Advertisement
০২ মে ২০২৪
৫২ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ

সিকিম নিয়ে জেটলিকে চিঠি রাজনাথের

পত্রাঘাত! তা-ও একেবারে সরকারের শীর্ষ দুই মন্ত্রীর মধ্যে! আর তাকে ঘিরেই সরকারের শীর্ষ স্তরে রীতিমতো চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০০
Share: Save:

পত্রাঘাত! তা-ও একেবারে সরকারের শীর্ষ দুই মন্ত্রীর মধ্যে! আর তাকে ঘিরেই সরকারের শীর্ষ স্তরে রীতিমতো চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে।

এমনিতেই ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাতিলের জেরে মানুষের অভাব-অভিযোগ নিয়ে সরব বিরোধীরা। তার মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অব সিকিমের ৫২ হাজার অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে তীব্র ক্ষোভ জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সংসদ চলাকালীনই এই ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে বিজেপি। রাজনাথ শিবিরের দাবি, সিকিমের আমজনতা টাকা তুলতে পারছেন না, তা নিয়ে ক্ষোভ তো বাড়ছেই। এ দিকে চিনের প্রেক্ষিতে রণকৌশলগত ভাবে সিকিমের অবস্থান ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সিকিমের মতো সংবেদনশীল রাজ্যে এ ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে না জানিয়ে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে সরব হয়েছেন রাজনাথ।

চিঠিতে রাজনাথের বক্তব্য, নোট বাতিলের পরে সরকারের লক্ষ্যই হল মানুষের কাছে সুষ্ঠু ভাবে টাকা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সিকিমে প্রায় ৫২ হাজার অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে বন্ধ করায় সমস্যায় পড়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। রাজনাথের মন্তব্য, অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্তে আখেরে সরকারের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে।

রাজনাথের এই কড়া বয়ান ঘিরে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। প্রশ্ন উঠছে, এত বিপুল সংখ্যক অ্যাকাউন্ট বন্ধের ব্যাপারে রাজনাথের মতোই জেটলিও কি অন্ধকারে ছিলেন? নিজেরাই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আরবিআই ও অর্থ মন্ত্রকের আমলারা? রাজনাথ শিবিরের একাংশের মতে, জেটলিকে চিঠি লিখে আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন রাজনাথ। বিজেপির একাধিক নেতার মতো তিনিও ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে ক্ষুব্ধ। উত্তরপ্রদেশের ওই ঠাকুর নেতার কাছে সমস্যা হল, তাঁর রাজ্যে ভোট কড়া নাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের সরাসরি সমালোচনা না করে চিঠির মাধ্যমে তিনি আমজনতার নোট-ভোগান্তির বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছেন।

চলতি বিতর্কের সূত্রপাত সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং দিল্লি এসে রাজনাথের সঙ্গে দেখা করার পরে। তিনি রাজনাথকে জানান, রাজ্যের বহু মানুষের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা টাকা তুলতে পারছেন না। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, কালো টাকা রুখতেই এই সিদ্ধান্ত। কেন না নোট বাতিলের ঘোষণার পরে দেখা যায়, স্টেট ব্যাঙ্ক অব সিকিমের একাধিক অ্যাকাউন্টে হঠাৎ করে বড় মাপের অর্থ জমা হতে শুরু করে। অর্থ মন্ত্রকের আশঙ্কা, ওই টাকার অধিকাংশই কালো। যা সাদা করতে সিকিমবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হচ্ছিল। তাই যত দিন না টাকার উৎস জানা যাচ্ছে, তত দিন বিতর্কিত অ্যাকাউন্টগুলি সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় আরবিআই।

১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও সংবিধানের ৩৭১-এফ ধারায় বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকে। আয়করের ১০ নম্বর ধারা (২৬এএএ) অনুযায়ী, সেখানকার উপজাতির লোকেদের আয়কর দিতে হয় না। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, এর সুযোগ নিয়ে উত্তর-পূর্বের বেশ কিছু রাজ্যের অসাধু ব্যবসায়ী এমনকী পশ্চিমবঙ্গের একাধিক প্রভাবশালীও ওই সব লোকেদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখছিলেন। ফলে গত ক’দিনে সিকিমের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার হার অস্বাভাবিক বাড়ে। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, তাই ওই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় আরবিআই।

রাজনাথ বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ায় অস্বস্তিতে অর্থ মন্ত্রক ও আরবিআই কর্তারা। সূত্রের খবর, দ্রুত এই সমস্যা মেটানোর জন্য মন্ত্রক কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন জেটলি। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে সবক’টি অ্যাকাউন্ট তদন্ত করা সম্ভব নয়। তাই যে গ্রাহকেরা বড় মাপের অর্থ জমা দিয়েছেন, তাঁদের অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হবে। গ্রাহক আয়ের উৎস দেখাতে পারলে সেই অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajnath singh Arun Jaitley Sikkim Issue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE