Advertisement
E-Paper

সংস্কৃতে শপথ, চমক দিলেন আঙুরলতা

সর্বানন্দ সরকারের প্রথম বিধানসভা অধিবেশন শুরুর দিন ‘শো-স্টপার’ আঙুরলতাই। সংস্কৃতে শপথ নিয়ে সবাইকে চম্‌কে দিলেন অসমের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তথা বটদ্রবার নবনির্বাচিত বিধায়ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০৩:৩১
অসম বিধানসভার অধিবেশনে বিজেপি বিধায়ক আঙুরলতা ডেকা। বুধবার গুয়াহাটিতে। ছবি: পিটিআই।

অসম বিধানসভার অধিবেশনে বিজেপি বিধায়ক আঙুরলতা ডেকা। বুধবার গুয়াহাটিতে। ছবি: পিটিআই।

সর্বানন্দ সরকারের প্রথম বিধানসভা অধিবেশন শুরুর দিন ‘শো-স্টপার’ আঙুরলতাই।

সংস্কৃতে শপথ নিয়ে সবাইকে চম্‌কে দিলেন অসমের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তথা বটদ্রবার নবনির্বাচিত বিধায়ক।

এ দিকে, অসম দখলের পর প্রথম বিধানসভা অধিবেশনে সকলে হাত মিলিয়ে বরাক-ব্রহ্মপুত্রের উন্নয়নের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। বরপেটা জেলার সরভোগের বিধায়ক তথা প্রাক্তন শিক্ষক-সাংবাদিক-কেন্দ্রীয় তথ্য পরিষেবা অফিসার রঞ্জিৎকুমার দাস চতুর্দশ অসম বিধানসভার স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হলেন। বরাক থেকে প্রথম বারের জন্য ডেপুটি স্পিকার হলেন শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পাল। শপথ নেন ১২৬ জন বিধায়ক।

আজকের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ভাষা ও পোশাক— দু’দিক থেকেই ছিল বৈচিত্র্যময়। শপথ নিতে সাতটি ভাষা ব্যবহৃত হল। পরিমল শুক্লবৈদ্য, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, দিলীপ পাল, আমিনুল ইসলাম লস্কর, আজিজ আহমেদ খান, কিশোর নাথ, মিহিরকান্তি সোম, রমেশচন্দ্র জৈন-সহ ১৩ জন বিধায়ক বাংলায় শপথ নেন। বিপিএফের এক জন বাদে বাকি ১১ জন বড়ো ভাষায় শপথ নেন। ইংরেজিতে শপথ নেন কার্বি আংলংয়ের বিধায়করা এবং আবদুর রহিম আজমল। রাতাবাড়ির বিধায়ক কৃপানাথ মালা, লখিপুরের রাজদীপ গোয়ালা হিন্দিতে শপথ নিয়েছেন। বরসলার বিজেপি বিধায়ক গণেশকুমার লিম্বু নেপালি ভাষায় শপথ নেন।

শপথগ্রহণ পর্বে গ্ল্যামার ও চমকে শো-স্টপার কিন্তু হলেন আঙুরলতা ডেকাই। অসমীয়া ভাষায় শপথগ্রহণ পর্ব চলছিল চিরাচরিত রীতিতে। তার মধ্যেই খোঁপায় তিনটি লাল গোলাপ আর সোনালি জরির সাদা অসম সিল্ক শাড়িতে আঙুরলতা শপথ নিতে উঠলেন। অন্যদের মতো ভাবলেশহীন মুখ নয়, হাসিমুখে হাতজোড় করে রীতিমতো পুরস্কার নিতে যাওয়ার ভঙ্গিতে প্রণামও সারলেন।

কিন্তু শপথ নিলেন কই! হাসিমুখে মুখ্যমন্ত্রী ও বিধানসভার প্রধান সচিব মৃগেন্দ্রকুমার ডেকার সঙ্গে ছোট্ট আলোচনা সেরে ফের নিজের আসনে ফিরে গেলেন আঙুর। নীরব বিধানসভায় তখন ছড়াল জল্পনা। ফাইল হাতড়ে একটি কাগজ হাতে শপথস্থলে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। অস্থায়ী স্পিকার ফণীভূষণ চৌধুরী অসমীয়ায় ‘মোয়’ (আমি) বলে শপথ শুরু করান। কিন্তু ‘অহম’ বলে সংস্কৃতে শপথ নেওয়া শুরু করে তুখোড় উচ্চারণে শপথ শেষ করেন আঙুর। বিধানসভার প্রধান সচিব জানান, এই প্রথম অসম বিধানসভায় সংস্কৃতে শপথ নেওয়া হল।

পরে আঙুরলতা বলেন, ‘‘স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অসমীয়া পড়েছিলাম। আমি আদতে নলবাড়ির মেয়ে। নলবাড়ি সংস্কৃত চর্চার কেন্দ্র। সংস্কৃত আমাদের আদি ভাষাও। নতুন প্রজন্ম এই ভাষার চর্চা ছেড়েছে। তাই ভাবলাম এই ভাষাতেই শপথ নেব।’’

শপথ নিতে গিয়ে ফিরে আসা কেন? আঙুর জানালেন, তিনি আগে থেকে বিধানসভার সচিবকে সংস্কৃতে শপথ নেওয়ার কথা জানাননি। তাই তাঁদের কাছে সংস্কৃত শপথবাক্য তৈরি ছিল না। তিনি জানান, সঙ্গে করে শপথবাক্য এনেছেন। তা দেখে পড়ার অনুমতি মিলতেই সেটি নিয়ে আসেন।

অবশ্য তাঁর পরে নলবাড়ির অশোক শর্মা এবং টিংখংয়ের বিমল বরাও সংস্কৃত ভাষায় শপথ নেন। আঙুর জানান, অন্য দু’জনের সঙ্গে আগে এ ব্যাপারে তাঁর কোনও কথাবার্তা হয়নি। শপথ গ্রহণের মহড়াও দেননি আগে।

প্রথম বার বিধানসভায় এলেও কোনও জড়তা ছিল না আঙুরলতার আচরণে। আক্ষরিক অর্থেই দর্শক গ্যালারির চোখও ছিল তাঁর দিকে। বটদ্রবার বিধায়ক বলেন, ‘‘আজ পবিত্র দিন তাই বিয়ের শাড়িটাই বেছে নিয়েছিলাম। কানের দুল ছাড়া বিয়ের গয়নাগুলোও পরেছি। গত বছর বিয়ে হয়েছে। তার পর এই প্রথম শাড়িটা পরলাম। প্রথম দিন ভালই কাটল। আরও দু’দিন আশা করি ভালই কাটবে। বিধানসভার অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে নিজের কেন্দ্রের উন্নয়নে মন দেব।’’ হাজোর বিধায়ক সুমন হরিপ্রিয়ার শপথগ্রহণ খোশমেজাজে দেখেন সাংসদ মা বিজয়া চক্রবর্তী।

আরও এক জন বিধানসভার বাইরে নজর কাড়েন। দুলিয়াজানের বিজেপি নেতা টেরেস গোয়ালা সাইকেলে বিধানসভায় আসেন। ফেরার সময় তাঁর পিছনে সওয়ার হন ডিব্রুগড়ের বিধায়ক প্রশান্ত ফুকন। বিধানসভায় গারো, বড়ো, কার্বি বিধায়কদের অনেকেই নিজেদের উপজাতীয় পোষাক পরে, গলায় দেশীয় উত্তরীয় ঝুলিয়ে এসেছিলেন। ছিল গোর্খা টুপিও। মঙ্গলদৈয়ের গুরুজ্যোতি দাস পরেন ধুতি-পাঞ্জাবি।

শপথগ্রহণের পরে সর্বসম্মতভাবে স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন সরভোগের দু’বারের বিজেপি বিধায়ক রঞ্জিৎকুমার দাস। একমাত্র তাঁর নামই স্পিকার পদে প্রস্তাব করা হয়েছিল। রঞ্জিৎবাবু দু’টি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তিনটি সংবাদপত্রে সাংবাদিকতাও করেন। পরে তিনি জাতীয় তথ্য পরিষেবার (আইআইএস) অফিসার হিসেবে দিল্লি, ধুবুরি, বরপেটায় কর্মরত ছিলেন। জড়িত ছিলেন অসম সাহিত্যসভা, রবীন্দ্র স্মৃতি মঞ্চ, অসম নাট্য সম্মেলন-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। ২০১১ সালে প্রথমবার বিধায়ক হন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, ‘‘আশা করি দক্ষ রাজনীতিবিদ রঞ্জিৎবাবু সব দলকে সমান সুযোগ দিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে বিধানসভা পরিচালনা করবেন।’’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও রঞ্জিৎবাবুকে স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন। পরে বিজেপির দলীয় বৈঠকে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পালের নাম চূড়ান্ত করা হয়। রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘সাধারণত বিরোধী দল স্পিকারকে নিরপেক্ষ হওয়ার আবেদন জানায়। কিন্তু এই প্রথম সরকার পক্ষ সেই আবেদন আগেই জানাল। স্পিকার পদে নির্বাচনও সর্বসম্মতিতে হয়েছে। আশা করি এই সৌহার্দ্যের পরিবেশ ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।’’

আরও পড়ুন:
দেশের হটেস্ট বিধায়ক কি আঙুরলতা ডেকা!

Sanskrit Angurlata deka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy