নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে এক প্রতিবেশী পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার কালো টাকার বিরুদ্ধে মোদী সরকারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে সমস্যায় পড়েছে অন্য দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ও ভুটান।
এই দুই দেশেই ভারতের টাকা চলে। বেআইনি ভাবে নয়। আইনি পথেই। দু’টি দেশের সঙ্গেই ভারতের বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য হয়। দু’টি দেশে ভারতের লগ্নির অঙ্কও কম নয়। মোদী সরকার পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেওয়ায় এই দু’টি দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য ধাক্কা খেয়েছে। দু’দেশের বাজারে ছড়িয়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অচল ভারতীয় নোট। তা নিয়ে সমস্যা কাটাতে এ বার নেপাল ও ভুটানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক মোদী সরকার ও ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, মোদী সরকার পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরেই ভুটানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রয়্যাল মানিটারি অথরিটি-র কর্তারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেন। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্কের সঙ্গেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তাদের আলোচনা হয়। এর পর ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে নেপালেও যাবতীয় লেনদেন বন্ধ করে দেয় কাঠমান্ডু। ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মুদ্রা বদল প্রতিষ্ঠানগুলিকে ৫০০-১০০০ টাকার নোট না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নেপাল সরকারের চিন্তা হল, হঠাৎ করে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ফলে নেপালের সীমান্ত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বড়সড় ধাক্কা খাবে। ভারত-নেপাল সীমান্তের মানুষ ওই এলাকায় বাণিজ্যে উপরেই নির্ভরশীল। সেখানে ৫০০ ও ১০০০ টাকাতেই লেনদেন। আগে নেপালে ভারতের শুধুমাত্র ১০০ টাকা বা তার কম অঙ্কের নোট চলত। গত বছর থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র হোটেল বা পর্যটন ক্ষেত্র নয়, সর্বত্রই ভারতীয় টাকা চলে। ফলে গোটা নেপালের মানুষের মধ্যেই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ী, অন্য জায়গা থেকে আসা শ্রমিকরা সমস্যায় পড়েছেন। কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দিরের মতো ধর্মস্থানে ভারতীয় টাকাতেই প্রণামী জমা পড়ে। এই মন্দির কর্তৃপক্ষ এখন সেই অর্থ নিয়ে কী করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি সূত্রের খবর, নেপালে আনুমানিক কত মূল্যের অচল ভারতীয় নোট রয়েছে তা জানতে চায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নেপাল জানিয়েছে, তাদের বাজারে থাকা ৫০০ ও ১০০০ হাজার টাকার নোটের মূল্য অন্তত ৩৫০০ কোটি টাকা। এই নোট কী ভাবে ফেরত পাঠানো হবে তা নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা
শুরু হয়েছে।
নিজেদের অর্থনীতিতে নগদের জোগান বজায় রাখতে হিমসিম খাচ্ছে ভুটান। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতের লগ্নির জন্যও এখন ভারতীয় নোট সে দেশের বাজারে ছেয়ে রয়েছে। ভুটানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে, যাঁদের কাছে ভারতীয় অচল নোট রয়েছে তাঁরা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তা নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে পারেন। যাতে সব নোট সংগ্রহ করে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে তা তুলে দেওয়া যায়। কিন্তু ভারতীয় নোটের বদলে বাজারে জোগান দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণে ভুটানের নোট রয়েছে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ১০০ টাকা বা তার কম অঙ্কের নোট ভুটানে পাঠানোর জন্যও ভারতের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।