বেঙ্গালুরুতে করাচি বেকারিতে এ ভাবেই ঢেকে ফেলা হল করাচি শব্দটি। ছবি নন্দিনীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীত।
দেশভাগের পরে পাকিস্তান চলে গিয়েও মন টিকত না সাদাত হাসান মান্টোর। লাহৌরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বলতেন, ‘‘আমি এখানে চলেফিরে বেড়ানো বোম্বাই।’’
তেমন অজস্র অনুষঙ্গ এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সীমান্তের দু-পারে। এ পারে যেমন রয়েছে করাচি বেকারি বা করাচি হালওয়াই, তেমনই পাকিস্তানে রয়েছে বম্বে বেকারি, ম্যাড্রাস জুয়েলার্স।
কেক-পেস্ট্রির ঐতিহ্যবাহী দোকান ‘করাচি বেকারি’র নামে পাকিস্তানের ছোঁয়া আছে বলে দোকানের বেঙ্গালুরুর ইন্দিরানগরের শাখায় শুক্রবার সন্ধেয় হামলা চালায় একদল স্বঘোষিত ‘দেশরক্ষক’। দোকানের সাইনবোর্ডে করাচি শব্দটি ঢেকে দিতেও বাধ্য হন কর্মচারীরা। দোকানের ফেসবুক পেজে বিবৃতি দিয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, দেশভাগের সময় পাকিস্তান থেকে আসা খানচন্দ রামনানি হায়দরাবাদে এই দোকানের প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৫৩ সালে। এই সংস্থা যে পুরোপুরি ভারতীয় তা জানিয়ে দিয়ে কোনও রকম ভুল ধারণা থেকে দূরে থাকতে আবেদন করেন তাঁরা।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে ন’জনকে। হায়দরাবাদ থেকে বেকারির এক কর্তা গিরীশ ভারিন্ধানি বলেন, ‘‘সারা দেশে দোকানের ৪০-এর বেশি শাখার মধ্যে মাত্র একটিতে কিছুক্ষণের জন্য ঝামেলা হয়। এখন সব স্বাভাবিক। সব রকম মানুষ আছেন। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সংখ্যাই বেশি।’’
এ দেশে পঞ্চাশ বছরের বেশি ব্যবসা করার পরে ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করার বিবৃতি দিতে হওয়াটাই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদ সুরঞ্জন দাস। তাঁর কথায়, ‘‘কাশ্মীরে যে হামলা হয়েছে তার নিন্দার ভাষা নেই। তার পিছনে থাকা সন্ত্রাসবাদী এবং পার্শ্ববর্তী যে দেশ তাতে মদত দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু এখন দেশপ্রেমের নামে যা শুরু হয়েছে তাতে হিতে বিপরীত হবে। গাঁধীজি বারবার বলেছেন দেশকে ভালবাসতে হলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়ার প্রয়োজন নেই।’’
একই সুরে টুইটারে সরব হয়েছেন অনেকেই। পাকিস্তানে যে ভারতীয় নামের বহু দোকান আছে তা টুইটারে জানিয়েছেন, ছবিও দিয়েছেন। বম্বে বেকারি, দিল্লি নিহারি, বম্বে চৌপট্টি, অম্বালা সুইটস, ক্যালকাটা জুয়েলার্স, গোয়ান জুয়েলার্সের মতো নানা দোকানের কথা লিখেছেন তাঁরা। করাচির মেরঠ কাবাব হাউসে কাবাব তৈরির ভিডিয়োও পোস্ট করেছেন একজন। একজন লিখেছেন, দিল্লিতে যেমন লাহৌরি গেট রয়েছে, তেমনই লাহৌরেও দিল্লি গেট রয়েছে। কেবল দোকান নয়, দিল্লি কলোনি, বেনারস কলোনিও রয়েছে পাকিস্তানে। এ সবই কি মুছে ফেলতে চান দেশভক্তরা, প্রশ্ন তুলছে নাগরিক সমাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy