নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদের যৌথ সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তে বরাক উপত্যকায় একাংশ মানুষের উৎকণ্ঠা বেড়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা। আবার অনেকের ধারণা, ভালই হয়েছে। সিলেক্ট কমিটি হয়ে গেলে রাজ্যসভায় আর তা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
অসম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল একে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব না দিয়ে ওঁরা শরণার্থীদের নিয়ে রাজনীতি করতেই বেশি আগ্রহী। বিল পেশ হতেই তাঁদের রাজনীতি শেষ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। কিন্তু ভোটের স্বার্থে সরাসরি বিরোধিতাও করতে পারছে না। তাই টালবাহানা করে বিলটিকে ঠাণ্ডাঘরে ঠেলতে চাইছে।’’ দিলীপবাবুর আশঙ্কা, যৌথ সিলেক্ট কমিটির অনুমোদন মিললেও কংগ্রেস রাজ্যসভায় ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করবে। তবে তিনি আশাবাদী, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার ওই বিল পাস করিয়েই ছাড়বে। হিন্দু বাঙালির দুঃখ-দুর্দশা মোচনে যা করণীয় সবই করবেন তাঁরা।
সিপিএম নেতা সু্প্রিয় ভট্টাচার্যের ধারণা, যৌথ সিলেক্ট কমিটিতে বিল যাওয়ায় ভালই হয়েছে। বিরোধীরা এখন তা খুটিয়ে দেখবে। ফলে পাকাপোক্ত একটা ব্যাপার দাঁড়াবে। সিলেক্ট কমিটি দীর্ঘসময়ের ব্যাপার নয় বলেই মনে করছেন সুপ্রিয়বাবু।
অন্য দিকে এতে প্রক্রিয়া দীর্ঘতর হল বলেই মনে করছেন কাছাড় জেলা বিজেপির সভাপতি কৌশিক রাই। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের চাপেই বিলটি যৌথ সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে হল।’’ তবে এক দিকে তা ভাল হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘এখন কার কী চরিত্র স্পষ্ট হবে। কংগ্রেস সাংসদ প্রকাশ্য সভায় বলেছিলেন, বিল পেশ হলে তাঁর দল পাশে থাকবে। এখন দেখা যাক, তাঁর কী অবস্থান, তাঁর দলেরই-বা কী অবস্থান।’’ তবে বিলটি শেষপর্যন্ত আইনে পরিণত হবে বলে তিনি নিশ্চিত।
হিন্দু লিগ্যাল সেলের রাজ্য আহ্বায়ক ধর্মানন্দ দেবেরও বক্তব্য, সিলেক্ট কমিটিতে যাওয়ায় ভালই হয়েছে। সংযোজন, সংশোধনের সুযোগ মিলল। এর দরুন লোকসভায় আলোচনার আগেই সেটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিলের চেহারা নেবে। তবে রাজ্যসভায় কী হবে, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না তাঁর।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ দেব বলেন, ‘‘ওপারে নির্যাতিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ভারতে বসবাস করছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়াই উচিত। আজ এ কথা কাল ও কথা যেন না হয়।’’ তাঁর বক্তব্য, ওই বাসিন্দাদের বিষয়ে পাকাপাকি নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। ভিসা নয়, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা দেখে সবাইকে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য তাঁরা সাংসদ সুস্মিতা দেবকে পরামর্শ দেবেন বলে জানান রাজেশবাবু। সুস্মিতা দেব সিলেক্ট কমিটির সদস্য হওয়ায় সকলের জন্য ভালই হয়েছে বলে মন্তব্য তাঁর।
নাগরিক স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক মলয় ভট্টাচার্য অবশ্য বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘ভালমন্দ খুটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মুশকিলের কথা হল, সেই পর্ব দ্রুত হওয়া উচিত ছিল। এই অধিবেশনেই কমিটি তা ফেরত পাঠাতে পারত তবে আমাদের স্বস্তি মিলত। বিলম্বিত লয়ে চললে আশঙ্কা বাড়বে।’’
তবে একে ভাল ভাবে নিতে পারছেন না আইনজীবী ইমাদউদ্দিন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘‘সব দলের উচিত ছিল আন্তরিক ভাবে বিষয়টি অনুধাবনের। কিন্ত একটা দায়সারা গোছের ব্যাপার দেখা যাচ্ছে। আইন প্রণয়নের সময় দেখা উচিত, লক্ষ লক্ষ লোক ডি ভোটার হয়ে ডিটেকশন ক্যাম্পে দিন কাটাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy