Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বাংলার আয়েশাকে ফেলে রেখেছিল দিল্লির হাসপাতাল

গণধর্ষণের শিকার এ রাজ্যের কিশোরী আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) ঘটনায় এ বার দিল্লি পুলিশ ও গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, তিন দিন ধরে তাকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:৩৩
Share: Save:

গণধর্ষণের শিকার এ রাজ্যের কিশোরী আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) ঘটনায় এ বার দিল্লি পুলিশ ও গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠল।

আয়েশার পরিবারের অভিযোগ, তিন দিন ধরে তাকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছিল। এমনকী, কিশোরী গণধর্ষণের শিকার জেনেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেননি। পরে মেয়েটির শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে দেখে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা কিশোরীর কাছে তার পরিবারের কথা জানতে চান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনও মতে ওই কিশোরী নিজের দিদির মোবাইল নম্বর দেন। এর পর খবর আসে তার পরিবারের কাছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই কিশোরীর পরিবার সূত্রের খবর, গত সোমবার রাত ১০ টা নাগাদ একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে নিগৃহীতার দিদির মোবাইলে। জানতে চাওয়া হয়, আয়েশা তাঁদের কে। ওই ফোনের সূত্রেই আয়েশার দিদি বছরখানেক ধরে নিখোঁজ বোনের খবর জানতে পারেন। শনিবার ওই কিশোরীর দিদি জানান, তিনি শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। সেই রাতে ফোনে খবর পাওয়ার পরেই ভাইকে বিষয়টি জানান। ওই রাতেই ভাইকে নিয়ে ডায়মন্ডহারবার থানায় ছোটেন তিনি। সেই রাতেই খবর পাঠানো হয় দিল্লির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। ততক্ষণে হাসপাতালের শয্যায় কিশোরীর তিন দিন কেটে গিয়েছে।

দিল্লি পুলিশ এবং হাসপাতালের গাফিলতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘পাচার ও গণধর্ষণের শিকার জেনেও কিশোরীকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডের একটি শয্যায় পুলিশ পাহারা ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছিল। পাচারকারীরা যে কোনও সময়ে গিয়ে মেয়েটির আরও বড় ক্ষতি করতে পারত।’’ স্বাতীদেবী জানান, আসলাম ওরফে জব্বার মেয়েটিকে ফেলে যাওয়ায় তিন দিন পরে মঙ্গলবার ফের হাসপাতালে ঢুকে ঘোরাঘুরি করছিল বলে পরে জানা গিয়েছে। সন্দেহজনক ভাবে ঘুরতে দেখে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন তাকে ধরে ফেলেন। আসলামের কথায় অসংলগ্নতা দেখে তখন তাঁরাই দিল্লি পুলিশকে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ এসে আসলামকে অভিযুক্ত জেনেও গ্রেফতার করেনি। শুধু আটক করে রাখে। এমনকী গণধর্ষণের শিকার জেনেও হাসপাতালে ভর্তি আয়েশার কোনও বয়ান নেয়নি।

এই অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা গাজিয়াবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কারণ, গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের আগে ওই কিশোরী২৪ পরগনার বাড়িতে ফোন করেন। সেই সূত্র ধরে ডায়মন্ডহারবার থানার পুলিশ গাজিয়াবাদ পুলিশের সাহায্যে কিশোরীর খোঁজও করেছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে গাজিয়াবাদ পুলিশ আসলামকে গ্রেফতার করে। আয়েশার কেবিনের বাইরে বসানো হয় পুলিশি পাহারা।

এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, মেয়েটি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা জেনেও এ রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়নি। সেই কাজও করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। ওই সংস্থার তরফ থেকেই শনিবার সকালে এ রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের সচিব রোশনী সেনকে বিষয়টি জানানো হয়। এ দিনই দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনারের আধিকারিক ও কর্মীরা ওই কিশোরীকে দেখতে হাসপাতালে যান। পরে তাঁরা ডেপুটি কমিশনার প্রসেনজিৎ দাসের কাছে রিপোর্ট জমা দেন। তাতে বলা হয়েছে, মেয়েটি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ayesha kept unattended delhi hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE