গন্ডার হত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হওয়ার উপক্রম। সম্প্রতি পুলিশ ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর অভিযানে মোট ৪ জন বনকর্মী ও ১০ জন শিকারিকে ধরা পড়েছে। ধরা পড়েছে আরপিএফের এক জওয়ানও। গন্ডার হত্যায় পুলিশকর্তার দেহরক্ষী জড়িত থাকার ঘটনাও জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে সর্ষের মধ্যে লুকনো ভূতের সন্ধান একে একে বেরিয়ে এলেও প্রকৃত মাথাদের আদৌ ধরা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে পুলিশও।
শিকারি-বনকর্মীদের আঁতাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পশুপ্রেমীরা সরব। কিন্তু প্রমাণ মিলছিল না। ওরাং জাতীয় উদ্যানে শিকারে সাহায্য না করায় দুই রক্ষী অন্য এক রক্ষীকে গুলি করে মারে। সেই ঘটনা সামনে আসায় বন দফতরের মুখ পুড়েছে। এরপর ব্রিটিশ রাজদম্পতি কাজিরাঙায় থাকাকালীনই ফের গন্ডার হত্যা হয়। নগাঁও পুলিশ তদন্তে নেমে তিন শিকারিকে গ্রেফতার করে। তাঁদের জেরা করে নাগাল্যান্ডে খড়্গ বিক্রি করতে যাওয়া এক আরপিএফ জওয়ানকেও ধরা হয়। এর পর ফের জখলাবান্ধায় ধরা পড়ে তিন বনরক্ষী ও এক প্রাক্তন অস্থায়ী বনকর্মী। ধরা পড়ে চার চোরাশিকারিও। দু’দিন আগে বিশ্বনাথ জেলার চতিয়ায় ফের গন্ডার মারা হয়। গত কাল সেখানেও ধরা পড়ে চার শিকারি। আজ ফের কাজিরাঙায় গন্ডার শিকার অভিযানে যাওয়ার আগেই দুই শিকারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বনকর্মীরা শিকারিদের সাহায্য করে ধরা পড়ায় বন দফতর উদ্বিগ্ন। অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপালের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়েছেন বনমন্ত্রী এটোয়া মুণ্ডা। শুধু বনরক্ষী নয়, কার্বি আংলংয়ের দুই পুলিশকর্মী ও জঙ্গিরা শিকারিদের সঙ্গে গন্ডার মারছে বলে কিছু দিন আগে সেখানকার এসপি রিপোর্ট দিয়েছিলেন। পরে অভিযুক্ত দুই পুলিশকর্মী ফেরার হয়ে যায়। তাদের সাসপেন্ডও করা হয়। কাজিরাঙার এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘গন্ডার শিকার রোধে এসটিএফ গড়ে দেওয়ার পরে প্রথম শীর্ষ কর্তা আর এম সিংহ কাজিরাঙায় এসে তদন্ত শুরু করলেও পরের দুই ভারপ্রাপ্ত আইজি কাজিরাঙায় পাও দেননি।’’
২০১৪ সালে গন্ডার শিকার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১৫ সাল থেকে সিবিআই সাতটি ঘটনা নিয়ে তদন্তে নামে। কিন্তু তাদের তরফেও অভিযোগ ছিল, পুলিশ ও বনবিভাগ সিবিআইয়ের তরফে চেয়ে পাঠানো সব তথ্য ঠিক মতো সরবরাহ করেনি।
এত তদন্ত, এত সুরক্ষার পরেও গন্ডার হত্যা বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত শিকারি ও বনকর্মীদের জেরা করে জানা গিয়েছে, গন্ডার নিধন চক্রে বনকর্তাদের একাংশও জড়িত। কেটে নেওয়া খড়্গ মায়ানমারে এক কোটি আর চিনে দেড় কোটি টাকায় বিক্রি হলেও স্থানীয় শিকারি, পথ-প্রদর্শক, বনরক্ষীরা মাত্র ৫০ হাজার থেকে ২-৩ লক্ষ টাকা করে পায়। ডিমাপুরই গন্ডার-শিকার চক্রের মূল কেন্দ্র। শিকারের জন্য প্রয়োজনীয় অগ্রিম টাকা ধার দেওয়ার মহাজনরাও সেখানেই থাকে। মায়ানমার হয়ে চিনে খড়্গ পাঠানোর চক্রের সঙ্গে এনএসসিএনেরও যোগ রয়েছে। নেচার্স বেকনের সভাপতি সৌম্যদীপ দত্ত দীর্ঘদিন ধরেই শিকারি ও বনকর্মী আঁতাত নিয়ে সরব। তিনি এই ঘটনায় নতুন করে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন।
জেরা করে পাওয়া তথ্যগুলি নিয়ে নগাঁওয়ের এসপি ওয়াই কে গাস্টো এবং বিশ্বনাথের এসপি অঙ্কুর জৈন রিপোর্ট দিয়েছেন। শিকার-চক্রের জাল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে জানিয়ে অঙ্কুর বলেন, ‘‘এই চক্র এতটাই বড় যে কোনও রিপোর্টেই এদের নির্মূল করতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy