার বক্তব্য, তাঁর আন্ত্রিক হলেও তার সঙ্গে জলদূষণের যোগ নেই। যদিও চিকিৎসকদের মতে, আন্ত্রিক জলবাহিত রোগ। মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ অবশ্য জানান, এ দিন আন্ত্রিক নিয়ে কলকাতার ৩০ জন আইডি-তে ভর্তি হন। তবে শহর জুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে খবর নেওয়া হচ্ছে, তাতে পেটের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা নগণ্য।
শহরের যে সব চিকিৎসক আন্ত্রিক রোগীদের চিকিৎসা করছেন, তাঁদের কয়েক জনের বক্তব্য, এ বার জলবাহিত হয়ে আন্ত্রিকের যে জীবাণুটি মানুষের শরীরে ঢুকেছে, তা অতি সংক্রামক। তাই কোনও একটি এলাকায় কারও এই সংক্রামক আন্ত্রিক হলে তা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। সে কারণে বাড়িতে কারও আন্ত্রিক হলে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এই ধরণের আন্ত্রিকে শরীর থেকে এত বেশি পরিমাণ জল বেড়িয়ে যাচ্ছে যে, শিশু এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে তাতে অনেক সময়ে রোগীর অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে আইডি হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেকের মত, এ বারের আন্ত্রিকে সংক্রমণ কম হচ্ছে। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য বলছেন, আন্ত্রিকের ছদ্মবেশে কলকাতায় এক ধরনের কলেরার জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছে বিভিন্ন এলাকায়। সেটাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ওই জীবাণুটি বিজ্ঞানীদের পরিচিত। তাই এই প্রতিকারও চিকিৎসকদের জানা।
যে সব এলাকায় আন্ত্রিক দেখা দিয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বাসি খাবার না খাওয়া, রাস্তার খোলা খাবার এড়িয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জল না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। বিশেষত স্কুলগুলিতে বছরের এই সময়টায় ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ স্বাস্থ্য এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেও পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে।
এ দিন আইডি হাসপাতালে ডায়েরিয়া রোগীর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের এক দল কর্মী-সমর্থক আচমকাই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘শহরে আন্ত্রিক, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া হচ্ছে কেন, অপদার্থ পুরসভা জবাব দাও।’ মেয়র ও পুর কমিশনারের যাতায়াতের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। পরে পাঁচ বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বিবেচনার আশ্বাস দেন মেয়র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy