সুতোর উপর ঝুলছে ইরাকে বন্দি ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ। এত দিন ৩৯ জন ভারতীয় নাগরিক আইএসআইএল জঙ্গিদের হাতে বন্দি ছিলেন। এ বার তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলেন তিকরিতে আটকে পড়া ৪৬ জন নার্স। আজ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, এত দিন যে হাসপাতালের বেসমেন্টে তাঁরা আত্মগোপন করেছিলেন সেখান থেকে তাঁদের ‘বের করে নেওয়া হয়েছে’। তাঁরা আপাতত ‘নিরাপদে’ আছেন। কিন্তু পরিস্থিতি কখন কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। একটি সূত্রের দাবি, ওই নার্সদের উত্তর ইরাকের মসুলে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে জঙ্গিরা।
নিরাপত্তার খাতিরে ভারত নার্সদের জঙ্গিদের হাতেই বন্দি হওয়ার কথা সরকারি ভাবে জানায়নি। তবে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, স্বেচ্ছায় নার্সেরা কোথাও যাননি। তিকরিতে ইরাকের সেনা ও প্রশাসন ব্যবস্থা যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে তা মেনে নিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ফলে বিষয়টি এমনও নয় যে, ইরাকি সেনা ওই নার্সদের সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ।
ফলে প্রশ্ন উঠছে কোথায় নিয়ে যাওয়া হল নার্সদের? কেনই বা তাঁদের প্রাণে বাঁচিয়ে রেখে সরিয়ে নেওয়া হল? নিরাপত্তার গ্যারান্টিই বা কে দিচ্ছে? আদৌ স্পষ্ট নয় চিত্র। ওই নার্সরা কেরলের বাসিন্দা। আজ দিল্লিতে আসা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ইরাকে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে বার বার নেওয়া হয়েছে পরিস্থিতির খতিয়ান। সূত্রের খবর, আজ তিকরিতের যে হাসপাতালে নার্সরা ছিলেন তা জঙ্গিরা দখল করে নেয়। বেসমেন্টের কাছেও চলে আসে তারা। নার্সদের প্রাণ বাঁচাতে আপাতত জঙ্গিদের কথা মেনে নিতে তাঁদের নির্দেশ দেয় সাউথ ব্লকই।
ভারতীয় বন্দিদের নিয়ে আইএসআইএল জঙ্গিরা কী করতে চায় তা এখনও স্পষ্ট নয়। মসুলে অপহৃত ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও কোনও মুক্তিপণ চায়নি তারা। তবে নয়াদিল্লি যে হাল ছেড়ে দিচ্ছে না, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন। তাঁর কথায়, “বাধার পাথরকেই আমরা উপরে ওঠার জন্য কাজে লাগাতে চাইছি। আর এই লড়াইয়ে আমরা একা নই। ইরাকের ভিতরে এবং ইরাকের বাইরেও আমাদের মিত্ররা রয়েছে।”
সিরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং ইরাকের উত্তরে কুর্দ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। আজ ইরাকের সঙ্গে সীমান্ত বরাবর প্রায় ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছে সৌদি আরবেরই এক সরকারি চ্যানেল। তথ্য বলছে, ইরাকের সঙ্গে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে সৌদি আরবের। জল্পনা আইএসআইএল জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ তীব্র হওয়ার পর সে এলাকা থেকে সরে গিয়েছে ইরাকি সেনাও। ওই এলাকা কার্যত জঙ্গি-দখলে। দেশের সুরক্ষার জন্য তাই সীমান্ত বরাবর সক্রিয়তা বাড়িয়েছে সৌদি আরব।
খবরের পাশাপাশি ওই চ্যানেল একটি ভিডিও সম্প্রচার করেছে। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সীমান্ত থেকে সরে আসা ইরাকি সেনাবাহিনীর অন্তত আড়াই হাজার সদস্য কারবালা শহরে রয়েছেন। এমনকী কোনও রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই তাঁদের যে সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে ভিডিওতে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও শোনা গিয়েছে এক অফিসারকে। যদিও ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর সেনা মুখপাত্র এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এই সব ভুয়ো খবর ছড়িয়ে আমাদের সেনা এবং দেশবাসীর মনোবল কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
সত্যি যা-ই হোক না কেন, সৌদি আরব যে নিরাপত্তা-প্রশ্নে বেশ উদ্বিগ্ন, তা এ দিনের পদক্ষেপেই স্পষ্ট। তথ্য বলছে, প্রায় এক দশক আগে দেশের সন্ত্রাসবাদের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে মার্কিন-ঘনিষ্ঠ এই দেশটি।
কিন্তু এটা স্পষ্ট, যে পড়শি ইরাকে যে ভাবে অস্থিরতা চলছে, তার প্রভাব এসে পড়তেই পারে সৌদি আরবে। অনুপ্রবেশের মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে। সময় থাকতে তাই সৌদি আরবের রাজা আবদুল্লা নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছে ওই চ্যানেলটি। গত মাসে তুরস্কের ৩২ জন ট্রাক ড্রাইভারকে বন্দি করেছিল আইএসআইএল। তাঁরা এ দিন মুক্তি পেয়েছেন বলে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy