রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন হারাধন দাস। সেই তামার শঙ্খ (ইনসেটে)। — নিজস্ব চিত্র।
তামার শাঁখ তৈরি করে জাতীয় পুরস্কার পেলেন গড়বেতার হলদিনালার যুবক হারাধন দাস। কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের উদ্যোগে দিল্লিতে আয়োজিত হস্তশিল্প প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছিলেন হারাধনবাবু। সেখানেই শিল্পকর্মের জন্য জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। সম্প্রতি দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন হারাধনবাবু।
ছোট থেকেই অভাব তাঁর নিত্যসঙ্গী। বাবা নন্দলাল দাস মাটির হাঁড়ি, সরা তৈরি করে সংসার চালাতেন। একসময় সেই ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেলে নন্দলালবাবু মিষ্টি ফেরি করতেন। দুই ছেলে নিমাই ও হারাধনকে কখনও অভাবের কথা বুঝতে দেননি। ঘাটালের মনোহরপুরে লালু দাসের কাছেই শিল্পকর্ম শেখার হাতেখড়ি হারাধনবাবুর। পরে ঘাটাল শহরের শ্যামপুরে সঞ্জয় সামন্তের কাছেও হাতের কাজ শেখেন তিনি।
২০০১ সালে বাড়িতেই দোকান খোলেন হারাধনবাবু। তখন তামার হার, নেকলেস, বালা, আংটি তৈরি করতেন তিনি। এখন গড়বেতা শহরে তিনি নতুন দোকান করেছেন। বছর সাঁইত্রিশের হারাধনবাবুর কথায়, “২০০৫ সালে ব্লক শিল্প আধিকারিক মিলনকান্তি ওঝা আমার তৈরি তামার গয়না নিয়ে জেলা হস্তশিল্প মেলায় যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ দেন। এরপর থেকেই ফি বছর জেলা ও রাজ্য স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে শুরু করি।”
২০০৯ সালে তামার গণেশ তৈরি করে জেলা ও রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় হারাধনবাবু প্রথম হন। আরও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হারাধনবাবুর কথায়, “নানা জায়গায় পুরস্কার পাওয়ার পরই জাতীয় স্তরের প্রদর্শনীতে যাওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করি। তামার শাঁখ তৈরি করা ও দিল্লিতে জাতীয় স্তরের হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার কথাও তখনই ঠিক করি।’’ প্রতি বছর কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক দেশের হস্তশিল্পীদের তৈরি সামগ্রী নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের অধীন রাজ্যের ‘ডেভেলপমেন্ট অব কমিশনার’ (হ্যান্ডিক্রাফ্ট)-এর কাছে আবেদন জানাতে হয়। সব শর্তাবলী পূরণ করে দিল্লিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে যোগদানের সুযোগ পান হারাধনবাবু। দফতরের আধিকারিক মৌসুমি গুহ বলেন, “গড়বেতার ওই যুবক শিল্পকর্মের জন্য রাষ্ট্রপতি
পুরস্কার দিয়েছেন।’’
হারাধনবাবুর কথায়, “বাবা বেঁচে থাকলে আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা শুনে আনন্দ পেতেন। বাবা না থাকলে কোথায় হারিয়ে যেতাম। এ বার দোকাটাই ভাল করে চালাব। তামার গয়না নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও যোগ দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy