পুলিশ কনভয়ে আক্রমণ চালানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের মণিপুর পুলিশের উপরে ফের বড় হামলা চালাল নাগা জঙ্গিরা। এ বার নবগঠিত নোনে জেলার নুংকাও এলাকায় সাত নম্বর ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের চৌকিতে হানা দিয়ে অস্ত্র লুঠ করে নিল জঙ্গি বাহিনী। রাজ্য সরকার ঘটনার জন্য সংঘর্ষবিরতিতে থাকা এনএসসিএন আই-এমকে দায়ী করলেও আই-এম দায় এড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার টেংনাউপালে পুলিশ কনভয়ে জোড়া হামলার পরেও ইবোবি জেলা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানগুলি বাতিল করছেন না। গত কালই তিনি চূড়চাঁদপুর ভেঙে তৈরি নোনে জেলার উদ্বোধন করেন। তাঁর দাবি, জঙ্গিদের বুলটে, মণিপুর সরকারকে নত করতে পারবে না। মণিপুরে নাগা এলাকাগুলি ভাগ করে নতুন জেলা গঠন করার পর থেকেই নাগাদের বিক্ষোভ চলছে। জঙ্গি হানার পিছনেও সংঘর্ষবিরতিতে থাকা এনএসসিএন আই-এম রয়েছে বলে সরকারি ভাবে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের কাছে জঙ্গিদের মোকাবিলায় অতিরিক্ত ৬০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছে। আই-এমের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি ভাঙার দাবি তুলেছে রাজ্য। গত কাল নাগা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রাজ্য বন্ধও পালিত হয়েছে। তার মধ্যেই এ দিন নোনেতে ফের হামলা হল।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ বার আর লুকিয়ে বা রাতের অন্ধকারে নয়, সকাল ১১টা নাগাদ প্রায় ৭০ জন সশস্ত্র জঙ্গি নুংকাওতে থাকা আইআরবি পোস্টে আক্রমণ চালায়। আরপিজি লঞ্চার, মর্টার, মেশিনগান, স্বয়ংক্রিয় বিদেশি রাইফেল নিয়ে কয়েকটি গাড়ির কনভয় করে জঙ্গিরা রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের পোস্ট ঘিরে ফেলে। অনেক কম সংখ্যায় থাকা জওয়ানরা ভয়ে প্রতিরোধের পথে যাননি। জঙ্গিরা পোস্টে হামলা করে অনেক অস্ত্র ও গুলি নিয়ে গিয়েছে বলে জানা গেলেও লুঠ হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা সরকারিভাবে জানানো হয়নি। বেসরকারি সূত্রে খবর অন্তত ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুঠ হয়েছে। খবর পেয়ে জিরিবাম, চূড়চাঁদপুর ও ইম্ফল থেকে বিরাট বাহিনী নোনেতে যায়। জঙ্গিদের দলটিকে ধরতে শুরু হয় অভিযান। দফায়-দফায় গুলির লড়াই চলে।
এই ঘটনার পরে অবিলম্বে আই-এমের সঙ্গে চলা সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভাঙার দাবি তুলেছে মণিপুর সরকার। শাসক দল কংগ্রেসের দাবি, নাগা জঙ্গিদের সঙ্গে নাগাল্যান্ডে চুক্তি কার্যকর হলেও তার সুবিধে নিয়ে তারা মণিপুরে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। আই-এমের বিরুদ্ধে পূর্ণ পুলিশ অভিযান চলবে। কেন্দ্রকেও অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অবশ্য এনএসসিএন আই-এমের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভি হরাম দাবি করেছেন, মণিপুরে পুলিশ কনভয়ে জঙ্গি হামলা বা এ দিন রিজার্ভ ব্যাটিয়নের উপরে হামলায় তাদের হাত নেই। এ সবই মণিপুরের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক যড়যন্ত্র করে এ সব ঘটাচ্ছেন। দোষ চাপানো হচ্ছে আই-এমের উপরে। সামনের ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যে নির্বাচন। জনসমর্থন তলানিতে চলে যাওয়ায় এই ভাবে ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে চাইছেন ওক্রাম ইবোবি।
অবশ্য কংগ্রেস বা মণিপুর পুলিশ দাবি উড়িয়ে বলেছে, সাধারণ নাগা আন্দোলনকারীদের হাতে আইইডি, আরপিজি, মেশিনগান ও এত অস্ত্র থাকা সম্ভব নয়। নাগা এলাকায় ৪৬ দিন ধরে চলা অর্থনৈতিক অবরোধের পিছনে আই-এম ও বিজেপির হাত রয়েছে বলেও রাজ্য সরকারের অভিযোগ। এর মধ্যেই গত কাল রাতে পশ্চিম ইম্ফলের নাগা এলাকা ফেয়ারিল্যান্ড ও নাগারাম এলাকায় বিস্ফোরণ হয়। তাতে কেউ হতাহত হয়নি। বিস্ফোরণের দায় নিয়েছে মণিপুর নাগা রেভেলিউশনারি ফ্রন্ট বা এমএনআরএফ। তারা জানায়, আইএম বাহিনীর প্রধান থুইংলেং মুইভার ভাই সাংগ্রেইখান মণিপুরে ঠিকাদারি করেন। তাঁর এবং তাঁর সহকারী মিনগাও ও লেসিসানের বাড়ি লক্ষ্য করেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
এ দিন উত্তেজিত জনতা নাগা জঙ্গিদের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মণিপুরের সবচেয়ে বড় গির্জা মণিপুর ব্যাপটিস্ট কনভেনশন চার্চে আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। জঙ্গি হানার প্রতিবাদে মণিপুরের মহিলা সংগঠনগুলি গত রাত থেকে বনধ ডেকেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy