Advertisement
০৫ মে ২০২৪

হিমগিরির তালা ভেঙে চুরি ফৌজি ডিটোনেটর

রেল সূত্রের খবর, বুধবার রাতে হাওড়ামুখী হিমগিরি এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটে বিহারের পটনা ও ঝাঝা স্টেশনের মাঝখানে।

হাওড়ামুখী হিমগিরি এক্সপ্রেসে ফিউজ ডিটোনেটর উধাও হওয়ার ঘটনাটি ঘটে।

হাওড়ামুখী হিমগিরি এক্সপ্রেসে ফিউজ ডিটোনেটর উধাও হওয়ার ঘটনাটি ঘটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩০
Share: Save:

বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরণ ঘটাতে মূল হাতিয়ার ফিউজ ডিটোনেটর। সেনাবাহিনীর এমনই আট কিলোগ্রাম ফিউজ ডিটোনেটর ট্রেনের কামরার তালা ভেঙে উধাও হয়ে গেল!

রেল সূত্রের খবর, বুধবার রাতে হাওড়ামুখী হিমগিরি এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটে বিহারের পটনা ও ঝাঝা স্টেশনের মাঝখানে। বৃহস্পতিবার ট্রেনটি হাওড়ায় পৌঁছলে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই বিস্ফোরকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই সেনা জওয়ান।

ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব-মধ্য রেলের এলাকায়। তাদের মুখপাত্র রাজেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই বিস্ফোরকের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সশস্ত্র সেনা জওয়ানেরা। কামরায় তালা দিয়েছিলেন তাঁরাই। তা সত্ত্বেও তালা ভেঙে কী ভাবে এত ডিটোনেটর চুরি গেল, তার তদন্তে নেমেছে সেনাবাহিনী এবং বিহার পুলিশ।’’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বালেশ্বরের কাছে চাঁদবালিতে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। সম্ভবত সেখানেই যাচ্ছিল ওই উচ্চক্ষমতার ডিটোনেটর। তা দিয়ে জঙ্গিদের পক্ষে আইইডি বিস্ফোরক তৈরি করাও সম্ভব। গোয়েন্দাদের একাংশ জানান, যেখানে বিস্ফোরক চুরি গিয়েছে, সেটা মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত। ওই বিস্ফোরক মাওবাদীদের হাতে গেলে তা দিয়ে বড় ধরনের নাশকতার চেষ্টা হতে পারে। এই ধরনের বিস্ফোরকের তথ্য এতই গোপনীয় যে, সেনা-কর্তৃপক্ষ চুরি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। ‘‘এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে কিছু বলা যাবে না। তদন্ত শুরু হয়েছে,’’ বলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র উইং কম্যান্ডার সিমরনপাল সিংহ বিরদি।

রেল সূত্রের খবর, ২ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর পঠানকোট ডিভিশন থেকে ওই ডিটোনেটর হাওড়ায় পাঠানো হচ্ছিল। হাও়ড়া থেকে তা যেত বালেশ্বরে। নিরাপত্তার কারণে আট কিলোগ্রাম ওজনের ডিটোনেটর ভর্তি বাক্সটির জন্য একটি আলাদা ‘ফ্রন্ট স্লিপার লাগেজ রিয়ার’ (এসএলআর) কামরা ভাড়া করা হয়েছিল। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন খাঁদু রাম ও বীরেন্দ্র নামে ওই দুই জওয়ান। অভিযোগের বয়ান অনুযায়ী তাঁরা এসএলআর সংলগ্ন এস১০ কামরায় ছিলেন। পটনা স্টেশনেও এসএলআর কামরার তালা ঠিক ছিল। আরপিএফ ঝাঝা স্টেশনে তল্লাশিতে গিয়ে দেখে কামরার তালা ভাঙা। ডিটোনেটরের বাক্স উধাও। যদিও রেলের মুখপাত্রের দাবি, চুরির ঘটনাটি ঘটেছে পটনা ও বখতিয়ারপুর স্টেশনের মাঝখানে।

রেল জানাচ্ছে, বুধবার ট্রেনটি পটনায় ঢুকেছিল বিকেল ৫টা নাগাদ। বখতিয়ারপুর ঢোকে সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিটে এবং রাত ১০টা ৪০ মিনিটে পৌঁছয় ঝাঝায়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাওড়ায় পৌঁছয়। জিআরপি-র আইসি নরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘‘চুরিটা পটনা ও ঝাঝার মধ্যে হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে বিহারের জামালপুর রেল পুলিশ সুপারের কাছে।’’

গোয়েন্দাদের একাংশের সন্দেহ, ওই ট্রেনে যে ডিটোনেটর আসছে, সেই ব্যাপারে দুষ্কৃতীদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য পৌঁছে গিয়েছিল। সেনা বা রেলের ভিতর থেকেই তা হয়ে থাকতে পারে। সন্ধ্যার অন্ধকারে পটনার পরে কোথাও ট্রেন দাঁড়ালে সেই সুযোগে তালা ভেঙে ডিটোনেটর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উঠছে হাজারো প্রশ্ন। তার মধ্যে আছে: তালা ভেঙে ডিটোনেটর চুরি করা হয়ে থাকলে সেনা বা রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা টের পেলেন না কেন? কেনই বা ট্রেন থামার উপরে ওই কামরার উপরে নজর দেওয়া হল না? কেন ঝাঝা স্টেশনেই অভিযোগ দায়ের করা হয়নি?

সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কোনও জবাব মেলেনি। রেলের দাবি, ওই কামরার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতেই রেখেছিলেন ফৌজিরা। স্টেশনে ট্রেন থামলে রেলরক্ষী বাহিনী নিয়মমাফিক কামরা পরিদর্শন করছিল। তাতেই বিষয়টি ধরা পড়ে। ফৌজিরা হাওড়ায় পৌঁছনোর পরেই অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন। তাই সেটাই করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE