এনআরসি নিয়ে আশঙ্কার শেষ নেই। এখন চলছে আবেদনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া নথিপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ। আর এই কাজ যত এগোচ্ছে, জালিয়াতির নানা রকমের ঘটনা তত সামনে আসছে। তা থেকে মুক্ত নয় কাছাড় জেলাও। এনআরসি-র এক
সূত্রে প্রকাশ, বেশি জাল হয়েছে জন্মের প্রমাণপত্র।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কাছাড় জেলায় এখনও পর্যন্ত ১০ লক্ষ ২১ হাজার ২৫০টি নথি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে নিজের জেলার আবেদনকারী যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন অন্য জেলার
বাসিন্দারাও। বর্তমানে অন্য জায়গায় থাকলেও তাঁরা নাগরিকত্ব প্রমাণে পুরনো রেকর্ড হিসেবে কাছাড়ের নথি পেশ করেছেন। জেলা এনআরসি ইউনিট ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৯১ হাজার ৬০০টি নথিপত্র পরীক্ষার কাজ সেরে নিয়েছে। অর্থাৎ কাজ এগিয়েছে ৫৭.৯৩ শতাংশ। আর তাতেই ৫৭ হাজার নথি জাল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেগুলি আরও এক বার খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে তাই নতুন নথিপত্র পরীক্ষার সঙ্গে সন্দেহজনকগুলিরও পর্যালোচনা চলছে।
সরকারি সূত্রে খবর, জাল বলে পুরো নিশ্চিত হওয়ার পর কাছাড়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে এজাহার দেওয়া হয়েছে। ৫টি কাটিগড়ায় ও ৫টি উধারবন্দে। সবকটি মামলা হয়েছে জাল জন্ম-শংসাপত্রের জন্য।
যে ভোটার তালিকায় বিদেশির নাম ঢুকে যাচ্ছে বলে বিতর্ক, সেই ভোটার তালিকাতেও জালিয়াতি হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যে সব সরকারি নথি নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে, সেগুলির রেকর্ড সরকারি দফতরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাল না হলেও তাদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। সন্দেহের খাতায় রয়েছে সেগুলিওজমা পড়া নথিপত্রের অধিকাংশ জন্মের শংসাপত্র। আগে সেগুলি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হতো। রেকর্ড ঘেঁটে পরীক্ষানিরীক্ষা সেরে ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগত। এখন জেলাশাসকের অফিসেই স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বসানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। গোলমাল ধরা পড়েছে চা বাগানের নিজস্ব হাসপাতালের নামে জারি করা করা জন্মের শংসাপত্রেও। সেগুলিকেও ভাল করে দেখা হচ্ছে আবার। এ ছাড়াও সন্দেহজনক রয়েছে ডাকঘরের কিছু পাসবই, রেশন কার্ডও। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক এনআরসি কর্তার আক্ষেপ, জাল নথির সবাই যে বাংলাদেশি, এমন নয়। অনেক প্রকৃত ভারতীয় দালালের খপ্পড়ে পড়ে আসল কাগজপত্রের সন্ধান না করে জাল নথি জমা দিয়েছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে বাবার ১৯৭১ সালের যে নথি দেওয়া হয়েছে, তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ছেলের জন্মের শংসাপত্রটি জাল। কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কম্পিউটারের সাহায্যে তথ্যবিকৃতি ঘটানো হয়েছে।’’ সবই খুব ভালো করে খতিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এনআরসি নথি পরীক্ষার কাজে কাছাড় জেলা ক্রমে অবস্থার উন্নতি করেছে। জেলাভিত্তিক তালিকায় এই মাসে সবচেয়ে বেশি নথি পরীক্ষা হয়েছে এখানে। ৪ হাজার ২৯০টি। এর পরই বরপেটায় ৩ হাজার ৫০৪টি। কামরূপে ৩ হাজার ২৭৪টি। তবে মোট নথি পরীক্ষার হিসেবে কাছাড় এখন তৃতীয় স্থানে। এর আগে রয়েছে নগাঁও ও বরপেটা। ওই দুই জেলায় নথি পরীক্ষা হয়েছে ক্রমে ৯ লক্ষ ৬২ হাজার ও ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ২০০। সেখানে বরাক উপত্যকার অন্য দুই জেলার অবস্থান বেশ নীচে। করিমগঞ্জ ৮ নম্বরে, হাইলাকান্দি ২১-এ। পুরো তালিকার সর্বনিম্নে ডিমা হাসাও। আবার শতাংশের হিসেবে দেখলে ছবি বদলে যায়। সে জায়গায় গোলাঘাট ও নলবাড়ি ক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। গোলাঘাটে মোট নথির ৯১.৯৩ শতাংশের পরীক্ষা সম্পন্ন। নলবাড়িতে হয়েছে ৮৯.৪৯ শতাংশ। কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন বলেন, ‘‘নানা কারণে শুরুর দিকে কাজকর্ম বিশেষ এগোচ্ছিল না। পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এতেই ফল মিলেছে।’’ তবে কাছাড়ের নথির বিশালতাও শতাংশের হিসেবকে এগুতে দিচ্ছে না। কাছাড় জেলায় যখন ১০ লক্ষ ২১ হাজার ২৫০টি নথি পরীক্ষা করতে হবে, তখন গোলাঘাটকে করতে হবে মাত্র ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৩৫০টি। নলবাড়ির মোট নথির সংখ্যা ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৫০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy