ভারতীয় জ্যোতিষ বা শাস্ত্রে যে পুরুষকারের কথা বলা হয়েছে সেটা আমরা জানতে পারি তৃতীয় ভাব অধ্যয়ন করলে। তাই তৃতীয় ভাব থেকে জাতক/জতিকার পরাক্রম, সাহস, বীরত্ব, মানসিক শক্তি, সাইকিক অনুভূতি ও তপস্যাগত আত্মিক শক্তি বা তার বিকাশ কতটুকু হয়েছে বিবর্তন গত অতীত জীবনে বা এখন আরও কতটুকু হবে তার হদিশ পাওয়া যায়।
নিজের চেষ্টায় যা কিছু আমরা করি, তা তৃতীয় ভাব জানান দেয়। এই ভাব নির্দেশ করে ক্রমাগত জানার ইচ্ছা, বিদ্যা অর্জনের আগ্রহ। আমি যে পরিবেশে জন্মেছি, তার সম্বন্ধে নিরন্তর জানার আগ্রহ। তার চার দিকের ভৌগলিক ও নৈসর্গিক জ্ঞান। এই পরিবেশের সঙ্গে আমরা কতটা জড়িয়ে আছি তা জানা যায় তৃতীয় ভাব থেকে। আমি কতটা সামাজিক বা অসামাজিক তারও নির্দেশ দেয় তৃতীয় ভাব।
পৃথিবীতে যত রকমের যোগাযোগ আছে, তার নির্দেশ এখান থেকে পাই। নিকট ভ্রমণ, সাইকেল, বাস, ট্রাম, রেলওয়ে, টেলিফোন, মোবাইল, ল্যাপটপ, রেডিয়ো, টিভি, সব রকমের যানবাহন, বিমান, সিগন্যাল, চিঠিপত্র ইত্যাদি।
এ ছাড়া তৃতীয় ভাব থেকে জানতে পারি বাল্যকালে স্কুলগত শিক্ষা, জানার আগ্রহের ধরন, নিজের প্রতি বিশ্বাস, যে কোনও গবেষণা করার শক্তি, প্রিন্টিং প্রেস, প্রকাশনা। ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে যে দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক আছে, সেখানে আমার ভূমিকার স্বরূপ।
তারপর তৃতীয় ভাব থেকে আরও জানা যায়, চুক্তি, কমিশন এজেন্ট, দালালি, কন্ট্র্যাক্টরি, দরাদরি করা, সাংবাদিকতা, লেখক, আবৃতি, দোকান ও দোকানদারি। ভাড়া বাড়িতে থাকি না নিজের বাড়িতে থাকি, বোহেমিয়ান জীবন ইত্যাদি।
আমাদের সমাজে যে দাদাগিরির ‘প্রথা’ আছে, মস্তানি বা ডাকাতি করার ইচ্ছা জাগে, তারও ইঙ্গিত পাই আমরা তৃতীয় ভাব থেকে। মোট কথা, যাবতীয় অপরাধের হদিশ মেলে এই ভাব থেকে। কেউ সাধক হতে চায়, ব্রহ্মচর্য পালন করে তপস্যা করতে চায় তার ইচ্ছার প্রতিফলনও তৃতীয় ভাব থেকে জানতে পারি।
এ বার বিভিন্ন গ্রহ তৃতীয় ভাবে অবস্থান করলে কি ধরনের ফল পাওয়া যায়, তার নির্দেশ জানার চেষ্টা করা যাক—
রবি তৃতীয় ভাবে থাকলে কী ফল দেয়: জাতক/জাতিকা তার চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়। সে বিশেষ ভাবে সামাজিক ও পরোপকারী। প্রতিবেশী বা নাগরিক সমাজের সঙ্গে আত্মিক বন্ধনে জড়িয়ে থাকে। এরা যতটা বুদ্ধিমান ঠিক ততটাই সামাজিক। অল্প বয়সেই যারা মোটরসাইকেল চড়ে তাদের তৃতীয়ে রবি থাকে। এই ভাবে রবি থাকার জন্য পিতা বা সরকারের সঙ্গে বিবাদ বা দ্বন্দ্ব বাধে। আর এরা যে বিষয় শেখে সেটা দক্ষ ভাবেই শেখে। গবেষণার ক্ষেত্রে এরা উন্নতি করে।
চন্দ্র তৃতীয় ভাবে থাকলে কী ফল দেয়: পরিবেশ সম্বন্ধে রবি যেমন ফল দেয়, চন্দ্রও তেমনই ফল দেয়। তবে চন্দ্র আরও বিস্তারিত ফল দেয়।
ছোটবেলার স্কুল জীবন, তা সে ভাল বা খারাপ যাই হোক, তার প্রভাব পরবর্তী জীবনে কী ভাবে পড়ে সেটা জানা যায় তৃতীয় ভাবে চন্দ্র কী ভাবে প্রভাব ফেলছে তার উপর।
এদের জীবনে পরিবেশের পরিবর্তন ঘন ঘন ঘটে। আজ এক স্থানে তো কিছু দিন পর অন্য স্থানে বাস করে। এরা জীবন সংগ্রামের খুব একটা ঘাত সইতে পারে না, অল্পে ভেঙে পড়ে।
প্রচুর পড়াশুনা করতে পারে বা জানে কিন্তু অগভীর জ্ঞান। এরা সহজেই এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে চলে যেতে পারে। এরা সব সময় মানসিক ভাবে উত্তেজিত থাকে। তাই সব সময় নতুন নতুন বিষয়ে আবতারণা করে। এদের সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে থাকে।
(ক্রমশ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy