Advertisement
E-Paper

ক্ষোভ শিলচর-করিমগঞ্জ লোকালের সময় নিয়ে

সময়সূচি নিয়ে যাত্রী অসন্তোষের মধ্যেই আজ সকালে চালু হল শিলচর-করিমগঞ্জ লোকাল প্যাসেঞ্জার ট্রেন। প্রথম দিনে ১৭৯ জন শিলচর থেকে এই ট্রেনে ওঠেন।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৯:১৭
করিমগঞ্জে পৌঁছল লোকাল ট্রেন। সোমবার উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।

করিমগঞ্জে পৌঁছল লোকাল ট্রেন। সোমবার উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।

সময়সূচি নিয়ে যাত্রী অসন্তোষের মধ্যেই আজ সকালে চালু হল শিলচর-করিমগঞ্জ লোকাল প্যাসেঞ্জার ট্রেন। প্রথম দিনে ১৭৯ জন শিলচর থেকে এই ট্রেনে ওঠেন। রেলকর্তাদের দাবি, সংখ্যাটি প্রথম দিনের জন্য মন্দ নয়। চারটি সাধারণ কামরা ও একটি এসএলআর। ৪০০-র মতো আসন। প্রায় অর্ধেকই শিলচর থেকেই ভরে গিয়েছে।

শিলচরের স্টেশন সুপার বিপ্লব দাস বলেন, শিলচর-আগরতলা ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী ভিড়ের জন্যই লোকান ট্রেন দেওয়া হয়েছে। আজ থেকেই এর সুফল মিলেছে। হিসেব দেখিয়ে তিনি বলেন, আগরতলাগামী ট্রেনে ১২টি সাধারণ কামরা, একটি চেয়ারকার এবং দু’টি এসএলআর। সব মিলিয়ে আসন ১ হাজার ২৬৬টি। কাল শিলচর থেকেই ২ হাজার ২০২জন সকাল ৯টার এই ট্রেনে চড়েন। আজ এর ৪৫ মিনিট আগে করিমগঞ্জগামী লোকাল ট্রেন চলায় আগরতলার ট্রেন ধরেন ১ হাজার ৮৭১জন। এতে বদরপুর, করিমগঞ্জ রুটে যাঁরা টিকিট কাটবেন, তাঁদের ট্রেনে উঠতে সমস্যা হবে না। সেই সঙ্গে বিপ্লববাবু আশাবাদী, করিমগঞ্জ লোকালে যাত্রীসংখ্যা বাড়বে।

তবে সময়সূচি নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, শিলচর বড় শহর বলে এখানে সকালে আসার প্রয়োজন পড়ে। বিকেলে তাঁরা কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু লোকাল প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি হয়েছে উল্টো। সকাল সওয়া ৮টায় শিলচর থেকে ছাড়ছে, করিমগঞ্জ থেকে বেলা ১১টায়। এক দিকে, সকালে যাঁরা করিমগঞ্জে যেতে চান, আগরতলাগামী ট্রেনে তাঁরা যেতে পারেন। তার ৪৫ মিনিট আগে একই রুটে আরেকটি ট্রেন চালানো অর্থহীন। দ্বিতীয়ত, ১১টার ট্রেন শিলচর পৌঁছয় বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে। সে সময় কোনও কাজ করার বিশেষ সুযোগ থাকে না। তার চেয়েও বড় সমস্যা হল, সকাল ৯টার পর করিমগঞ্জগামী কোনও ট্রেন নেই। ফলে বিকেলে বা সন্ধ্যায় ট্রেনে চেপে ফিরে যাওয়ার সমস্যা রয়েই গেল।

বদরপুরের এরিয়া ম্যানেজার নবকিশোর সিংহের বক্তব্য, জিরিবামের যাত্রীদেরও একই দাবি। সকালে তাঁরা শিলচর আসতে চান। বিকেলে ফিরে যাবেন। কিন্তু এই সময়ে দুই রুটে চালানোর জন্য ৫ কামরার একটিই ট্রেন রয়েছে। তাই সেটিকেই ভোর সাড়ে ৫টায় জিরিবাম থেকে রওয়ানা করা হচ্ছে। শিলচর-করিমগঞ্জ-শিলচর চলার পর বিকেল ৪টায় জিরিবামের উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর দাবি, আরও একটি ট্রেন একই সময়ে করিমগঞ্জ থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হোক। ওই ট্রেনটি সকাল ১০টায় শিলচর পৌঁছাবে। বিকেলে করিমগঞ্জ ফিরে যাবে।

শিলচরের স্টেশন সুপার বিপ্লবাবু জানান, আজই তিনি এ নিয়ে চিফ অপারেটিং ম্যানেজার অম্লানকুমার বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে লোকাল ট্রেনটিতে যাত্রীভিড় দেখা গেলে এখনই কামরা বাড়াতে তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে অম্লানবাবু ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সময়সূচি যাই হোক না কেন লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় খুশি করিমগঞ্জ ও সংলগ্ন এলাকার মানুষ। কারণ বরাক উপত্যকার তিন জেলার মধ্যে করিমগঞ্জ জেলার জাতীয় সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। বেহাল জাতীয় সড়কের অজুহাত দেখিয়ে বাস যাত্রীদের কাছ থেকে অত্যধিক ভাড়া সংগ্রহের অভিযোগ উঠত প্রতিনিয়ত। যাত্রীরাও এনিয়ে অনেকবার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এসবে কান দেয়নি কেউ। কারণ জাতীয় সড়কই ছিল বরাক উপত্যকায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ফলে অত্যধিক ভাড়া দিয়েও সবাইকে যেতে হত।

কিন্তু আজ থেকে শিলচর-করিমগঞ্জ রুটে প্যসেঞ্জার ট্রেন চালু হওয়ায় নিত্য যাত্রীরা অনেকটাই স্বস্তিতে। করিমগঞ্জ আপ ট্রেনের যাত্রী মধুমিতা দাস ভট্টাচার্য বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে বাসে যাতায়াত করতেন। ভেঙ্গে পড়া জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াত করার দরুন তাঁর আয়ু অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি। তবে আজ থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু হওয়ায় দুঃসময় অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন বলে তাঁর মত। প্রায় একই বক্তব্য প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাত্রী আকিব আলির। তিনি দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন। প্রায়শই শিলচর ক্যান্সার হাসপাতালে যেতে হয় তাঁকে। বাসে করে যাওয়া অতি কষ্টকর। আজ করিমগঞ্জ-শিলচর লাইনে ট্রেন চালু হওয়ায় শুয়ে শুয়েই যাচ্ছেন শিলচরে। যা প্রাপ্তি হিসাবে মনে করেন তিনি।

তবে নতুন সময়সূচিতে ক্ষোভ রয়েছে রেলকর্মীদেরও। জিরিবামে গিয়ে রাত কাটাতে চাইছেন না লোকো-পাইলট, গার্ডরা। কারণ জিরিবাম স্টেশনে রাতে থাকার ভাল বন্দোবস্ত নেই। সেখানকার স্টেশন সুপার নিজে প্রতিদিন শিলচর থেকে ট্রেনে যান, আবার ওই ট্রেনেই ফিরে আসেন। থাকা-খাওয়ার সমস্যা বলে সেখানে থাকতে চান না তিনি। রাতে ট্রেন থাকলে এখন তাঁকেও জিরিবামে থাকতে হবে। সঙ্গে অন্যদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্যা খতিয়ে দেখতে এরিয়া ম্যানেজার নবকিশোরবাবু অবশ্য আজ জিরিবাম গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ এক সমস্যা বটে, তবে সমাধান তো বের করতে হবেই।’’ তিনি আশাবাদী, রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সময়সূচি মেনেই নির্বিঘ্নে ট্রেন চলবে।

তবে করিমগঞ্জ বা জিরিবাম রুটের সমস্যার চেয়ে মানুষ অবশ্য বেশি চিন্তায় পাহাড় লাইন নিয়ে। ওই অংশে রেল চলাচল স্বাভাবিক না হলে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নই থাকতে হবে বরাক উপত্যকা, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুরকে। এ নিয়ে কোনও জবাব দিতে পারলেন না স্থানীয় রেলকর্তারা।

শুধু পুরনো কথাই শোনালেন, ট্র্যাক ফুলেফেঁপে ওঠার কারণ বের করা যাচ্ছে না। দিনরাত কাজ চলছে বরাইল পাহাড়ে।

Silchar-Karimganj local train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy