Advertisement
E-Paper

শুখা বিহারে বিষ-মদে মৃত ১৪, অসুস্থ ৩০

নীতীশ কুমারের ‘শুখা’ বিহারেই বিষ-মদ খেয়ে মারা গেলেন ১৪ জন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন প্রায় ৩০ জন। ‘নিষিদ্ধ রাজ্যে’ পুলিশের জেরা ও গ্রেফতারি এড়াতে অনেক অসুস্থকে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তাঁদের পরিবারের লোকজন।

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪২

নীতীশ কুমারের ‘শুখা’ বিহারেই বিষ-মদ খেয়ে মারা গেলেন ১৪ জন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন প্রায় ৩০ জন। ‘নিষিদ্ধ রাজ্যে’ পুলিশের জেরা ও গ্রেফতারি এড়াতে অনেক অসুস্থকে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তাঁদের পরিবারের লোকজন। বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকার নোনিয়া টোলা এলাকার এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাজ্য জুড়ে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ৫ এপ্রিল রাজ্যে মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর এই প্রথম বিষ-মদে মৃত্যুর কথা সরকারি ভাবে স্বীকার করা হল। অভিযোগ, এর আগে অন্তত পাঁচটি এমন ঘটনা ঘটেছে গয়া, সারণ, পটনা, পশ্চিম চম্পারণ ও খগারিয়া জেলায়। যদিও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন তা স্বীকারই করেননি, বরং সুযোগ বুঝে তা ধামাচাপা দিয়েছেন। আর মৃতদের পরিবারও পুলিশি হয়রানির ভয়ে কোনও অভিযোগ না জানিয়ে আগে ভাগেই দেহ দাহ করে দিয়েছে। ফলে ময়নাতদন্তের কোনও প্রশ্নই ওঠেনি। তবে এ বার গোপালগঞ্জের ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসে যাওয়ায় ময়নাতদন্ত না করানোর আর কোনও সুযোগ পরিবার বা পুলিশ-প্রশাসন কেউই পায়নি। এই ঘটনাকে ঘিরে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে একটি চিনির মিল। তার কাছেই মদের আড্ডা। রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ আইন চালু হলেও সেখানে জমিয়েই মদ বিক্রি চলছিল। এই মদের আড্ডাতেই ১৫ অগস্ট রাতে মৃত ও অসুস্থরা মদ খেয়েছিল বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। বাসিন্দাদের বক্তব্য, আগে এখানে মদ তৈরি হলেও এখন তা হয় না। বাইরে থেকে চোরা পথে মদ এনে তাতে মশলা মিশিয়ে বিক্রি করা হত। সেই মশলা মদ থেকেই বিষক্রিয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দা রিমা কুমারীর কথায়, ‘‘গত কাল সকাল থেকেই ওরা অসুস্থ হতে শুরু করে। বিকেলে গ্রামের ২০ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে পুলিশের ভয়ে কেউই হাসপাতালে যেতে চায়নি।’’ এরপর রাত থেকে শুরু হয় মৃত্যু-মিছিল। টনক নড়ে গ্রামবাসীদের। পুলিশি ভয়-ভীতি ঝেড়ে ফেলে একের পর এক দেহ নিয়ে পরিবারের মানুষ জড়ো হয় গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে।

পুলিশের কর্তারা বিষ মদে মৃত্যুর কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জেন এম পি শর্মা বিষ মদে মৃত্যুর কথা বলে ফেলায় সমস্ত বিষয়টি জানাজানি হয়। সিভিল সার্জেনের বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মদে বিষক্রিয়ার ফলেই এদের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ নিয়ে যা কিছু বলার তা পুলিশ কর্তারা বলবেন।’’ রাজ্য পুলিশের আইজি (মুজফ্ফরপুর) সুনীল কুমার বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’’ ওই গ্রাম থেকে পুলিশ বেশ কিছু দেশি মদ উদ্ধার করেছে। চার জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

বিষমদ কাণ্ডের জেরে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। দলের নেতা নন্দকিশোর যাদব বলেন, ‘‘বিষ-মদে মানুষের মৃত্যুর দায় মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই বর্তাচ্ছে। বিহারের মানুষের কাছে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে।’’ বিজেপির একাংশের দাবি, এটাই প্রথম ঘটনা নয়। গত ২৭ এপ্রিল প্রথম ঘটনা ঘটে পটনা সিটির রিকাবগঞ্জ এলাকায়। সেখানে ৩ জনের মৃত্যু হয় বিষ মদে। ২২ জুন ও ৩১ জুলাই গয়ায় তিনজন বিষ মদে মারা যায়। ২৪ জুন সারণে বিষ মদে ৪ জনের মৃত্যু হয়। ২ অগস্ট খগারিয়ায় একই ভাবে ৪ জনের মৃত্যু হয়।

বিজেপির অভিযোগ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবারের লোকেরা পুলিশের ভয়ে অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেনি। আগেভাগেই দেহ পুড়িয়ে দেয়। পুলিশও নিজেদের পিঠ ও চাকরি বাঁচাতে ঘটনাগুলি চেপে যায়। উল্লেখ্য, তাঁদের এলাকায় মদ উদ্ধার হওয়ায় বিহারের ১১টি থানার ওসিকে ১০ বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছে নীতীশ সরকার। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, সুতরাং পুলিশ তো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেই। জেডিইউ মুখে কুলুপ এঁটেছে। তবে লালুপ্রসাদ-রাবড়ীদেবীদের গড় হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জের এই ঘটনার পর আরজেডি নেতা মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি এই ঘটনার পিছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।’’

Dry Bihar Liquor Bihar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy