সে দিন এমনই লিখেছিলাম, গ্লানিতে নয়, লজ্জায় নয়, সাফল্যের আনন্দে ইস্তফা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ। আসলে সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ, বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশের মধ্যে দিশেহারা ভাব দেখা দিয়েছিল। সম্ভবত তারা বুঝে উঠতে পারছিল না কাজটা ঠিক হল, না ভুল হল। পরিণাম বা প্রতিক্রিয়াই বা কী হবে। কল্যাণ সিংহ তাদের ঝিমুনি কাটাতেই ইস্তফা দিয়েছিলেন।
হাতে গরম কোনও প্রমাণ দাখিল করতে না পারলেও ঘটনার পরম্পরা থেকেই স্পষ্ট বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়াটা ছিল পুরোপুরি পরিকল্পিত। তা সে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার দিনে পাশের একটি ঘরে বসে মোমবাতির আলোয় লালকৃষ্ণ আডবাণী যতই বিষণ্ণ ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন না কেন। দু’-দু’বার রামরথ যাত্রায় আডবাণী কী ভাবে ভয়ানক এক উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, তা তো নিজের চোখেই দেখেছি। দু’বারই রিপোর্টার হিসাবে সেই রথযাত্রার সঙ্গে ছিলাম। ঝামেলা এড়াতে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু পুরুলিয়াতে আডবাণীকে আটকাবার কোনও চেষ্টাই করেননি। বিহারের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ কিন্তু প্রথম থেকেই আঁচ করেছিলেন এই রথযাত্রার উদ্দেশ্য কী। তাই আডবাণী রথ ও দলবল নিয়ে ধানবাদে ঢোকার পরে লালুপ্রসাদ ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন। রাত তখন ১১টা বা সওয়া ১১টা হবে। বসেছিলাম জেলাশাসক আফজল আমানুল্লার দফতরে। সেখানে হাজির ছিলেন পুলিশ সুপার রণবীর সিংহ। সেই সময় লালুপ্রসাদের টেলিফোন এল। এ দিকের কথা শুনেও পুরো ব্যাপারটি বুঝতে অসুবিধা হয়নি।
লালুপ্রসাদ চাইছিলেন ধানবাদেই আডবাণীকে গ্রেফতার করা হোক। কিন্তু জেলাশাসক বললেন, এখানে আটকানোটা একটু মুশকিল। কারণ, তিনি একজন সংখ্যালঘু এবং ধানবাদ দুষ্কৃতীপ্রবণ। ফলে, হাঙ্গামা বাধানোটা সহজ হবে। বরং মণ্ডল এরিয়া, অর্থাৎ পিছড়ে বর্গের যেখানে আধিক্য সেখানেই রথ আটকানো শ্রেয়। সেই যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন লালুপ্রসাদ। পরে সমস্তিপুরে ভোরবেলায় কড়া নেড়ে ঘুম ভাঙিয়ে আডবাণীকে গ্রেফতার করেছিল বিহার পুলিশ। আডবাণীর অনুরোধে তাঁর সঙ্গী প্রমোদ মহাজনকেও ধরে পুলিশ। সে দিন সন্ধ্যায় পটনা সচিবালয়ে বসে লালুপ্রসাদ মিচকি হাসি হেসে বলেছিলেন, ‘‘বুঢ়ে আদমি সফর মে থক গয়ে হ্যায়, ইস লিয়ে আরাম করনে কে লিয়ে ভেজে হ্যায়।’’